কলকাতার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন শেক্সপিয়র! জানেন কীভাবে?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আরে না রে বাবা, শেক্সপিয়র সরণির কথা বলছি না। সাউথ পার্ক স্ট্রিট গোরস্থানের সঙ্গে কিন্তু জড়িয়ে আছেন উইলিয়ম শেক্সপিয়র। কেমন করে বলছি, আগে সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রির কথা বলে নিই বরং! কলকাতার কবরখানা দুনিয়ার হার্ট থ্রব ইনি। যার কারণ অবশ্যি মানিকবাবু আর টমাস গডউইনের পেরিগেল রিপিটার। ১৭৬৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে পার্ক স্ট্রিট গোরস্থানে চিরনিদ্রায় ঘুমাতে আরম্ভ করেন সাহেবরা। এখানে প্রথম গোরে যান কাস্টম হাউজের এক কেরানি জন উড। তারপর থেকেই বিখ্যাত, অখ্যাত মানুষদের চিরশান্তির জায়গা হয়ে উঠল এই গোরস্থান। উইলিয়াম জোন্স থেকে ডিরোজিও সকলেই জায়গা পেয়েছেন এখানে। ১৭৯০ সালে এখানে কবর দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হলেও, ১৮৩১-এ ফের কবর দেওয়া হয়েছে। ডিরোজিও মারা যাওয়ার পর তাঁকে সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রিতেই সমাহিত করা হয়েছিল।
শেক্সপিয়রের কাকা ম্যাথিউয়ের ছেলে ছিলেন টমাস। টমাস শেক্সপিয়রের নাতির নাতি ছিলেন জন শেক্সপিয়র। জনের জন্ম ১৭৪৯ সালে। ওয়ারেন হেস্টিংসের বেশ খাতিরের লোক ছিলেন জন। কোম্পানির রাইটার হিসেবে এদেশে কাজ করতে করতে ১৭৭৮ সালে ঢাকায় কোম্পানির প্রতিনিধি নিযুক্ত হন। বেশ টাকা পয়সা কামিয়ে জন কিন্তু রিচম্যান হয়ে উঠেছিলেন।
জন শেক্সপিয়রের সমসাময়িক ছিলেন উইলিয়ম ম্যাকপিস থ্যাকারে। তিনিও কোম্পানির কল্যাণে বেশ টাকা কড়ি করেছিলেন।
১৮০৩ সালের মার্চ মাসে জন সেন্ট জন’স চার্চে শেক্সপিয়রের ছেলে জন ট্যালবট শেক্সপিয়রের সঙ্গে উইলিয়াম ম্যাকপিস থ্যাকারে সিনিয়রের মেয়ে এমিলি থ্যাকারের বিয়ে হয়েছিল। জন ট্যালবট ছিলেন বীরভূমের অ্যাসিস্ট্যান্ট কালেক্টর। ট্যালবট ও এমিলি পুত্র-কন্যা মিলিয়ে ন’টি সন্তানের জন্ম দেন। সাহিত্যের সঙ্গে এই পরিবারের সমাপতনের কথা ভাবুন, এই এমিলিই হলেন সাহিত্যিক উইলিয়াম ম্যাকপিস থ্যাকারে জুনিয়রের পিসি। এমিলির ভাই রিচমন্ড থ্যাকারে এবং অ্যানি বেচারের ছেলে জুনিয়র থ্যাকার। রিচমন্ড আবার ২৪ পরগনার কালেক্টর ছিলেন।
১৮২৪ সালে কলকাতায় কলেরা আক্রান্ত হয়ে ৪৪ বছর বয়সে এমিলির মৃত্যু হয়। সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রিতেই তাকে কবর দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, জন ট্যালবট মারা যান ১৮২৫ সালে। জাহাজে মারা যাওয়ার জলেই পঞ্চভূতে বিলীন হন জন ট্যালবট। এমিলির কবরের পাশেই জন ট্যালবটের স্মারক স্থাপন করা হয়। তাহলে বিষয়টা দাঁড়াল, শেক্সপিয়রের পরিবারের ছেলে ও ছেলের বউয়ের সমাধি রয়েছে তিলোত্তমায়।
ভাষ্য পাঠ: মধুরিমা রায়
সম্পাদনা: মোঃ রবিউল ইসলাম
তথ্য গবেষণা: সৌভিক রাজ