কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্ন চুরি! জেলেপাড়া বেঁধেছিল সঙ
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সেকালের কলকাতায় ছিল জেলেপাড়া। মধ্য কলকাতা-বউবাজার অঞ্চলে ছিল জেলেপাড়া। কৈতর্ব, জেলে, মেছুনিরা এখানে বসবাস করত। এই জেলেপাড়ার সঙ ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয়। চৈত্র সংক্রান্তির কলকাতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল এই সঙ। নানান ঘটনা উঠে আসত সঙে, এক কথায় সমাজের ছবি ফুটে উঠত সঙে। তেমনই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন চুরির ঘটনা নিয়ে জেলেপাড়ায় তৈরি হয়েছিল সঙ।
১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাওয়া হল, বলা ভাল কেউ চুরি করল। সেই সুযোগ সেকালের কনটেন্ট ক্রিয়েটাররা ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ১৯১৭-এর চৈত্র সংক্রান্তির দিন জেলেপাড়ায় সঙ বেরুলো-
‘বিদ্যার মন্দিরে এ সিঁদ কেটেছে কোন চোরে;
সখী নেকী নাকি পড়ল ফাঁকি
কেউ দেখেনি ঘুমের ঘোরে।।
বিদ্যা সর্ব্ববিদ্যা অধিকারী
দেবের প্রসাদে গুমোর গো ভারী,
নইলে নারী হয়ে জয়ের জারি,
বিদ্যা নিত্য পূজে আশুতোষে,
থাকে উপোসে,
চন্দ্রমোহন বদনখানি
ঘোমটা দিয়ে ঢাকেন রানী,
নিলেন বাইশ বুরুল
গুণসিন্ধুযুত নব যুব রায় এই শহরে
এখন ধূমকেতু তার ভাগ্যকাশে
মশান ভাসে নয়ন ঝোরে।।
গানের আড়ালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানীন্তন উপাচার্য দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারী, দেবপ্রসাদের পূর্বতন উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, রেজিস্টার পি জে বুরুল, অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্টার চন্দ্রভূষণ মৈত্রকে ব্যঙ্গ করা হল। এই সঙের লেখককে জানেন?
রসরাজ অমৃতলাল বসু। এটি আবার প্রবাসী পত্রিকায় বেরিয়েছিল। ১৩২৪ সনের বৈশাখে।
সেকালের কলকাতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল সঙ। জেলেপাড়া সঙের খ্যাতি ছিল গগণচুম্বী। ১৯১৩ সালে জেলে পাড়ার সঙের আত্মপ্রকাশ। চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক-গাজন উপলক্ষ্যে এই সঙের রমরমা বাজার ছিল। সমাজের ছবি উঠে আসত সঙের মাধ্যমে, রসরাজ, রূপচাঁদ পক্ষীরা এসব সঙের জন্যে কলম ধরতেন। সঙে নিয়ে অনেক কান্ড হয়েছে কলকাতায়। অশ্লীল সঙের অভিযোগে কলকাতায় সন্ন্যাসীরা গ্রেপ্তারও হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে অভিযোগের পাহাড় জমতে জমতে ১৮২৭ সালে অশ্লীল সঙ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আইনকে কেয়ার না করে সেবার চৈত্র সংক্রান্তিতে সঙ বেরোয়। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। সে খবর আবার ১৮২৭ সালের ২১ এপ্রিল তারিখের সমাচার দর্পনে প্রকাশিত হয়। খবরে বলা হয়েছিল সন্ন্যাসীরা এমন সব অঙ্গ-ভঙ্গি করেছেন, তা ভদ্রলোকে চেয়ে দেখতে পারবেন না। তিনচার জন সন্ন্যাসীকে অ্যারেস্ট করে পুলিশ।
ভাষ্য পাঠ: মধুরিমা রায়
সম্পাদনা: মোঃ রবিউল ইসলাম
তথ্য গবেষণা: সৌভিক রাজ