‘আসুন, ইন্ডিয়াকে জয়যুক্ত করি’ – শহিদ দিবসে দলীয় মুখপত্রে আর কী বার্তা মমতার?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ২১-শে জুলাই শহিদ দিবস সমাবেশের প্রাক্কালে দলীয় মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’-র সম্পাদকীয়তে কলম ধরলেন তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কী বার্তা দিলেন তিনি? পড়ে নিন :
“একুশে জুলাই। অমর একুশে।”
‘অমর একুশে’ কথাটা এমনিতে ব্যবহার হয় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। সত্তর বছর আগে একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন কয়েকজন বাঙালি। মাতৃভাষার জন্য সেই আত্মবলিদান ইতিহাসে অমর হয়েছে।
অমর একুশে আমাদের পশ্চিমবাংলার একুশে জুলাইও। তিরিশ বছর আগে কলকাতার রাজপথে স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন বাংলার ১৩ জন। গণতন্ত্রের জন্য সেই আত্মবলিদানও ইতিহাসে অমর।
একুশে ফেব্রুয়ারি হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশে জুলাই হয়েছে শহিদদিবস। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে জুলাই।
১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই ভারতবর্ষের সংবিধান পরিষদ তেরঙা পতাকাকে আমাদের জাতীয় পতাকা বলে গ্রহণ করেছিল। জাতির মানুষের জন্য গণতান্ত্রিক গর্ব দিয়েছিল সেই জাতীয় পতাকা। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই সেই গণতন্ত্রের সম্মানে, সেই পতাকার গৌরবে, আমরা শহরের রাজপথে প্রতিবাদী মিছিলে নেমেছিলাম। সেদিনের স্বৈরাচারী সিপিএম-এর নির্দেশে পুলিশের গুলি চলেছিল আমাদের সহযোদ্ধাদের উপর। প্রাণ দিয়েছিলেন ১৩জন, আঘাতে লুটিয়েছিলেন বহু মানুষ।
আমার ভাইয়ের… : সেইসব গুলি-চালানো অত্যাচারী মুখগুলিকে আবার দেখছি। তিরিশ বছর আগে তাদের হাতে বন্দুক ছিল, বেয়নেট ছিল, লাঠিসোঁটা ছিল। আজ তাদের হাতে খবরের কাগজের কলম আছে, টেলিভিশনের সান্ধ্য আসর আছে। তিরিশ বছর আগে তারা আমাদের মুখ বন্ধ করে গণতন্ত্রকে চোরাপথে কবজা করতে চেয়েছিল। আজও তারা আমাদের মুখ বন্ধ করে গণতন্ত্রকে চোরাপথে কবজা করতে চায়। সেদিনও তারা মানুষকে সঙ্গে পায়নি। আজও তারা মানুষকে সঙ্গে পায়নি। সেদিনও তাদের ভরসা ছিল একদল পাইক-বরকন্দাজ-লাঠিয়াল। আজও তাদের ভরসা হল একদল পাইক-বরকন্দাজ-লাঠিয়াল। সেদিনের পাইক-বরকন্দাজরা গুলি চালিয়েছিল, আজকের পাইক-বরকন্দাজরা কাগজে লেখে কিংবা টিভির পর্দায় চেঁচায়।
অমর একুশে জুলাই মানুষের জয়গান ঘোষণা করে। অত্যাচারী ভাড়া করা পাইক-বরকন্দাজ-লাঠিয়ালরা মানুষের বিরুদ্ধে। সেদিন তারা গুলি চালিয়েছিল। আজ তারা কিছু বোমাবাজি করে, কিছু ক্যামেরাবাজি করে, কিছু কলমবাজি করে। তিরিশ বছর পেরিয়ে গেল, ওদের জনবিরোধী চরিত্র একটুও বদলাল না।
সেদিন ওরা ছিল সিপিএম। আজ ওরা কিছু সিপিএম, কিছু বিজেপি, কিছু অন্য রকমের বাম-রাম পতাকা। আসলে ওরা সবাই একটাই শিবির— মানুষ-বিরোধী শিবির। সেই শিবিরের দলীয় পরিচিতি বদলে যায়, কিন্তু শিবিরের জনবিরোধী চরিত্র বদলায় না। ওরা যুগে যুগে একটাই জিনিস চেয়েছে— আমাদের পথচলা বন্ধ হোক। কিন্তু আমাদের চলা বন্ধ হয়নি।
এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এইসব জনবিরোধী শক্তি আবার একত্রিত হয়েছে। আবার এদের উদ্দেশ্য আমাদের অগ্রগতি বন্ধ করা। আবার এদের লক্ষ্য মানুষের গণতান্ত্রিক শক্তিকে স্তব্ধ করা। তিরিশ বছর আগে ওরা রাইটার্স বিল্ডিংকে ব্যবহার করেছিল দুর্গ হিসেবে, এখন ওরা মিডিয়াকে ব্যবহার করছে দুর্গ হিসেবে। সেদিন ওদের ভরসা ছিল গুলি, আজ ওদের ভরসা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কুৎসা।
কেন মিথ্যা কুৎসা :
(১) রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কিছু পদক্ষেপ বা সিদ্ধান্ত নিয়ে ওদের আপত্তি আছে। আশ্চর্য! এতে আমরা দল বা সরকার হিসেবে কীভাবে দায়ী হলাম? কমিশনারকে নিয়োগ করেন রাজ্যপাল, কাজের কৈফিয়তও দেখলাম তিনিই নিচ্ছেন! কমিশন তো আমাদের সরকারের কোনও ডিপার্টমেন্ট নয় যে তাদের কাজকর্মের জন্য কোনও জবাবদিহির দায় আমাদের উপর পড়ে। তবু কাগজ জুড়ে, পর্দা জুড়ে কমিশনকে সমালোচনা করার নামে আমাদের আদ্যশ্রাদ্ধ হচ্ছে। হায় সাংবাদিকতা!
(২) নির্বাচনী হিংসায় যাঁরা মারা গেলেন, আহত হলেন— তাঁদের অধিকাংশ তো আমাদের দলের কর্মী। যাদের আক্রমণে তাঁরা নিহত-আহত হলেন, তারা কারা? মিডিয়ায় আক্রমণকারীদের মুখোশ খোলা নিয়ে কোনও চিন্তা দেখছি না— সব হিংসার জন্য দায়ী যেন সরকার, তৃণমূল! মারা গেলাম আমরা, মার খেলাম আমরা— দায়ীও আমরা? পঞ্চায়েত নির্বাচন জুড়ে দলীয় পত্র-পত্রিকায় কিংবা ভাষণে যারা প্রকাশ্যে হিংস্র প্রতিরোধ করার কথা বলে গেল, তাদের কৈফিয়ত নিতে বাংলার মিডিয়ার উৎসাহ নেই। উৎসাহ কেবল আমাদের কুৎসায়।
(৩) আশ্চর্য সব যুক্তি! আমরাই জাল ব্যালটে ছাপ দিয়েছি, আমরাই সেই ব্যালট পুকুরে ফেলেছি, আমরাই যোগফলে কম ভোট পেয়েছি, আবার আমরাই ভুল যোগফলের সার্টিফিকেট পেয়েছি! কোনটা ঠিক? জাল ব্যালটে ছাপ আমাদের হলে সে ব্যালট আমরা ছিঁড়ে ফেলব কেন? উত্তর নেই। এক শতাংশেরও কম বুথে কিছু বিক্ষিপ্ত হিংসা হল— কোথাও এই দলের কল্যাণে, কোথাও ওই দলের চেষ্টায়। সবটাই গুলিয়ে দিয়ে মিডিয়া উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়েই চাপাবে বলে গোঁ ধরে রইল। হায় রে সাংবাদিকের সততা। সার্কুলেশন কিংবা টিআরপি-র লড়াই করে এক নম্বর হওয়ার বাসনায় লড়ে যায় খবরের কাগজ আর টিভি চ্যানেলগুলি। সোশ্যাল মিডিয়া চালায় মালব্য বাবাজির সৈনিকরা। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি? আসলে, সার্কুলেশন কিংবা টিআরপি-র জন্য, বাজারে টিকে থাকার জন্য, সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলের এই সব কুৎসিত প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রদর্শনীর পিছনে একটা বড় রাজনৈতিক দর্শনও কাজ করে।
রাজনৈতিক দর্শনের বিচারে আমরা গরিব-মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে। আমরা মনে করি, ভারতে মোদি সরকার যেভাবে সরকার ও অর্থনীতিকে চালনা করছে— তাতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে ক্রমেই বেশি বেশি করে টাকা জমছে, গরিব থেকে গরিবতর হচ্ছেন গ্রাম-মফস্বল-শহরের অধিকাংশ প্রান্তিক সংসারী। দেশ জুড়ে অসাম্য বাড়ছে, মানুষের দুঃখকষ্ট বাড়ছে। এই অসাম্যের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজের মতো করে লড়ছে। আমরা নিজেদের টাকায় প্রায় সব মানুষকে খাদ্য সুরক্ষা দিচ্ছি— প্রায় বিনামূল্যে তাঁদের গেরস্থালিতে অন্নের জোগান দিচ্ছি। আমরা নিজেদের টাকায় সব মানুষকে এভাবেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিচ্ছি— স্বাস্থ্যসাথী আজ ঘরে ঘরে সবার ভরসা। শিক্ষার আলো পৌঁছচ্ছে ঘরে ঘরে, বিনামূল্যে, স্কলারশিপের বাড়তি সুবিধা নিয়ে। মহিলাদের হাতে কিছু টাকার সংস্থান যাতে থাকে, তার জন্য রয়েছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। স্কুল-কলেজের মেয়েদের জন্য কন্যাশ্রী। এইসব স্কিমের সুবিধা যাতে শেষ মানুষটির কাছে পৌঁছায়, তার জন্য রয়েছে আমাদের দুয়ারে সরকার।
মুশকিল হল, আমাদের এইসব অসাম্য-বিরোধী পদক্ষেপ দিল্লি-মুম্বই-কলকাতার কয়েকজন মুষ্টিমেয় নেতিপন্থীর পছন্দ হয় না। তাদের আঁতে ঘা লাগে। তাদের স্বার্থে আঘাত পড়ে। অল্প পয়সায় কাজের লোক পাওয়ার যে সুখ, তাতে ছেদ পড়ে। নিজেদের শ্রেণিস্বার্থ এবং শ্রেণি-অভিমান তাদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারে। আমাদের হাওয়াই চটির গরিবি অহংকার তাদের পাউডার-মাখা নেতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। সেই প্রতিবাদ তাদের সহ্য হয় না। তারা তখন কলমকে বাঁকায়, ক্যামেরাকে কাঁপায়। আমাদের কাজকর্মকে কুৎসায় লেপে দেওয়ার পিছনে কাজ করে এই ঈর্ষা, দ্বেষ, ভয়। মানুষ যত জাগে, মা-ভাই-বোনেরা যত সংঘবদ্ধ হন, পঞ্চায়েতি ফলাফলে যত সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বাক্ষর পড়ে, তত ওদের কলম ও ক্যামেরা হয়ে ওঠে লাঠি-সড়কি-বন্দুক।
একদিন ওরা ওই লাঠি-সড়কি-বন্দুক নিয়ে আমাদের পথে মেরেছিল। আজ ওরা ক্যামেরা-কলম নিয়ে আমাদের আবার মারতে চায়। সেদিনও ছিল মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষীর বিরুদ্ধে কোটি কোটি মানুষের লড়াই, আজও তাই।
একুশে জুলাই দীর্ঘজীবী হোক। স্বৈরতান্ত্রিক এককেন্দ্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশের যুক্তরাষ্ট্রিক কাঠামো ভাঙার চেষ্টা ব্যর্থ হোক। নির্বাচন হলেই যারা বড় বড় ‘উজালা’ কিংবা ‘বেটি বাঁচাও’-এর কথা বলে, অন্য সময় যারা এজেন্সি লাগিয়ে গরিব-সংখ্যালঘু-তফসিলি-আদিবাসী-সাধারণ মানুষের সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে, তারা পরাস্ত হোক। মণিপুর-উত্তরপ্রদেশের মতো জ্বলন্ত ব্যর্থতার উদাহরণ পর্যুদস্ত হোক। আসুন, এর বিরুদ্ধে সবাই জাগ্রত হই, ঐক্যবদ্ধ হই, ‘ইন্ডিয়াকে’ জয়যুক্ত করি।
একুশে জুলাই তৃণমূল কংগ্রেস পরিবারের কাছে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন, যা তৎকালীন বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমূল পরিবর্তন এনেছিল। এই দিন শহিদ তর্পণের দিন, এই দিন নতুন উদ্যমে শপথ গ্রহণের দিন। ১৯৯৩ সালের এই দিনে, জনগণের দাবিকে মান্যতা দিয়ে, অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আমাদের অহিংস, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে পদদলিত করার জন্য সিপিআইএমের পুলিশ অতর্কিত এবং নিষ্ঠুর আক্রমণ হেনেছিল। এই অমানবিক, নৈরাজ্যবাদী ঘটনা বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের পাতায় একটি কলঙ্কিত দিন হিসেবে চিহ্নিত রয়ে যাবে। সিপিআইএমের হার্মাদ বাহিনী এবং সরকারি পুলিশের সাহায্যে আমার নিরপরাধ-নিরীহ সহকর্মীদের উপর তাণ্ডব চালায় প্রশাসন। সকল নিয়ম মেনে এই কর্মসূচি করা হলেও যে প্রাণঘাতী আক্রমণ সিপিআইএমের লুম্পেন বাহিনী সেদিন যা করেছিল তা গণতন্ত্রের লজ্জা, ইতিহাসের কালো দিন হিসেবে পরিচিত থাকবে। মধ্যযুগীয় বর্বরোচিত আচরণে আমার ১৩ জন প্রিয় সহকর্মী সেদিন অকালে প্রাণ হারিয়েছিলেন। শতাধিক হয়েছিলেন জখম। তাঁরা কেউ অপরাধী ছিলেন না। তাঁরা ছিলেন গরিব, খেটে খাওয়া মানুষ। কলকাতার রাজপথ সেদিন সাক্ষী থেকেছিল রক্তে রাঙানো হোলি খেলার। এই পরিকল্পিত হামলার আমিও শিকার হয়েছিলাম। নির্বিচারে চলেছিল অত্যাচার। মৃত্যুর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ হয়েছিল সেদিন। কিন্তু মা-মাটি-মানুষের পরম আশীর্বাদে ভয়াবহ চোট পেলেও প্রাণে বেঁচে ফিরেছিলাম সেদিন। দেশে আমরা সেদিন প্রথম বলেছিলাম, ‘নো আই কার্ড, নো ভোট।’ এই দিনের মর্মান্তিক ঘটনা বিস্তারিত লেখা আছে আমার ‘অবিশ্বাস্য’ বইতে।
এই বছরে একুশে জুলাই আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাম পঞ্চায়েতে পুনরায় বিকশিত জোড়াফুল। সারা বাংলার মানুষ যেভাবে আশীর্বাদ-সমর্থন-ভালবাসার সাগরে আমাদের নিমজ্জিত করেছেন, তাতে আমি এবং আমার গোটা তৃণমূল কংগ্রেস পরিবার আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। বিজেপির ঘৃণ্য রাজনীতিকে বাংলার মানুষ বরাবরের মতো এবারও প্রত্যাখ্যান করেছেন। নারী-বিদ্বেষী, দলিত-নিপীড়নকারী, কৃষক-বিরোধী, এবং সর্বোপরি মানবকল্যাণ-বিরোধী এই বিজেপির শেষের দিন ইতিমধ্যেই মধ্যেই শুরু হয়েছে। সারা দেশের মানুষ এবার সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষক, স্বৈরাচারী-বিভেদকামী বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে। উদারচেতা, ভারতীয় সংস্কৃতি এবং কৃষ্টির ধারক-বাহক হিসেবে মোট ২৬টি দল দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে, গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষার জন্য একত্রিত হয়েছে। যার নাম INDIA। ২০২৪-এর লোকসভায় দিল্লির মসনদ থেকে বিজেপির বিদায় শুধু সময়ের অপেক্ষা। দেশের মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না।
আমাদের স্মরণে, মননে, চিন্তনে, দর্শনে এই দিনটি ছিল, আছে, থাকবে। একদিকে শহিদ তর্পণ, অন্যদিকে নতুন শপথ। সেদিনের অত্যাচারীরা ভোল পালটে নতুন চেহারায় উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। কুৎসা, বিকৃতপ্রচার, বিভেদ, বাংলার বদনাম, বাংলার ক্ষতি এবং আমার প্রাণাধিক প্রিয় রাজ্যবাসীর জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলাই এদের লক্ষ্য। আমাদের লক্ষ্য হল বাংলার গণতন্ত্র, শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, সংহতি অটুট রাখা। কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনা, আর্থিক অবরোধ সত্ত্বেও বাংলায় উন্নয়নমূলক সামাজিক প্রকল্পগুলি মানুষের সেবায় সদা নিয়োজিত। বাংলা সর্বদা নির্ভয়, নির্ভীক। বাংলা মাথা উঁচু করে বাঁচতে জানে। বাংলা চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে জানে। বাংলার মাটি নবজাগরণের মাটি।
শিক্ষা, মেধা, সংস্কৃতি, সৌভ্রাতৃত্ব থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়ে বাংলা এগিয়ে, বাংলা সচেতন, বাংলা দেশকে পথ দেখায়। ওরা অশান্তির বিষবায়ু ছড়ানোর চেষ্টা করে, আমরা মানবিকতার নব আলো জ্বালাই রাজ্যের প্রতিটি কোণে। ২১ জুলাই তাই আমাদের শহিদ তর্পণের মাধ্যমে, নব সূর্যোদয়ের দিন। আর তার মধ্যেই আমরা শপথ নেব— বাংলার সুরক্ষা, বাংলার উন্নয়ন, বাংলার বিরুদ্ধে সব চক্রান্তকে মোকাবিলা করার। সেই সঙ্গে জনবিরোধী নীতির অশুভ শক্তির হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে জনমুখী নীতির শুভ শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করার শপথ।