কেওড়াতলায় কালী পূজার সময় শ্মশান চিতা খালি যায় না! কেন জানেন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: শতাধিক বছরের প্রাচীন কেওড়াতলা মহাশ্মশানের কালী। কেওড়াতলা মহাশ্মশান আদি গঙ্গার তীরে অবস্থিত। আগে শ্মশান চত্ত্বরে প্রচুর ক্যাওড়াগাছ ছিল। সেখান থেকেই এই নামকরণ। যদিও শ্মশানের চেহারা বর্তমানে সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। কাঠের বদলে এসে গেছে বৈদ্যুতিক চুল্লি।
জনশ্রুতি, বহু আগে এই শ্মশানের মধ্যে গভীর রাত্রে তন্ত্র সাধনায় বসতেন দুই সাধক ব্রাহ্মণ। এঁরা হলেন চন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য ও মতিলাল ভট্টাচার্য। একদিন এক অমাবস্যার রাতে ভিনদেশী এক কাপালিক (তান্ত্রিক সন্ন্যাসী) ওই শ্মশান চত্ত্বরে এসে হাজির হলেন। তাঁর হাতে ছিল লৌহনির্মিত ছোট্ট একটি কালীমূর্তি। সাধক ব্রাহ্মণ দুজনের সঙ্গে কাপালিকের পরিচয় হল। তিনি বললেন, “আজকের এই রাত্রির লগ্ন মাতৃপূজার শুভক্ষণ। এখানে আমি দেবীর আরাধনা করতে চাই। আপনারা আমার সাথে সহযোগিতা করুন।” সাধক দু’জন কাপালিকের কথায় সম্মত হয়ে এগিয়ে এলেন। আশপাশের বসতি থেকে পূজার উপকরণ জোগাড় হল। ভোররাত পর্যন্ত চলল মাতৃ আরাধনা। লৌহময়ী দেবী কালিকার পূজা হল তন্ত্রশাস্ত্র মতে।
কথিত আছে যে, উনিশ শতকের সাতের দশকে এভাবেই কেওড়াতলা শ্মশানকালী প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। উল্লেখ্য, সেই রাতেই পূজান্তে কাপালিক তাঁর নিজের গম্ভব্য পথে চলে যান। তখন থেকেই আজ পর্যন্ত এখানে শ্মশান কালীমার নিয়ম-নীতি মেনেই পূজা হয়ে আসছে। ১৯২৪ সাল থেকে এই পূজা সার্বজনীন পূজা রূপে কমিটি দ্বারা পরিচালিত হতে শুরু করে।
মা কালী এখানে স্নিগ্ধা করুণাময়ী রূপে বিরাজমানা। দেবী এখানে বরদা। দেবী বিগ্রহ উচ্চতায় ১৬ ফুট। এখানে মাতৃমূর্তি হাস্যময়ী-লোলজিহ্বা নয়, অসুরমুণ্ডমালিনী নয়। এখানে মুণ্ডমালার তাৎপর্য হল, কোনটি জ্ঞানের প্রতীক, কোনটি ত্যাগের, কোনটি বৈরাগ্যের, কোনটি ভক্তি, আবার কোনটি বা ভালোবাসার প্রতীক। এখানে দেবী দ্বিভুজা। তাঁর দক্ষিণ হস্তে নৈবেদ্যরূপী মাংস, অন্যহাতে “কারণ”। “কারণ” মানে মদ্য বা মদ। ভক্তরা মানত করে, যে মদ্য বা মদ (বিলাতি মদ বা দেশি মদ) দেবীর চরণে নিবেদন করে তার থেকে সামান্য অংশ নিয়ে পূজারি দেবীর হাতের পাত্রে রাখেন। দেবীর পূজায় বলিদান হয়। বেশিরভাগ “মানসিক” করা ছাগ (পাঁঠা) বলি হয়। এখানকার শ্মশান ডোমেরা ছাগ বলির পর অন্তত দু’টি ছাগমুণ্ড পেয়ে থাকে। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস কেওড়াতলা মহাশ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী
শ্মশানকালী অত্যন্ত জাগ্রতা। তাই কালীপূজার সময় শত মানুষ ভক্তিবিনম্রচিত্তে এখানে সমবেত হয়ে দেবীর চরণে মনের কামনা-বাসনা নিবেদন করে। শোনা যায় দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে কারও কঠিন রোগ থেকে মুক্তিলাভ ঘটেছে, আবার কারও কারও মনস্কামনা পূর্ণ হয়েছে এবং হচ্ছে। জনশ্রুতি আছে যে, এখানে মায়ের পূজার সময় শ্মশান চিতা খালি যায় না। কোনওবছর এর অন্যথা হয়নি। একদিকে শ্মশানকালীর পুজো চলবে, অন্যদিকে হবে শবদাহ। ভোরবেলায় দেবীর ঘট বিসর্জন দিয়ে পুজোর সমাপ্তি হবার আগে চিতা একবার জ্বলবেই জ্বলবে। এইরকম বিশ্বাস মানুষের মনে গাঁথা।