ডুয়েল অ্যাভিনিউ? এখানেই হয়েছিল কলকাতার প্রথম ডুয়েল?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সত্যজিতের তারিণীখুড়োর গল্পের অন্যতম হচ্ছে লখনৌয়ের ডুয়েল, সেই গল্পে উঠে এসেছিল কলকাতায় হওয়া একটি ডুয়েলের ইতিহাস। হয়েছিল কোথায়?
মীরজাফর নিজের নামে আলিপুরের নামকরণ করেছিলেন। মীরজাফরের পুরো নাম জাফর আলি খান। যাই হোক, আলিপুরে রয়েছে আলিপুর চিড়িয়াখানা আর অন্যদিকে ন্যাশনল লাইব্রেরি। মধ্যিখানে এই কাজিয়ার জায়গা ডুয়েল অ্যাভিনিউ। এককালে বহু ডুয়েলের সাক্ষী থেকেছে কলকাতা। তবে সেরাটি এখানেই হয়েছিল। সে কথায় আসি, তবে তার আগে কিছু কথা।
আলিপুরের বেলভিডিয়ার বাগান বাড়িটিই এখন ন্যাশনল লাইব্রেরি। এবাড়ির মালিকানা নিয়ে দু-পিস গপ্পো প্রচলিত। একদল বলেন, বেলভিডিয়ার মালিক ছিলেন মীরজাফর। তিনিই ওয়ারেন হেস্টিংসকে এই বাগান বাড়ি উপহার দিয়েছিলেন। আবার অন্য একটি তত্ত্ব খাড়া করা হয় ঔরঙ্গজেবের নাতি বাংলা-বিহার-ওড়িশার সুবেদার আজিম খান নাকি এই বাগানবাড়ি বানিয়েছিলেন। পরে সে বাড়ি ভারতের গভর্নর জেনারেল হেস্টিংসের হাতে আসে। বহু হাতে ঘুরে আজকের পরিচিতি পেয়েছে বেলভিডিয়ার বাগান বাড়ি।
১৮৩৬ নাগাদ কলকাতায় তৈরি হয়েছিল ‘ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরি’। এর প্রায় সত্তর বছর পর তৈরি হয় ‘ইম্পেরিয়াল লাইব্রেরি’। কিন্তু এসব জায়গায় ঢোকার ভিসা ছিল না আমজনতার কাছে, লর্ড কার্জন দুই লাইব্রেরিকে মিলিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘দ্যি ইম্পেরিয়াল লাইব্রেরি’। ১৯৪৮ স্থায়ী ঠিকানা পায় এই লাইব্রেরি, বেলভিডিয়ার হাউসেই তৈরি হয় বইয়ের সাম্রাজ্য। নাম হয় দ্য ন্যাশনাল লাইব্রেরি।
বইয়ের এই পীঠস্থান সাক্ষী থেকেছে লড়াইয়ের। লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিলেন, ওয়ারেন হেস্টিংস এবং ফিলিপ ফ্রান্সিস। বলা হয়,
বেলভিডিয়ার কোনও একটি গাছের নীচে হয়েছিল ডুয়েল। ওয়ারেন হেস্টিংস এবং স্যার ফিলিপ ফ্রান্সিসের সেই ঐতিহাসিক ডুয়েল।
হেস্টিংস তখন ভারতে রীতিমতো রাজত্ব করছেন, ওদিকে হেস্টিংসের মাথার উপর বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল জনা চারেক লোকের কাউন্সিল। তাদের সঙ্গে হেস্টিংসের পটত না একেবারেই কিন্তু ইংল্যান্ডের কোর্ট অফ ডিরেক্টরেটের নির্দেশ শিরোধার্য। যেকোনও ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে হেস্টিংসকে কাউন্সিলের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষা করতে হত। অনেক সময়ই তা মিলত না।
কাউন্সিলের এক সদস্য ছিলেন স্যার ফিলিপ ফ্রান্সিস, যার সঙ্গে হেস্টিংসের সম্পর্ক একেবারে আদায় কাঁচকলায়। ফ্রান্সিস যখন প্রথম কলকাতায় আসছেন, তখন ২১ তোপের সেলামি তার জোটেনি। ২১-এর বদলে মিলেছিল ১৭ তোপের সেলামি। তখন থেকে হেস্টিংস- ফ্রান্সিসের বুনো ওল বাঘা তেঁতুল সম্পর্কের সূত্রপাত।
১৭৮০ সালের আগস্ট মাসে কাউন্সিলের এক মিটিংয়ে ফিলিপ ফ্রান্সিসের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পড়েন হেস্টিংস। যা নয় তাই করে বলেন হেস্টিংস, ব্যাপারটা হজম করতে পারেননি ফ্রান্সিস। জবাব দিতে ছুড়ে দেন চ্যালেঞ্জ। হেস্টিংসকে ডুয়েল লড়ার ডাক দেন। জায়গা ঠিক হল, দিন ঠিক হল ৭ আগস্ট। কোনও কোনও গবেষক বলেছেন, তারিখটি ছিল ১৭ আগস্ট। নিয়ম মেনে দুজনেই নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়ালেই, গুলি চালালেন। ফিলিপ ফ্রান্সিস কিস্যু করতে পারলেন। কিন্তু হেস্টিংসের গুলি গিয়ে লাগল ফ্রান্সিসের পায়ে। ফ্রান্সিসের চিকিৎসা করা হয়েছিল বেলভিডিয়ার হাউসে। বলা যায়, এটাই ছিল কলকাতার প্রথম ডুয়েল। এর পরে অবশ্য আরও অনেক ডুয়েল হয়েছে তিলোত্তমায়। কোম্পানি আবার কড়া হাতে তা দমন করার চেষ্টাও করেছে।
ভাষ্য পাঠ: মধুরিমা রায়
সম্পাদনা: মোঃ রবিউল ইসলাম
তথ্য গবেষণা: সৌভিক রাজ