কলকাতার থিয়েটার রোড থেকে চলতো বাংলাদেশ সরকার?
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিলে ওপার বাংলার মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে এই বৈদ্যনাথতলার নাম বদলে মুজিবনগর হয়ে যায়। তদানিন্তন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী কার্যালয় ছিল কলকাতার থিয়েটার রোডের ৮ নম্বর বাড়িতে। এই বাড়িতে বসেই পরিচালিত হয়েছিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের নানান কার্যকলাপ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন, কলকাতার মাধ্যমেই ভারতের সামরিক বাহিনী ও বিদেশ দপ্তর, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখত। মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের বহু বুদ্ধিজীবী, লেখক -শিল্পীরা কয়েকমাসের জন্যে কলকাতাতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে ভারত সরকারই ভবনটি দিয়েছিল।
বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামী অরবিন্দ ঘোষের, পরবর্তীতে যিনি হয়ে উঠেছিলেন ঋষি অরবিন্দ। এটি ছিল তাঁর মাতুলালয়, এ বাড়িতেই তিনি জন্মেছিলেন। এখন ওই ৮ নম্বর বাড়িটির নাম অরবিন্দ ভবন। বাড়িটি এখনও রয়েছে, তবে সেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক পর্যন্ত নেই।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ওই বাড়িতে নিয়মিত খবর সংগ্রহ করতে যেতেন আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত। তাঁর বিবরণ থেকেই জানা যায়, ‘বাড়িটার চারদিকে বিএসএফ প্রহরা থাকত, আর ভেতরে থাকত প্রবাসী সরকারের নিজস্ব প্রহরীরা। বাড়ির ঠিক উল্টোদিকে ছিল নিউ কেনিলওয়ার্থ হোটেল। ওই হোটেলে পাকিস্তানের চর এসে ওঠে। ওপর থেকে বাড়িটির ছবি নিয়ে তা পাকিস্তানের সব খবরের কাগজে প্রকাশ করা হয়। বলা হয়েছিল কোথাও কোনও মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে না। কিছু মানুষ কলকাতার একটি বাড়িতে বসে ভারতের রক্ষীদের প্রহরায় এ’সব মিথ্যা রটাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের নামে।’ তাঁর বর্ণনা থেকে জানা যায়, ‘এই ভবনেই ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, সেনা প্রধান কর্ণেল ওসমানি, অর্থমন্ত্রী মনসুর আলিরা বসতেন। তাজউদ্দিন আহমেদের পরিবার থাকত অন্য মন্ত্রীদের পরিবারের সঙ্গে এন্টালি অঞ্চলে। কিন্তু আহমেদ কোনওদিন সেখানে যাননি। ওই নয় মাস তিনি বোধহয় ঘুমোননি – এত পরিশ্রম করতেন। শুধু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কামরুজ্জামান এই বাড়িতে বসতেন না। তার আলাদা একটি দপ্তর ছিল কাছেই।’
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পরে ১৯৭২ সালে ভারত সরকার এই বাড়িটিকে শ্রী অরবিন্দ আশ্রমের হাতে অর্পণ করে।
পরের বছর ১৯৭৩ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে এই বাড়িটি শ্রী অরবিন্দ ভবন হিসেবে পথচলা শুরু করে।
ভাষ্য পাঠ: মধুরিমা রায়
সম্পাদনা: মোঃ রবিউল ইসলাম
তথ্য গবেষণা: সৌভিক রাজ