দম দেওয়া কল থেকেই দমকল!
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আগুন লাগলেই প্রথমে মনে পড়ে অগ্নিনির্বাপণ বাহিনীর কথা, ইংরেজিতে যাকে বলে ফায়ার ব্রিগেড, কিন্তু গোদা বাংলায় এরাই দমকল নামে পরিচিত। নামটির জন্ম সেকালের কলকাতায়।
আঠারো শতকের শুরুতে, কলকাতায় আগুন লাগলে সতর্ক করার এক অভিনব ব্যবস্থা করেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। তখন সবে গড়ে ওঠা কলকাতা শহরের বেশীরভাগ বাড়িই ছিল খড়ের চাল দেওয়া। মাঝে মাঝেই আগুন লেগে যেত। তখনও আলাদা করে দমকল বিভাগ তৈরি হয়নি, পুলিশই তখন আগুন নেভানোর কাজ করত। কিন্তু কোথায় আগুন লাগছে, সেই খবর পেতে, উঁচু বাঁশের মাচায় একজন করে লোক বসিয়ে রাখা হত, যার দায়িত্বই ছিল চারদিকে নজর রাখা; কোথাও থেকে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে কী না! ধোঁয়া দেখলেই সেই লোক শিঙা ফুঁকে সতর্ক করত, এটাই ছিল পেশা।
এর বেশ কিছুকাল পরে আঠারো শতকের মাঝামাঝির সময়, দমকলের আগমন তিলোত্তমায়!কিন্তু এই দমকল নামটা এলো কেমন করে? ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে প্রায় দেড়শো বছর পিছিয়ে যেতে হবে। রূপচাঁদ পক্ষী, সেই সময়ে নানা ধরণের বিষয় নিয়ে রসিয়ে গান লিখতেন। তিনি লিখেছিলেন:
“অগ্নিদেব হলে প্রবল, নির্বাণ করে দমকল,
গোরাদের চেহারা দেখে ভয়ে পালায় বৈশ্বানর,
পাল্লে জল যোগাতে, সাধ্য মতে
সাধ্য কী যে পোড়ে ঘর!
মেসিনেতে দিলে দম,
করে ঝম ঝম……
তেজে বেরোয় ওয়াটার!
সকল প্রস্তুত কলিকাতাতে,
এমন নাই ভূ-ভারতে”
রূপচাঁদ পক্ষীর এই গানের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে দমকল নামের ইতিহাস। যে মেশিনে দম দেওয়ার কথা তিনি লিখেছিলেন, সেগুলো আসলে ফায়ার ব্রিগেডকে সতর্ক করার একটা যন্ত্র। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসানো থাকত লাল রঙের লম্বা লোহার বাক্স। ভেতরে, কাঁচের ঢাকা একটা ছোট আয়তকার খোপে থাকত হাতল ঘুরিয়ে দম দেওয়ার যন্ত্র। ওই হাতল ঘোরালেই খবর চলে যেত কাছের দমকল দপ্তরে। আগুন লাগলে যে কেউ ওই কাঁচ ভেঙে, দম দেওয়া যন্ত্রর হাতল ঘোরাতে পারত, হাতল ঘোরালেই মাটির নীচে পাতা তারের মাধ্যমে ফায়ার ব্রিগেডের কাছে খবর চলে যেত, সেই থেকেই বাহিনীর নাম দমকল! দম দেওয়া কল দিয়ে ডাকা হয় যে বাহিনীকে !
এক ব্রিটিশ অফিসার, ক্যাপ্টেন বার্নাড অ্যান্সন ওযর্নাড অ্যান্সন ওয়েস্টব্রুক ওই যন্ত্রটা তৈরি করিয়েছিলেন। সেটাই সম্ভবত ভারতে প্রথম ফায়ার অ্যালার্ম। শুধু কলকাতায় নয়, ব্রিটিশরা ঢাকাতেও একই যন্ত্র বসিয়েছিল।
সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী, ওই দম দেওয়া কল থেকে যে শুধু বাহিনীর নাম দমকল হয়েছে, তা নয়। আরও একটা যন্ত্র ছিল, যেটাতে দম দিতে হত। ফায়ার ব্রিগেডের গাড়িতে যে জলের পাম্পগুলো থাকত, সেগুলোও চালাতে হত হাতল ঘুরিয়ে অর্থাৎ দম দিয়ে, এই দুটো দম দেওয়া যন্ত্রের ফলেই ফায়ার ব্রিগেডের বাংলা নাম হয়ে গেল দমকল।
কলকাতার বেশকিছু জায়গায় আজও কয়েকটি অকেজো লাল যন্ত্র পরে রয়েছে, এখনও দেখা মেলে তাদের, আধুনিকতা সময়কে পিছনে ঠেলে দিলেও নামটি থেকে গিয়েছে!
ভাষ্য পাঠ: মধুরিমা রায়
সম্পাদনা: মোঃ রবিউল ইসলাম
তথ্য গবেষণা: সৌভিক রাজ