মোদীর সফরে সওয়াল হোক মানবাধিকার নিয়ে, বাইডেনকে চিঠি আইনপ্রণয়নকারীদের
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: তিনদিনের মার্কিন সফরে গিয়েছে মোদী। গত ন’বছরের পাঁচবার মার্কিন সফরে গেলেও মোদীর চলতি মার্কিন সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। মোদীর সফরের প্রেক্ষিতে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনকে চিঠি লিখলেন ডেমোক্রেটিক দলের ৭৫ জন আইনপ্রণয়নকারী (সেনেটর, কংগ্রেনম্যান, কংগ্রেসওম্যান)। তাঁদের দাবি মানবাধিকার নিয়ে কথা হোক সফরে। ভারতের গণতান্ত্রিক পরিসরের বর্তমান পরিস্থিতিসহ নানা উদ্বেগের বিষয়ে আলোচনা চান তাঁরা। মানবাধিকারের প্রসঙ্গও উঠে আসুক বাইডেন-মোদী বৈঠকে, সেনেটর ক্রিস ভ্যান হলেন, প্রতিনিধি প্রমিলা জয়পালদের দাবি এমনটাই।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে, আইনের মাধ্যমে বিরোধী স্বর, সংখ্যালঘু ও বিরুদ্ধ মতপোষণকারী সুশীলসমাজের প্রতিনিধিদের দমিয়ে রাখার প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন মোদী। সংবাদপত্র তরফে দাবি করা হয়েছে, মোদী প্রশ্নের জবাব দেননি। মঙ্গলবার অর্থাৎ মোদীর আমেরিকায় পা রাখার দিনই হোয়াট হাউসে ৭৫ জন আইনপ্রণয়নকারীর সইসহ চিঠি পৌঁছেছে। ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসের ৭৫ জন সদস্যের মধ্যে রয়েছে ১৮ জন সেনেটর এবং ৫৭ জন হাউজ অফ দ্য রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য। চিঠিতে বলা হচ্ছে, বাইডেন মানবাধিকার রক্ষা, সংবাদমাধ্যমে স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মার্কিন বিদেশ নীতিতেও তার প্রতিফলন রয়েছে। বিশ্বমঞ্চে এর গ্রহণযোগ্যতা ও মূল্যবোধ বাড়াতে আমেরিকার বন্ধু দেশগুলির একই নীতি নিয়ে এগোনো উচিত। মার্কিন মুলুকের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, এমন দেশেগুলিতে এ বিষয় ভাবা হচ্ছে কিনা বা মানা হচ্ছে কিনা তা আমেরিকার সুনিশ্চিত করা উচিত। সেখানেই উঠে আসছে ভারতের প্রসঙ্গ, উদ্বিগ্ন আইনপ্রণয়নকারীরা। ভারতে বিরোধী রাজনীতির পরিসর কমছে, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, সাংবাদিকদের টার্গেট করা হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ও ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। বিভিন্ন মার্কিন সংস্থা ও সেদেশের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের রিপোর্টেও ভারতে এই ছবি প্রতিফলিত হচ্ছে। মানবাধিকার আর ধর্মীয় স্বাধীনতা যে ভারতে কাঁঠালের আমসত্ত্বের পরিণত হয়েছে, তা আগেই বলেছিল মার্কিন প্রতিরক্ষার মন্ত্রকের রিপোর্ট। ভারতে সংবাদমাধ্যমে স্বাধীনতার বাস্তব পরিস্থিতি নিয়েও একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে মার্কিন মুলুকে।
চিঠি আরও বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট কোনও ভারতীয় নেতা বা রাজনৈতিক দলের সমর্থন তাঁরা করতে চান না। আমেরিকার বিদেশনীতির মূল ভিত্তিকে তাঁরা সমর্থন করেন, এবং সেই কারণেই তাঁরা সরব। সেই মর্মেই তাঁরা চাইছেন ভারত-আমেরিকার সুদৃঢ় ও দীর্ঘকালীন বন্ধুত্বের স্বার্থে বাইডেন সমস্ত উদ্বেগের বিষয় নিয়ে মোদীর সঙ্গে আলোচনায় বসুন। ডেমোক্রেট কংগ্রেসওম্যান রসিদ তালিব টুইট করেছেন, তিনি বৃহস্পতিবারের মোদীর অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন। তিনি লিখছেন, তাঁদের দেশের রাজধানীতে মোদীকে মঞ্চ দেওয়া হচ্ছে এটা লজ্জাজনক। গণতন্ত্রের পরিপন্থী পদক্ষেপ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, মুসলমান ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আক্রমণ করাসহ সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের মতো পদক্ষেপের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে মোদীর। তাঁর মতো মানুষকে মার্কিনমুলুকে জায়গা দেওয়া অনভিপ্রেত।
মোদীর সফরে বিভিন্ন সংস্থা বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা করেছে। আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় ব্রতী একটি সংস্থাও বাইডেনের কাছে দরবার করেছে, তিনি যেন বৈঠকে মানবাধিকার প্রসঙ্গে আলোচনা করেন।