বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

স্পিলবার্গের ET-র কাহিনীর সঙ্গে সত্যজিৎ-এর লেখা চিত্রনাট্যের মিল ছিল?

April 23, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আজ ২৩শে এপ্রিল, সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের একমাত্র পুত্র কিংবদন্তী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের প্রয়াণ দিবস। ১৯২১ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সত্যজিৎ রায় তাঁর বর্ণময় কর্মজীবনে বহু পুরস্কার পেয়েছিলেন।

চার্লি চ্যাপলিনের পর তিনিই পৃথিবীর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব যিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি পান। ১৯৮৭ সালে ফ্রান্সের সরকার তাঁকে সেদেশের বিশেষ সম্মানসূচক পুরস্কার লেজিওঁ দনরে ভূষিত করে। ১৯৮৫ সালে সত্যজিৎ রায় পান ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বেই ভারত সরকার তাঁকে ভারতরত্ন সম্মান প্রদান করেন। সেই বছরেই মৃত্যুর পরে তাঁকে মরণোত্তর আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৯২ সালে মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে একাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সাইন্সেস তাঁকে আজীবন সম্মাননাস্বরূপ একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার প্রদান করে। ১৯৯৩ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান্টা ক্রুজ সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড স্টাডি কালেকশন প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৯৫ সালে ভারত সরকার চলচ্চিত্র বিষয়ে গবেষণার জন্য সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।

শুধু ভারতবর্ষে নয়, সত্যজিৎ রায়ের গণ্ডি ছিল বিশ্বের কোনায় কোনায়। ১৯৬২ সালে সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘বঙ্কুবাবুর বন্ধু’ নামক একটি বাংলা কল্পগল্প সন্দেশ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। গল্পের কাহিনী আবর্তিত হয় একটি মহাকাশযান নিয়ে, যা গ্রামবাংলার কোন এক পুকুরে অবতরণ করে এবং গ্রামবাসীরা এটাকে মন্দির ভেবে এর পূজা শুরু করে দেয়। 

সত্যজিৎ রায়ের অস্কারপ্রাপ্তি

সেই গল্পের ওপর ভিত্তি করে ১৯৬৭ সালে সত্যজিৎ রায় ‘দ্য অ্যালিয়েন’ নামের একটি চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্য লেখেন, যেটি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। চলচ্চিত্রটির প্রযোজক হিসেবে ছিল কলাম্বিয়া পিকচার্স আর পিটার সেলার্স এবং এর প্রধান অভিনেতা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল তৎকালীন হলিউডের সুপারস্টার মার্লোন ব্রান্ডোকে।

কিন্তু চিত্রনাট্য লেখার কাজ শেষ করে সত্যজিৎ জানতে পারেন যে সেটির স্বত্ব তার নয় এবং এর জন্য তিনি কোন সম্মানীয় পাবেন না। মার্লোন ব্র্যান্ডো সে সময়ে প্রকল্পটি থেকে বেরিয়ে আসেন। মার্লোনের স্থানে জেমস কোবার্ন-কে আনার চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু সত্যজিৎ নিরাশাভরে কলকাতায় ফিরে যান। এরপর ৭০ ও ৮০-র দশকে কলাম্বিয়া কয়েকবার প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রতিবারই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। 

১৯৮২ সালে যখন স্টিভেন স্পিলবার্গের ই.টি. দি এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়াল মুক্তি পায় সেটির কাহিনীর সঙ্গে অনেকেই তখন সত্যজিৎ রায়ের লেখা চিত্রনাট্যের মিল খুঁজে পান। সত্যজিৎ ১৯৮০ সালে সাইট অ্যান্ড সাউন্ড ম্যাগাজিনের একটি ফিচারে প্রকল্পটির ব্যর্থতা নিয়ে বলেছিলেন। ঘটনার আরও বৃত্তান্ত রয়েছে অ্যান্ড্রু রবিনসনের লেখা সত্যজিৎ রায়ের জীবনী ‘দি ইনার আই’-এ। 

সত্যজিৎ’র মতে তার লেখা ‘দ্য এলিয়েন’র চিত্রনাট্যটির মাইমোগ্রাফ কপিটি সারা যুক্তরাষ্ট্রে এভাবে ছড়িয়ে না পড়লে হয়তো স্পিলবার্গের পক্ষে চলচ্চিত্রটি বানানো সম্ভব হত না।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Satyajit Ray, #OSCAR, #alien controversy

আরো দেখুন