শান্তিপুর থেকে হাওড়া রথ ছুটছে জগন্নাথের রথ
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: শ্রীচৈতন্যের স্মৃতি ধন্য নদীয়ার শান্তিপুরের গোস্বামী বাড়ির রথযাত্রার বয়স প্রায় দুশো বছরেরও বেশি। গোস্বামী বাড়ির রথ লোহা দিয়ে তৈরি, আটটি লোহার চাকার নবরত্ন রথটির উচ্চতা প্রায় চল্লিশ ফুট। রথ উপলক্ষ্যে সংকীর্তন এবং শোভাযাত্রা দুটোই দেখবার মতো জিনিস। একদা কপিকলের সাহায্যে রঘুনাথকে রথে তোলা হত। পরবর্তীকালে কপিকল নষ্ট হয়ে যাওয়ায়, বিশাল রঘুনাথ মূর্তিকে আর রথে তোলা হয় না। ১৯৬৫ সালের পর থেকে শুধুমাত্র জগন্নাথ দেবকেই রথে তোলা হয়।
এখন রথের আগের দিন রঘুনাথ, জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার অভিষেক হয়। তারপর হয় অধিবাস। এরপর ফল নৈবেদ্য দিয়ে চলে পুজো। তারপর রথকে কেন্দ্র করে সাতপাক প্রদক্ষিণ করিয়ে সেবায়তরা হাতে হাতে রথের এক একটি স্তর অতিক্রম করে জগন্নাথ দেব তাঁর নিদিষ্ট আসনে আসীন হন। এরপর এগোয় রথ। বড়বাজারের তুলোপটির কাছে এসে পৌঁছয় রথ। সেখানে রথ সাত দিন অবস্থান করে। গোস্বামী বাড়ির রথ নিয়ে এক কাহিনী শোনা যায়, কোনও এক বছর রথের রশিতে টান দেবার পরেও রথ এগোয় না। সেই সময়ে তাঁদের গৃহদেবতা রাধাবিনোদ জিউকে মন্দির গৃহ থেকে বের করে এনে রথে বসাবার পর রথ এগোতে থাকে।
হাওড়ার মহিয়াড়ির কুণ্ডু চৌধুরী জমিদার বাড়ির রথযাত্রার বয়সও ২০০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। আনুমানিক বাংলা ১২২৩ সনে এদের রথযাত্রার প্রবর্তন হয়েছিল। এ বাড়ির রথযাত্রার অন্যতম আকর্ষণ হল জোড়া রথ। তাতে সুভদ্রা-বলরাম থাকেন না। কুণ্ডু চৌধুরীদের কুলদেবতা লক্ষ্মী-জনার্দন রথের সওয়ারি হন। আকারে ছোট অন্য একটি রথে বিরাজ করেন জগন্নাথ। ২০০ বছর আগে জমিদার কুণ্ডু চৌধুরী পরিবারের দুই তরফ মিলিতভাবে এই রথযাত্রা শুরু করে। বড়ভাই গোকুল কুণ্ডু চৌধুরী ও ছোট ভাই রমাকান্ত কুণ্ডু চৌধুরীর মিলিত প্রয়াসে শুরু হয়েছিল রথযাত্রা। জোড়া রথের ছোটটির উচ্চতা ১২ ফুট। এটি বড় তরফের। বড় রথটির উচ্চতা ১৫ ফুট। এটি ছোট তরফের। কাঠের রথে মহিয়াড়ি রথতলা থেকে তালপুকুরের ধারে মাসির বাড়ি যেতেন জগন্নাথ দেব এবং গৃহদেবতা লক্ষ্মী-জনার্দন। পরবর্তীতে লোহার জোড়া রথ তৈরি হয়।
আজ সকালে বাড়ির মন্দিরে দেবতাদের বিশেষ পুজো হয়েছে। একইসঙ্গে রথগুলিরও পুজো করা হয়। কুলদেবতা এবং জগন্নাথদেব মাসির বাড়িতে পৌঁছে ফের ফিরে আসেন, রথগুলো থেকে যায়। বাড়িটির বেহাল দশা বলে তাঁদের সেখানে রাখা হয় না।