বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

চাঁচড় পোড়ানো, দেবদোল, দোলমঞ্চে আবির খেলায় অনন্য খড়দহের শ্যামসুন্দরের দোল

March 3, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সামনেই দোলযাত্রা, পূর্ণিমা তিথিতে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন আনন্দের রঙে মেতে ওঠেন। অনন্যভাবে দোল পালন করে খড়দহ। চৈতন্য মহাপ্রভুর অপ্রকটের পর তাঁর আদর্শ বাঁচিয়ে রেখেছিলেন চৈতন্য-পার্ষদ নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর অষ্টম পুত্র বীরভদ্র গোস্বামী। বীরভদ্র গোস্বামীই খড়দহের শ্যামসুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শ্যামসুন্দর মন্দিরের অন্যতম উৎসব হল দোলযাত্রা। মন্দিরের গর্ভগৃহে রুপোর সিংহাসনে বিরাজ করেন অষ্টধাতুর শ্রীমতী ও শিলাময় অনন্তদেব, সঙ্গে রয়েছেন শ্রীশ্যামসুন্দর। হাতে বাঁশি।

জানা যায়, অদ্বৈত আচার্যের জ্যেষ্ঠ পুত্র অচ্যুতানন্দ গোস্বামী ৯৭৭ বঙ্গাব্দের মাঘী পূর্ণিমায় কুঞ্জবাটীতে শ্যামসুন্দর প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর সহধর্মিণী জাহ্নবী দেবীর ইচ্ছেয় শ্যামসুন্দরের পাশে অষ্টধাতুর রাধিকামূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু কুঞ্জবাটীতে পুজোর স্থানাভাব দেখা দিলে, শ্যামসুন্দর মন্দির তৈরি করা হয়। শ্যামসুন্দর মন্দিরের বয়স চারশো বছরেরও বেশি।

প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে, একই কষ্টিপাথর দিয়ে তিনটি বিগ্রহ তৈরি হয়েছিল। একটি খড়দহের শ্যামসুন্দর, অন্য দুটি হল বল্লভপুরের রাধাবল্লভ ও সাঁইবোনার নন্দদুলাল। বল্লভ বিগ্র‌হে তিনি রাধারানির প্রেমাস্পদ। নন্দদুলাল বিগ্রহে ধরা দিয়েছে গোপালসুলভ বাৎসল্য। শ্যামসুন্দর বিগ্রহে পরমেশ্বর রূপ প্রকাশিত হয়েছে। শ্রীপাট খড়দহ শ্যামসুন্দর মন্দিরের জন্যই জনপ্রিয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এই মন্দির শ্যাম বাড়ি বলেই হিসেবে পরিচিত। সারদাদেবী একবার বলেছিলেন, ঠাকুর বলতেন, দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী, কালীঘাটের কালী আর খড়দহের শ্যামসুন্দর – এঁরা জীবন্ত হেঁটে চলে বেড়ান, কথা কন, ভক্তের কাছে খেতে চান।

খড়দহে রাধা-শ্যামসুন্দরের দোল উৎসব মহাধুমধাম করে পালিত হয়। দোলের আগের দিন চাঁচড় পোড়ানো হয়, অর্থাৎ ন্যাড়াপোড়া হয়। সেই অনুষ্ঠানে শ্যামসুন্দর এবং শ্রীমতীকে মন্দির থেকে নিয়ে আসা হয়। অনুষ্ঠান শেষে তাঁরা আবার মন্দিরে ফিরে যান। পরদিন ভোরবেলা হয় দেবদোল। তারপর শ্যামসুন্দর-শ্রীমতীকে চতুর্দোলায় চাপিয়ে দোলমঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে সবাই আবির দেন। দোলমঞ্চে থাকাকালীন লুচিভোগ হয়, নানা রকমের মিষ্টান্ন দেওয়া হয়। বিকালবেলায় আবার মন্দিরে ফিরে আসেন শ্যামসুন্দর। সেখানে তাঁর স্নান হয়। তার পর অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। অন্নভোগে থাকে সাদাভাত, শুক্তনি, ভাজা, তরকারি, পোলাও, চাটনি, পায়েস ইত্যাদি। প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। কয়েক শতক যাবৎ ঐতিহ্যের সঙ্গে শ্যামের বাড়িতে দোল উৎসব পালিত চলছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #ABir, #Khardaha, #Doljatra, #debdol, #shyamsundorer dol

আরো দেখুন