পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

বাঙালির কার্তিক সৌম্যকান্তি, কিন্তু কোথায় দেখা মেলে সাহেব কার্তিকের?

November 17, 2023 | 2 min read

কোথায় দেখা মেলে সাহেব কার্তিকের?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: কাটোয়ার কার্তিক পুজো খুবই বিখ্যাত। বর্ধমানের এই প্রাচীন এলাকাতেই দেখা মিলবে ‘সাহেব কার্তিক’-র। ঠাকুরের অবয়ব খ্রিস্টান সাহেবের চেহারার আদলে গড়া। ১৮০৩ সালে শ্রীরামপুরে এলেন রেভারেন্ড জন চেম্বারলিন, সংসার পাতলেন কাটোয়ায়। কাটোয়ায় দেবরাজ ঘাটের কাছে নবাবি সরাইখানায় থাকতেন চেম্বারলিন। ভাগীরথীর দৌলতে কাটোয়া থেকে গোটা বাংলায় সহজেই যাতায়াত করা যেত।
 
বেশ কিছুটা জমি, দুটো পুকুর এবং একটি আম বাগান কিনে বাংলো বানালেন তিনি, গড়ে উঠল সাহেব বাগান। সন্তান প্রসব করতে গিয়ে কাটোয়ার সেই বাড়িতে মারা গেলেন জন চেম্বারলিনের স্ত্রী হানা চেম্বারলিন। হানাকে সাহেববাগানেই সমাধিস্থ করলেন সাহেব। জন চেম্বারলিনকে সাহায্য করতে কাটোয়ায় হাজির হন উইলিয়াম কেরির পুত্র কেরি দ্য জুনিয়র। প্রায় চল্লিশ বছরের বেশি সময় তিনি কাটোয়া শহরে কাটিয়েছিলেন। সাহেববাগানের কাশেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে তার সমাধি রয়েছে। কেরি জুনিয়রের জন্ম ইংল্যান্ডের মোলটোন শহরে, ১৮৮৭ সালে। শ্রীরামপুরে আসার পর থেকেই কেরির জীবনে খ্রিস্টধর্মের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে শুরু করে। ছাপাখানার ওয়ার্ড সাহেবই ছিলেন তাঁর আধ্যাত্মিক গুরু। ১৮০৩ সালের এপ্রিল মাসে বাবার কাছেই খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়ে কেরি দ্য জুনিয়র মিশনারি জীবন শুরু করেন। 
 
১৮১১ সালে রেভারেন্ড জন চেম্বারলিনকে আগ্রায় বদলি করা হয়। সেই বছরই কাটোয়া মিশনারি স্টেশনের দায়িত্ব পান কেরি দ্য জুনিয়র। তিনি দধিয়া বৈরাগ্যতলার মেলা, কেঁদুলির মেলা এবং অগ্রদ্বীপের গোপীনাথের মেলায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষকে বাংলায় যিশুর কথা শোনাতেন। গ্রামে গ্রামে বিনামূল্যে শ্রীরামপুর প্রেসের ছাপা খ্রিস্টধর্মীয় বই বিলি করতেন। কাটোয়া মিশনারি স্টেশনের উন্নতির জন্যে নীলচাষ, বস্ত্রশিল্পের ব্যবসা এমনকি কফিচাষও শুরু করেছিলেন। তারপর শুরু করলেন সংস্কারের কাজ, কাটোয়ায় সতীদাহ, কুষ্ঠরুগী পুড়িয়ে মারা, গঙ্গায় প্রথম সন্তান বিসর্জন ইত্যাদির বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়িয়েছিলন। অন্তর্জলির উদ্দেশ্যে গঙ্গার পাশে ফেলে রেখে যাওয়া একাধিক বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাকে তিনি তুলে এনে সেবা-শুশ্রুষা করে সুস্থ করে তুলেছিলেন। একটি হাসপাতালও খোলেন তিনি, বালিকা বিদ্যালয় চালু করেছিলেন। কাটোয়ার আশপাশে বিভিন্ন গ্রামে অনেকগুলি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সাহেব।
 
১৮৫২-তে কলকাতায় আত্মীয়দের কাছে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন, সেই অসুস্থ অবস্থাতে কাটোয়া ফেরেন, কিন্তু তার শরীর আর সারেনি। ১৮৫৩ সালে ৩রা ফেব্রুয়ারি রাত ১০টায় কাটোয়ার বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কেরি দ্য জুনিয়র। সাহেবকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গোটা কাটোয়া জড়ো হয়েছিল সেদিন। আজও প্রতি বছর সাহেব কার্তিক পুজোর দ্বারা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানায় কাটোয়া।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kartik Pujo, #katwa, #kartik pujo 2023, #kartik puja 2023, #Saheb Kartik, #Burdwan

আরো দেখুন