পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

হরিপালের শ্রীপতিপুরের কালীর গাত্রবর্ণ সবুজ, বাঁশির সুরে তুষ্ট করা হয় দেবীকে

November 10, 2023 | 3 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ধ্যানমন্ত্রে দেবীর কালীর নির্দিষ্ট রূপের বর্ণনা মেলে। সেখানে তিনি, করালবদনা, মুক্তকেশী, চতুর্ভুজা, মুণ্ডমালা বিভূষিতা। এই দেবীর রূপও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে কালী মূর্তির গাত্রবর্ণ হিসেবে আমরা যে দুটি রং কল্পনা করে থাকি, এই দেবীর গাত্রবর্ণ একেবারেই তা নয়। অর্থাৎ এই দেবী কালো কিংবা নীল বর্ণের নয়। দূর্বার ন্যায় সবুজ বর্ণের।

হুগলি জেলার সুপ্রাচীন বর্ধিষ্ণু গ্রাম হরিপাল। এই অঞ্চলের একটি ছোট জনপদ শ্রীপতিপুর। এই গ্রামের অধিকারী পরিবারেই দীর্ঘদিন যাবৎ পূজিতা মা সবুজ-কালী। যদিও দেবীর এমন রূপের নেপথ্যে অবশ্য এক অলৌকিক কাহিনিই রয়েছে।

কুলীন বৈষ্ণব বাড়ির সন্তান ছিলেন বটকৃষ্ণ অধিকারী। সংসারের প্রতি মন ছিল না তাঁর। এক সাধকের কাছে শ্মশানে গুরুদীক্ষা নিয়েছিলেন তিনি। ছেলের সংসারে মন নেই বুঝে তড়িঘড়ি ছেলের বিয়ে দিয়ে দেন তঁর বাবা-মা। কিন্তু তাঁর মন তো পড়ে রয়েছে মা কালীর চরণে। গোপনে মা কালীর ঘট প্রতিষ্ঠা করে পুজো করতেন তিনি। প্রতিমা এনে পুজো করার চেষ্টা করলে পরিবার ও বৈষ্ণবপাড়ার সকলে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। বলেন, আমরা বৈষ্ণব। আমরা কৃষ্ণের আরাধনা করি, কালী সাধনা আমাদের জন্য নয়। বিষন্ন মনে সেদিন শুয়ে পড়েছিলেন তিনি। স্বপ্নে দেখতে পান দেবী বলছেন, আমিই কৃষ্ণ, আমিই কালী। কৃষ্ণ আর কালীর দুই মূর্তি একত্রিত হয়ে কচি দুর্বাঘাসের সবুজ রঙের কালী প্রতিমা দেখতে পান তিনি। সবাইকে তিনি বোঝান, রটন্তী লগ্নে কৃষ্ণই কালী রূপে দর্শন দিয়েছেন। এরপর দুর্বা ঘাসের রঙে তৈরি হল দেবীমূর্তি। ১৩৫৭ বঙ্গাব্দের মাঘ মাসে রটন্তী কালীপুজোর দিন মূল পুজো শুরু হয় এখানে। এছাড়াও কার্তিক মাসের অমাবস্যায়, জন্মাষ্টমীতে বিশেষ পুজো হয়।

দেবীর পুজো হয় গুহ্য তন্ত্রমতে। দেবী পূজার আসন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে পঞ্চ মুণ্ডির আসন। তবে বৈষ্ণব বাড়িতে বলিপ্রথার চল নেই। এখানে দেবী কালীও পরম বৈষ্ণব। বিগ্রহের কপালে বৈষ্ণব তিলক তার প্রমাণ দেয়। যদিও এই দেবীকে আমিষ ভোগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। দেবীর প্রিয় ভোগ ইলিশ মাছের পদ। প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময় দেবীকে ইলিশ মাছের ভোগ দেওয়া হয়। এছাড়া নিত্যপুজোতেও আমিষ ভোগ নিবেদনের নিয়ম রয়েছে। দেবীর পুজো ফুল জুঁই। স্বয়ং বামদেবের সঙ্গেও এই পরিবারের যোগ রয়েছে। গুরু সূত্রে সেই সৌভাগ্য হয়েছিল মন্দিরের প্রধান সেবায়েত কালীপদর। মায়ের মন্দিরে বামদেবের ব্যবহৃত কিছু সামগ্রী এখনও রয়েছে।

তবে এই দেবীর পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য বাঁশি। পুরনো রীতি মেনে এখনও মাকে বাঁশি বাজিয়ে শোনান মন্দিরের সেবায়েতরা। বটকৃষ্ণ অধিকারীর ছেলে কালীপদ অধিকারী বর্তমান পূজারী। তিনি বলেন, আমার বাবা দেবীকে তুষ্ট করতে বাঁশি বাজাতেন। আমিও বাবার মতো বাঁশি বাজাতাম। বর্তমানে আমার ছেলে এই দায়িত্ব পালন করে। কার্তিক অমাবস্যার পুজোতে রাত ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বাঁশি বাজানো হয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kali Temple, #Haripal, #Kali Puja 2023, #Sripatipur

আরো দেখুন