পেলেদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমেরিকার ক্লাবে যোগ দিলেন মেসি
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: জল্পনা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। শেষপর্যন্ত আমেরিকার ক্লাব ইন্টার মায়ামিতেই যোগ দিয়েছেন লিওনেল মেসি। বুধবার নিজেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জিনেয়েছেন। আমেরিকার মেজর লিগ সকারে যোগ দেওয়ার কারণ হিসাবে মেসি বলেন, “আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। ইন্টার মায়ামিতেই খেলব। কিছু জিনিস এখনও বাকি আছে। কয়েকটা জিনিস পাইনি এখনও, তবে মিয়ামিতে আমার যাওয়া নিশ্চিত।”
প্যারিস ছাড়ার পর মেসির সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে মায়ামির নাম এসেছে বারবারই। কিন্তু সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালের অর্থের ঝনঝনানি আর আর্জেন্টাইন তারকার বার্সেলোনায় ফেরার ইচ্ছার ব্যাপারটি মাথায় রেখে অনেকেই মায়ামির প্রস্তাবকে খুব একটা পাত্তা দিতে চাননি।
গত কয়েক মাসে মেসির নামের সঙ্গে আল হিলাল কিংবা বার্সেলোনার নাম যতবার উচ্চারিত হয়েছে, মায়ামির নাম ঠিক ততবার উচ্চারিত হয়নি। অনেকটা চুপচাপ থেকেই মোক্ষম কাজটা করে ফেলেছে ফ্লোরিডাভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রের এই ফুটবল ফ্র্যাঞ্চাইজি। এই দলের মালিক ইংল্যান্ডের প্রাক্তন তারকা মিডফিল্ডার ডেভিড বেকহাম।
মেসির ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা বার্সেলোনার জন্য একটা ধাক্কাই। মেসির এ সিদ্ধান্তের পর তারা একটা বিবৃতি দিয়েছে। মেসির প্রতি শুভকামনা জানিয়েও সেই বিবৃতিতে কিছুটা খোঁচাও আছে। আমেরিকার মেজর লিগ সকার যে লা লিগার তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ লিগ, যুক্তরাষ্ট্রের লিগে মেসির মতো খেলোয়াড় যে অনেকটাই চাপমুক্ত থেকে খেলতে পারবেন, এসব কথা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তার বক্তব্য বলে উল্লেখ করেছে তারা।
বার্সার একটু অভিমান হতেই পারে, তবে শুধু মেসিই নন, আমেরিকায় বিভিন্ন সময় খেলেছেন কিংবদন্তি ফুটবলাররা।
বিশ্বখ্যাত তারকা ফুটবলারদের অনেকেই অতীতে আমেরিকার লিগে খেলেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলে। সর্বকালের অন্যতম সেরা তারকা ক্যারিয়ারে কখনো ইউরোপিয়ান লিগে না খেললেও যুক্তরাষ্ট্রে খেলেছিলেন। তখন অবশ্য এই লিগের নাম ‘মেজর লিগ সকার’ ছিল না। ১৯৭৫ সালে ৩৫ বছর বয়সে ব্রাজিলের ক্লাব সান্তোস ছেড়ে পেলে পাড়ি জমান আমেরিকায়। সই করেন নিউইয়র্কের ক্লাব কসমসে। পেলের উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলকে দারুণ জনপ্রিয় করে তোলে।
একটা সময় যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল খেলা কেউই দেখতোন না। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাটা পছন্দই করতেন না আমেরিকানরা। পেলে কসমসে সই করার পর বিষয়টি আমূল বদলে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপে খেলেছিল। ১৯৫০-এর বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। তবে পেলের কসমসে আগমনকে মার্কিন ফুটবলের পুনরুজ্জীবন বলা হয়ে থাকে।
শুধু পেলেই নয়, তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমেরিকার ফুটবল লিগে নাম লিখিয়েছেন অনেক বিখ্যাত ফুটবলারই। সেখানে খেলতে গেছেন বিখ্যাত জার্মান কিংবদন্তি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, গার্ড মুলার। নেদারল্যান্ডস কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফও খেলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। খেলেছেন ব্রিটিশ তারকা ববি মুর, জর্জ বেস্টও। সাম্প্রতিক অতীতের অনেক বড় বড় তারকা ফুটবলারই খেলেছেন আমেরিকায়।
এঁদের মধ্যে আছেন ডেভিড বেকহাম, থিয়েরি অঁরি, গ্যারেথ বেল, ডেভিড ভিয়া, দিদিয়ের দ্রগবা, ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগার, জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, ওয়েইন রুনি, কাকা প্রমুখ।
পেলের মতো ইয়োহান ক্রুইফও নিউইয়র্ক কসমসে খেলতে পারতেন। কিন্তু তিনি ১৯৭৯ সালে তাদের প্রস্তাব গ্রহণ না করে খেলেন লস অ্যাঞ্জেলস অ্যাজটেকা ক্লাবের হয়ে।
পেলে, ক্রুইফ, জার্ড মুলাররা যখন আমেরিকায় খেলেছেন, সেটি কিন্তু ‘মেজর লিগ সকার’ ছিল না। ‘নর্থ আমেরিকান সকার লিগ’ নামে পরিচিত ফুটবল লিগে খেলেছেন পেলে, ক্রুইফরা।
বুন্দেসলিগার ক্যারিয়ার শেষ করে ১৯৭৯ সালেই গার্ড মুলার পাড়ি জমান আমেরিকায়। তিনি সেখানে তিন মৌসুম খেলে ৩৮ গোল করেছিলেন। তিনি খেলেছিলেন ফোর্ড লর্ডারডেল স্ট্রাইকার্সের হয়ে। আরেক জার্মান কিংবদন্তি বেকেনবাওয়ার অবশ্য মুলারের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি কসমসে সই করেন। মজার ব্যাপার, নর্থ আমেরিকান সকার লিগে বেকেনবাওয়ারের কসমসের জার্সিতে অভিষেক ম্যাচটি ছিল কসমসের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পেলের শেষ ম্যাচ। পাঁচ বছর যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়েছিলেন বেকেনবাওয়ার।
মেসি ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার আগে সাম্প্রতিক অতীতে আমেরিকায় খেলা সবচেয়ে বড় তারকা ডেভিড বেকহামই। তিনি খেলেছিলেন লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সির হয়ে। এরপর ইব্রাহিমোভিচও খেলেছেন এই লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সির হয়ে।
বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি তারকা থিয়েরি অঁরি খেলেছেন নিউইয়র্ক রেড বুলসের হয়ে। আরেক বিশ্বকাপজয়ী স্পেনের ডেভিড ভিয়া মাতিয়েছেন নিউইয়র্ক এফসি। কাকা খেলেছেন অরলান্ডো সিটির হয়ে, ওয়েইন রুনি ডিসি ইউনাইটেডের হয়ে, শোয়েইনস্টাইগার শিকাগো ফায়ার্সের হয়ে।
চেলসির দুই প্রাক্তন তারকা ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড ও দিদিয়ের দ্রগবা খেলেছেন যথাক্রমে নিউইয়র্ক এফসি ও ফিনিক্স রাইজিংয়ের জার্সিতে। ২০২২-২৩ মৌসুমে সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা গ্যারেথ বেল নাম লিখিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেস সিটিতে।