ধোপার নামে একখানা রাস্তা আছে কলকাতায়?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: লালমুখোরা বনিকের ছদ্মবেশে এদেশে এসেছিল। পরে সেই বনিকের মানদন্ড পরিণত হয়েছিল রাজদন্ডে, এ লাইন লিখে লিখে বড় হয়েছি আমরা সবাই। ১৬৮০-এর আগে পর্যন্ত ইংরেজ বেনিয়ারা কলকাতায় তেমন সুবিধা করে উঠতে পারেনি। এমনকি কোম্পানির বাণিজ্যতরীর গঙ্গায় ঢোকার অধিকারও ছিল না। বালেশ্বর থেকেই কাজ কারবার চলত। কলকাতায় কুঠি বানানোর পর ওদের পোয়া বারো হয়। ব্যাটারাও জমিয়ে বসে। কিন্তু ৮০-এর আগে ১৬৭৯-তে কলকাতার গঙ্গায় ইংরেজদের বাণিজ্য তরী “ফ্যালকন” এসে ভেড়ে, প্রথম বারের জন্য ব্রিটিশ বাণিজ্য জাহাজ এল তিলোত্তমায়। যে রাস্তার কথা লিখছি, এই জাহাজ থেকেই তার গপ্পো শুরু।
প্রচলিত কিংবদন্তী অনুযায়ী, গার্ডেনরিচে নোঙর ফেলেছিল ফ্যালকন। তারপরই শুরু হল সমস্যা, জাহাজের ক্যাপ্টেন স্ট্যাফোর্ড সাহেব পড়লেন মহা ফাঁপরে! সাহেব কী বলে কেউ বোঝে না, আর এখানকার লোকজন কী বলে সেটা আবার সাহেব বোঝে না।
সাহেবের দোভাষী চাই। শেঠ-বসাকদের কাছে খবর গেল। সাহেব মাদ্রাজি জানতেন, ফলে মাদ্রাজিতেই দুবাস চাইলেন। আর বাংলার লোকজন ভেবে বসলেন ধোপা চাই। তাও অনেক আলাপ আলোচনা বৈঠকের পরে এই ধোপা বিষয়টা উদ্ধার হল। পিছনে যুক্তি ছিল, অনেকদিন ধরে জাহাজে থাকার কারণে, কাপড়-জামা অপরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। তাই তাদের একজন ধোপার আশু প্রয়োজন।
একজন ধোপাকে খুঁজে বার করা হল, সে আবার টুকটাক ইংরেজিও জানে, এক্কেবারে রাজযোটক! কলকাতার বাবুরা তাকেই সাহেবের কাছে পাঠাবে বলে ঠিক করলেন। নিরীহ ধোপা তো ভয়েই অস্তির। অনেক জোর জবরদস্তির পরে সে রাজি হল। এই রাজি হওয়াতেই তার কপাল খুলে গেল। কলকাতার বাবুরা নানান উপহার দিয়ে ধোপাকে পাঠালেন। সাহেবও তাকে স্বাগত জানিয়েছিল, ফিরতি উপহারও দিল। রিটার্ন গিফট!
ব্যস! ধোপা ভাবলেন ব্যাপারখানা মন্দ নয় তো। এবার নিত্য যাতায়াত শুরু হল, খাতির জমল। সাহেবেদের সঙ্গ উপভোগও করতেন ধোপা। আয় হচ্ছিল, জিনিসপত্র জুটছিল। খাতির জমিয়ে বেশ অনেক উপার্জন করলেন ধোপাটি। প্রভুত সম্পত্তির মালিক হলেন। এমন সম্পত্তি করে ফেললেন যে সেকালের কলকাতার ধনীদের লিস্টে ঢুকে গেলেন, রতন সরকার। হ্যাঁ সুপারস্টার ধোপার নাম ছিল রতন সরকার।
তবে এই নিয়ে দু-তিনটে জনশ্রুতি আছে। কেউ কেউ বলেন সাহেবেদের কাছে ধোপা পাঠিয়েছিলেন পোস্তার নকু ধররা, আবার কারো কারো মতে ধোপা পাঠিয়েছিলেন নন্দরাম। কিন্তু মধ্যাগল্পটা অপরিবর্তিত। যদিও এর ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।
এবার রাস্তাটার কথা বলি, এই দোভাষী বিখ্যাত ধোপার নামে কলকাতায় একটা নয়, জোড়া রাস্তা রয়েছে। জোড়াসাঁকো অঞ্চলের ‘রতন সরকার গার্ডেন’ স্ট্রিট, এর আগের নাম ছিল ম্যাকার্থি লেন। যেটি আবার ‘মাথা ঘষা গলি’ নামেও পরিচিত। আর অন্য রাস্তাটি হল কলুটোলার ‘রতু সরকার লেন’।
ভাষ্য পাঠ: মধুরিমা রায়
সম্পাদনা: মোঃ রবিউল ইসলাম
তথ্য গবেষণা: সৌভিক রাজ