কানে কানে কলকাতা কানেকশন বিভাগে ফিরে যান

সেকালের কলকাতায় তৈরি হয়েছিল কাইট ক্লাব, জমে উঠত ঘুড়ির লড়াই

September 24, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: পেটকাটি, চাঁদিয়াল, শতরঞ্জি, মুখপোড়া, ঘয়লা, লাটুয়াল, ময়ুরপঙ্খী, বামুনটেক্কা, চৌরঙ্গী, জিবিয়াল, চাপরাজ, সতেরো ইঞ্চি, কানকাটা, হ্যারিকেন, বাক্সঘুড়ি, পট্টীকম তাওয়া, আদ্যা বা দ্যোতে, দেড় তেল, শোয়া তেল, এক তেল, পান্থা আড়া, কালিদা, ফতিঙ্গাঘুড়ি, লন্ঠনঘুড়ি, চিলাঘুড়ি বা ডাঁসঘুড়ি, চিঠিঘুড়ি-কত যে ঘুড়ি, নাম বলে শেষ করা যাবে না!

বাঙালিকে ঘুড়ি চিনিয়েছিলেন নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ। লখনৌয়ের রাজত্ব খুইয়ে চিরতরে কলকাতার এলেন নবাব। মেটিয়াবুরুজে তৈরি করলেন এক টুকরো লখনৌ। নবাবি আওয়াধি খানার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতায় ঘুড়ির অনুপ্রবেশ ঘটানোর কারিগর ওয়াজিদ আলি। কলকাতার আকাশে ব্যাপকভাবে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রচলন হয়েছিল ওয়াজেদ আলির হাত ধরেই। সে’সময় কানকাওয়া, চংগ, তুলকল, গুডডি ইত্যাদি ঘুড়ির চল ছিল। পেশাদার ঘুড়ি উড়িয়েও ছিল সেই আমলে। ঘুড়ি ওড়ানোর ওপর বাজি ধরা হত, ঘুড়িয়ালরা এসব পুরস্কার পেত।

ওয়াজিদ আলিকে দেখে কলকাতার বাবু সম্প্রদায় ঘুড়িকে আপন করে নেয়। বাবুদের কাজ বলতে, বিলাস-বৈভবে নিত্যনতুন বাবুয়ানি করে জীবন অতিবাহিত করা। ঘুড়ির স্বাদ যখন কলকাতা পেল, তখন বাবু সম্প্রদায় বুঝলো বাবুয়ানি দেখানোর নয়া উপায় পাওয়া গেল। ১৮৫০-১৮৭০-র মধ্যে বাবু কালচারে জাঁকিয়ে বসে ঘুড়িবিলাস। হয়ে ওঠে প্রতিপত্তি দেখানোর হাতিয়ার। বাবুরা ঘুড়ির লড়াইয়ের প্রচলন ঘটায়। জানা যায়, বাবুদের ঘুড়িতে আটকানো থাকত দশ বা একশো টাকার নোট। কখনও কখনও টাকা দিয়ে ঘুড়ির লেজ বানানো হত। শিবনাথ শাস্ত্রীর লেখাতেও এই বাবুয়ানির উল্লেখ রয়েছে। বাবুরা আবার মাঞ্জাহীন সুতো দিয়ে ঘুড়ি ওড়াতেন। পাছে তাঁদের হাত কেটে যায়।

বাবুদের থেকে ধীরে ধীরে জমিদারদের হাত ধরে গোটা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে ঘুড়ির লড়াই। আজ তা আম বাঙালির বিনোদন হয়ে উঠেছে। গত শতকে কলকাতাজুড়ে তৈরি হয়েছিল অজস্র ঘুড়ি ক্লাব। ১৯৫৪ সালে গড়ে উঠেছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল কাইট অ্যাসোসিয়েশন। ১৯৫৮ থেকে তার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে শুরু করে। প্রথম বছর ১৫টি দল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল। জাকারিয়া, ধর্মতলা, সেন্ট্রাল, এন্টালি, বৌবাজার ইত্যাদি জায়গায় কাইট ক্লাব গড়ে উঠেছিল। পরে তৈরি হয় কলকাতায় ক্যালকাটা কাইট অ্যাসোসিয়েশন। তারা আবার জাতীয় স্তরে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা আয়োজন করত। কাইট ক্লাবগুলোর সঙ্গে সব ওস্তাদ ঘুড়িয়াল খেলোয়াড়রা যুক্ত ছিলেন। ঘুড়িয়ালদের মধ্যে শ্রীশচন্দ্র দত্ত, শৈলেন চট্টোপাধ্যায়, মহম্মদ কচি, জহিরুল হাসান সামসি, নাসির আহমেদ, তিনকড়ি ওস্তাদ প্রমুখদের খ্যাতি ছিল। অনুপ নাগ, প্রবোধদের মতো তদানিন্তন কলকাতার নামকরা ব্যবসায়ীরাও ঘুড়ি খেলায় নামতেন।

ভাষ্য পাঠ: মধুরিমা রায়
সম্পাদনা: মোঃ রবিউল ইসলাম
তথ্য গবেষণা: সৌভিক রাজ

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kane Kane Kolkata Connection, #kites club, #kite club, #Kolkata

আরো দেখুন