একাধিক তরুণীকে ধর্ষণ, অস্ট্রেলিয়ায় বিকৃত যৌনাচারে দোষী সাব্যস্ত প্রাক্তন BJP নেতা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: পাঁচ জন কোরিয়া নিবাসী তরুণীদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতার এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রাক্তন বিজেপি নেতা। ৪৩ বছরের অভিযুক্ত বালেশ ধনখড় অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা।
তরুণীদের মাদক খাইয়ে অচেতন অবস্থায় ধর্ষণ করার অভিযোগে বালেশকে আদালতে পেশ করা হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর।
সূত্রের খবর, অভিযুক্ত বলেশ পেশায় একজন ডেটা এক্সপার্ট। কর্মসূত্রেই অস্ট্রেলিয়ায় থাকে সে। অস্ট্রেলিয়ার ‘ওভারসিজ় ফ্রেন্ডস অব দ্য বিজেপি’ দলেরও প্রধান ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে ৫ জন কোরিয়ান মহিলাকে মাদক খাইয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছিল, সেই বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে এই অপরাধগুলি করেছিল সে। জানা গেছে, কোরিয়ান ভাষার অনুবাদকের কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মহিলাদের সঙ্গে দেখা করত সে। ৫ জন নির্যাতিতার সঙ্গেই একই হোটেল, কোরিয়ান রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফেতে দেখা করেছিল বলেশ। তারপর সিডনির সিবিডি এলাকায় নিজের ষ্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে তাদের ডেকে নিয়ে আসত অভিযুক্ত।
এরপর ওয়াইন এবং অন্য পানীয়ের মধ্যে বিভিন্ন ডেট রেপ ড্রাগ মিশিয়ে ওই মহিলাদের খেতে দিত প্রাক্তন বিজেপি নেতা (BJP leader)। সেসব খেয়ে তাঁরা অচৈতন্য হয়ে পড়লে তাঁদের ধর্ষণ করত বলেশ। শুধু তাই নয়, বেডসাইড অ্যালার্ম ঘড়ির পিছনে লুকিয়ে রাখা ক্যামেরা কিংবা নিজের মোবাইলে রেকর্ড করত ধর্ষণের ঘটনা।
২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর এক নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে বলেশকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই মহিলা জানিয়েছিলেন, তাঁকে মাদক খাইয়ে ধর্ষণ করার সময়েই জ্ঞান ফিরে এসেছিল তাঁর। কোনওমতে বলেশের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বাথরুমে গিয়ে সেখান থেকে এক বন্ধুকে মেসেজ পাঠিয়ে সব জানান নিগৃহীতা। তারপরেই পুলিশ গ্রেফতার করে বলেশকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, তার বাড়ি থেকে তল্লাশি চালিয়ে ধর্ষণের ৪৭টি ভিডিও উদ্ধার করে পুলিশ। সেগুলির বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মহিলাদের সঙ্গে যৌন সঙ্গম করতে দেখা গেছে বলেশকে। কোনও কোনও ভিডিওতে এমনটাও দেখা গেছে, ধর্ষণের সময়েই জ্ঞান ফিরে এসেছে নিগৃহীতার, এবং তিনি যন্ত্রণায় ছটফট করছেন।
বলেশকে গ্রেফতার করার পর তার বিরুদ্ধে ৩৯টি অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়, সেগুলির মধ্যে ১৩টি ধর্ষণের মামলা। কিন্তু বলেশ আদালতে তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, ওই ৫জন মহিলা স্বেচ্ছায় তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন এবং তাঁদের ইচ্ছেতেই সঙ্গমের ঘটনা ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর ৫ জন নিগৃহীতাকেই আদালতে ডেকে এনে জেরা করা হয় এবং তাঁদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এছাড়া জুরিরা বিচারের জন্য ধর্ষণের ভিডিওগুলিও দেখতে বাধ্য হন। জানা গেছে, সেই ভিডিও দেখার সময় জুরিরা এতটাই অসুস্থ বোধ করছিলেন এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে তাঁরা বিচারকের কাছে তাড়াতাড়ি বাড়ি যাওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছিলেন।
সোমবার সিডনির আদালতে পেশ করার পর বালেশ স্বীকার করেন যে, বিয়ে করার পরেও তিনি যৌনসুখ পাচ্ছিলেন না। শরীরের খিদে মিটছিল না বলেই অন্যান্য তরুণীর সঙ্গে ভাব জমিয়ে তাঁদের ধর্ষণ করতেন। বালেশের দাবি, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সম্পর্ক হঠাৎ ভেঙে যাওয়ায় একাকিত্বে ভুগতে শুরু করেন বলে দাবি করেন বালেশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৮ সাল থেকেই নাকি তরুণীদের যৌন হেনস্থা করে চলেছেন বালেশ। তাঁর কাছে প্রতিটি মহিলার নামে আলাদা আলাদা ‘ফোল্ডার’ রাখা রয়েছে।