বিপদ থেকে গ্রামকে বছরের পর বছর রক্ষা করে চলেছেন পঞ্চানন্দ দেবতা
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: পঞ্চানন। যার অর্থ পাঁচটি আনন অর্থাৎ মুখ বিশিষ্ট দেবতা। তাই পঞ্চানন যে শিব তা সবারই জানা। আর শিব যে পৌরাণিক দেবতা তাও সবার জানা। কিন্তু সুন্দরবন অঞ্চল-সহ প্রায় সারা বাংলা জুড়ে অসংখ্য গ্রাম ও শহরে যে দেবতার ভক্তের সংখ্যা সর্বাধিক তা হল সম্ভবত পঞ্চানন বা পঞ্চানন্দ। আর এই দেবতা কিন্তু পৌরাণিক নন, লৌকিক। তবে তিনি পুরোপুরি আঞ্চলিক নন। বাংলার প্রায় সমস্ত জেলায় প্রচুর পঞ্চানন্দের মন্দির রয়েছে। ধর্মঠাকুর ছাড়া আর কোনও লৌকিক দেবতা বাঙালির কাছে এত সম্মান পান না।
শ্রীরামপুর এবং সিঙ্গুর সীমানায় ঝাঁকারি গ্রামে পূজিত হন বাংলার এই লৌকিক দেবতা পঞ্চানন্দ। মূলত গ্রাম ও শিশুর রক্ষাকর্তা তিনি। তবে সন্তানদাতা, শস্যদেবতা হিসেবেও বাঙালি হিন্দুসমাজে এই পুজোর প্রচলন আছে। ১৮৬৮ সালে ঝাঁকারি গ্রামে পঞ্চানন্দ দেবতার মন্দির তৈরি করা হয়। গ্রামটি শ্রীরামপুর কিংবা সিঙ্গুরের সীমানায়। দূরদূরান্তের অগণিত ভক্তপ্রাণ মানুষ মকর সংক্রান্তিতে সেখানে পুজো দিতে ভিড় জমান।
প্রাচীন এই পুজোয় ৪০-৫০ কুইন্টাল বাতাসা ছড়ানো হয়। ভক্তজনের বিশ্বাস, পঞ্চানন্দ দেবতার কাছে প্রার্থনা করলে সকলের মনস্কামনা পূরণ হয়। সেজন্য মানুষের ওজনে বাতাসা ভোগ দিতে কোনও কোনও ব্যক্তিকে চাপানো হয় দাঁড়িপাল্লায়!
রক্তবর্ণের পঞ্চানন্দ—শিবেরই এক বিশেষ রূপ। বাহন তাঁর ষাঁড়। পঞ্চানন্দের গায়ের রং লাল। তিনি রুদ্ররূপী। বেশ বড় গোলাকার ও রক্তাভ তিনটি চোখ থেকে ক্রোধ ঠিকরে বেরয় তাঁর। পঞ্চানন্দের প্রশস্ত ও টিকালো কালো নাক। দাড়ি নেই, গোঁফ কান পর্যন্ত বিস্তৃত। মাথায় পিঙ্গলবর্ণের জটা, চূড়া করে বাঁধা সেটি। কানে ধুতুরা ফুল। ঊর্ধাঙ্গ অনাবৃত, বাঘছালে ঢাকা নিম্নাঙ্গ। তবে গলায় ও হাতে বেশ বড় পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষমালা। দেবতার এক হাতে খাঁড়া এবং অন্য হাতে বিনষ্টকারী অপদেবতার কাটা মুণ্ড। পায়ে খড়ম এবং মাথায় বা দেহের উপর সাপ দুলছে। পঞ্চানন্দের অনুচর হলেন লৌকিক দেবতা জরাসুর এবং ধনুষ্টংকার নামে দুই অপদেবতা। এই পুজো উপলক্ষ্যে গ্রামে কয়েকদিন ধরে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বসে মেলা।