বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

৫০০ বছর আগে কোচবিহারে নরবলি দিয়ে সূচনা হয়েছিল এই দেবীর পুজো?

July 29, 2023 | 2 min read

কোচবিহারের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্য বড় দেবীর পুজো

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: কোচবিহারের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্য বড় দেবীর পুজো। প্রায় ৫০০ বছরের বেশি সময়কাল ধরে পূজিত হয়ে আসছে এই দেবী। জানা যায়, এই পুজোয় সাবেক রীতি ছিল নরবলি। এখনও নাকি এই পুজোয় মানুষের রক্ত লাগে।

দেবীর রুপ অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। তাঁর গাত্রবর্ণ লাল, অসুরের গাত্রবর্ণ সবুজ। দেবীর দু’পাশে নেই লক্ষ্মী -সরস্বতী গণেশ কার্তিক। পরিবর্তে অবস্থান করছেন দুই সখী জয়া ও বিজয়া, তাঁদের হাতে জ্বলন্ত মশাল। দেবীর বাহন সিংহ অসুরের পায়ে কামড়ে ধরে রয়েছে আর অসুরের হাতে কামড় বসিয়েছে একটি সাদা বাঘ।

কোচবিহার দেবত্ব ট্রাস্ট সূত্রে জানা যায়, ৫০০ বছর আগে কোচবিহারের মহারাজা নর নারায়ণ স্বপ্নাদেশ পেয়ে বড়দেবীর পুজো শুরু করেন। প্রতিমা তৈরিতে ৭ হাত লম্বা ময়না কাঠের প্রয়োজন হয়। বহু রীতিনীতি মেনে দীর্ঘদিন পূজার্চনার পর শুরু হয় মূর্তি গড়ার কাজ। প্রথা মেনে প্রথমে ডাঙরাই মন্দিরে শ্রাবণ মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে ময়না কাঠের পুজো হয়। পরে সন্ধ্যায় শোভাযাত্রা সহকারে সেই ময়না কাঠ নিয়ে যাওয়া হয় কোচবিহারের মদনমোহন মন্দির চত্বরের কাঠামিয়া মন্দিরে।

কথিত আছে, ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে কোচবিহারের কোচ রাজবংশের প্রথম মহারাজ বিশ্বসিংহ শৈশবকালে তাঁর ৩ ভাই সহ খেলার সাথীদের নিয়ে অসমের ‘চিকন’ বনে ময়না কাঠের ডালকে দেবী দুর্গা রুপে কল্পনা করে পুজো করেছিলেন। তখন খেলার এক সাথীকে পাঠা সাজিয়ে আটকে রাখেন। মহারাজা বিশ্বসিংহ কুশ দিয়ে আঘাত করা মাত্রই অলৌকিক ঘটনায় সেই বন্ধুর মাথা ধড় থেকে আলাদা হয়ে যায়। জনশ্রুতি, দেবী দুর্গার আশীর্বাদেই মহারাজা বিশ্বসিংহ ‘চিকনার’ অধিপতি তুরকা কোতোয়ালকে পরাজিত করে কোচবিহারের সিংহাসনে আসীন হন। মহারাজা বিশ্বসিংহের পুত্র কোচবিহারের দ্বিতীয় মহারাজ নর নারায়ণ (রাজত্বকাল ১৫৫৪ – ১৫৮৭ খ্রিস্টাব্দ ) স্বপ্নাদেশে দশভুজা দুর্গা মূর্তির পূজার প্রচলন করেন।

রাজ আমলের প্রাচীন ঐতিহ্য ও পরম্পরা অবিকল একই রয়ে গেছে এই বড়দেবীর পুজোয়

প্রায় ৫০৯ বছর আগে মহারাজ নরনারায়ণের আমলে নরবলি চালু হয়। পরবর্তীকালে মহারাজা নরেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর (রাজত্বকাল ১৮৪৭ – ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দ ) নরবলি বন্ধ করে দেন। তবে এই পূজায় নর রক্ত আজও প্রচলিত আছে। জানা যায়, কোচবিহারের কালজানি এলাকার একটি পরিবারের প্রতিনিধি আজও অষ্টমীর নিশিতে আঙ্গুল চিরে রক্ত দেন।

বর্তমানে রাজ আমলের প্রাচীন ঐতিহ্য ও পরম্পরা অবিকল একই রয়ে গেছে এই বড়দেবীর পুজোয়। রাজ প্রতিনিধি হিসেবে রাজ আমলের দুয়ার বক্সী অমিয় কুমার দেব বক্সী আজও বড়দেবীর পূজার প্রতিটি বিষয়ে উপস্থিত থাকেন। দেবত্ব ট্রাস্ট বোর্ডের তত্ত্ববোধানে আজও পূজিত হয় বড়দেবী। সকাল থেকে শুরু হয়ে ভোর ৪ টা পর্যন্ত প্রতিদিন পুজো হয় বড়দেবীর। প্রথা মেনে সন্ধি পূজা , নিশা পূজা ও বিশেষ গুপ্তি পূজা হয়।

প্রতি বছর মহালয়ার পরদিন থেকেই শুরু হয়ে যায় বড়দেবীর পূজা। মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে বড় দেবীর মন্দির প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় গুপ্তপুজা । কিংবদন্তী অনুসারে, দেবী নররক্ত না পেলে কুপিত হন। তাই প্রতি বছর মহাঅষ্টমীর রাতে এখানে এক বিশেষ ধরনের বলি ও পুজোর ব্যবস্থা করা হয়। তখন মন্দিরে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ থাকে। মন্দিরের দ্বার রুদ্ধ থাকে। শুধুমাত্র রাজ পুরোহিতগণ ও রাজপরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতেই এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়।

বর্তমানে শুধুমাত্র চালকুমড়া ও আখ বলি দেওয়া হয়। তবে অষ্টমী তিথিতে মোষ বলিও দেওয়া হয়। বড় দেবীর পুজো দেখতে কোচবিহারে দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Coochbehar, #BARO DEVI, #Debi Bari Pujo

আরো দেখুন