শুম্ভ-নিশুম্ভ বধের মধ্যে দিয়েই জন্ম হয়েছিল দেবী কালিকা?
দেবীমাহাত্ম্যম্-এ শুম্ভ-নিশুম্ভ বধের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। শুম্ভ ও নিশুম্ভ ছিল দুই ভাই। শুম্ভ এবং নিশুম্ভ, এই অসুর দ্বয়ের অত্যাচারে পৃথিবী তখন কাঁপছে। ভয়ঙ্কর দুই অসুরের অত্যাচারে দেবতারাও স্বর্গ ত্যাগ করেছেন। নিষ্কৃতি পেতে দেবরাজ ইন্দ্র দেবী পার্বতীর শরণাপন্ন হন। দেবী পার্বতী শুম্ভ নিশুম্ভ নিধনের জন্য নিজ শরীরের কোষ থেকে অন্য এক ভয়ঙ্করী দেবী সৃষ্টি করেন যা দেবী কালীর আদি রূপ। চণ্ড ও মুণ্ডকে বধের সময় দেবীর তৃতীয় নয়ন থেকে উৎপন্ন হয়েছিলেন কালী।
শুম্ভ, নিশুম্ভ; স্বর্গ দখল করলে দেবগণ হিমালয়ে গিয়ে বৈষ্ণবী শক্তি মহাদেবীকে স্তব করতে লাগলেন। যা অপরাজিতস্তব নামে পরিচিত। এমন সময় সেখানে পার্বতী গঙ্গাস্নানে গিয়েছিলেন। আদ্যাদেবী ইন্দ্রাদি দেবতার স্তবে প্রবুদ্ধা হয়ে তাঁর দেহকোষ থেকে নির্গত হলেন। এই দেবী কৌশিকী নামে পরিচিত। তিনিই শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধ করলেন।
শুম্ভ-নিশুম্ভের চর চণ্ড ও মুণ্ড দেবীকে দেখতে পেয়েই, প্রভুদ্বয়কে বললেন এমন স্ত্রীলোক আপনাদেরই ভোগ্যা হবার যোগ্য। চণ্ড-মুণ্ডের কথায় শুম্ভ-নিশুম্ভ মহাসুর সুগ্রীবকে দেবীর কাছে পাঠালেন। সুগ্রীব দেবীর কাছে শুম্ভ-নিশুম্ভের প্রস্তাব জানালেন। দেবী হেসে বললেন, “ঠিকই বলেছ। এই বিশ্বে শুম্ভ-নিশুম্ভের মতো বীর কে আছে? তবে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, যে আমাকে যুদ্ধে পরাভূত করতে পারবে, কেবলমাত্র তাকেই আমি বিবাহ করব। এখন আমি প্রতিজ্ঞা লঙ্ঘন করি কি করে! তুমি বরং মহাসুর শুম্ভ বা নিশুম্ভকে বলো, তাঁরা যেন এখানে এসে আমাকে পরাস্ত করে শীঘ্র আমার পাণিগ্রহণ করেন।”
দেবীর কথায় ক্রোধান্বিত হয়ে অসুররাজ শুম্ভ তাঁকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে দৈত্যসেনাপতি ধূম্রলোচনকে পাঠালেন। ধূম্রলোচনের সঙ্গে দেবীর ভয়ানক যুদ্ধ হল। যুদ্ধে ধূম্রলোচন পরাজিত ও নিহত হল। এরপর, শুম্ভ চণ্ড-মুণ্ড ও অন্যান্য অসুরসৈন্যদের প্রেরণ করল। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য দেবী নিজ দেহ থেকে দেবী কালীর সৃষ্টি করলেন। চামুণ্ডা যুদ্ধের পর চণ্ড-মুণ্ডকে বধ করলেন।
চণ্ড-মুণ্ডের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে সব অসুরদের পাঠানো হল দেবীর বিরুদ্ধে। তখন প্রত্যেক দেবতা শক্তি রূপ ধারণ করে রণক্ষেত্রে উপস্থিত হলেন। দেবীরা হলেন ব্রহ্মাণী, মাহেশ্বরী, কৌমারী, বৈষ্ণবী, বারাহী, নারসিংহী, ঐন্দ্রী প্রমুখ। এঁরা প্রচণ্ড যুদ্ধে দৈত্যসেনাদের পরাভূত ও নিহত করতে লাগলেন। রক্তবীজও পরাজিত হল। শুম্ভ নিশুম্ভকে যুদ্ধে পাঠালেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর দেবী দুর্গা নিশুম্ভকে বধ করলেন। সকল দেবী দুর্গার দেহে মিলিত হয়ে গেল। দেবীর সঙ্গে শুম্ভর ঘোর যুদ্ধ আরম্ভ হল। যুদ্ধান্তে দেবী শুম্ভকে বধ করলেন। দেবতারা পুনরায় স্বর্গের অধিকার ফিরে পেলেন।