বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

 রবি ঠাকুরের সম্প্রীতির বাংলায় গান্ধীজির মাটির টান ছিল কতটা? 

January 30, 2024 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধী দিল্লীতে ক্ষমতা হস্তান্তরের অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন কারণ তিনি দেশভাগের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা চাননি। ওই দিন কলকাতার মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় তিনি ছিলেন যেখানে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ তাঁর কাছে এসেছিলেন তাঁর কথা শুনতে। গান্ধীজি ওই দিন উপোষ রেখেছিলেন এবং প্রার্থনায় লিপ্ত ছিলেন।

একসময় গান্ধীজি বলেছিলেন, আমি বাংলা ছাড়তে পারছি না এবং বাংলা আমায় যেতে দেবে না। ওনাকে পছন্দ না হলেও বাংলা ও বাঙালি ওনার প্রতি অনুগত ছিল। এই দ্বৈতসত্ত্বা বুঝতে গেলে ইতিহাস জানতে হবে। অনেক ছিন্নমূল বাঙালি যারা দেশছাড়া হয়েছিলেন তারা অনেকে গান্ধীজি কে দায়ী করেন এই অবস্থার জন্য। অন্য কারণটি হল, ১৯৩৮-৩৯ সালে যে ব্যবহার গান্ধীজি করেছিলেন সুভাষ বসুর প্রতি, বাংলার আবেগ সুভাষ বসুর প্রতি এই ব্যবহার বাঙালি মানেনি।

এই দুই অভিযোগ খতিয়ে দেখা দেখলে বোঝা যাবে যে প্রথমটি একটি প্রচলিত ধারণা মাত্র যার ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। একমাত্র ভারতীয় যিনি দেশভাগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি ছিলেন গান্ধীজি। তাই, এই অভিযোগটি খুব দুঃখের। সীমান্ত গান্ধী ছাড়া সমস্ত প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এই দেশভাগ মেনে নিয়েছিলেন। গান্ধী জানতেন তিনি একা আন্দোলন করতে পারবেন না, তাঁর উপযুক্ত নেতার প্রয়োজন আছে।

অসহযোগ আন্দোলন এবং আইন অমান্য আন্দোলনে যেসকল কংগ্রেস নেতা – জহরলাল নেহেরু, বল্লভভাই প্যাটেল, রাজেন্দ্র প্রসাদ, গোভিন্দ বুলভ পন্ত – তাঁর সঙ্গে আন্দোলন করেছিলেন, তাঁরাই এই দেশভাগের সমঝোতা মেনে নিয়েছিলেন। গান্ধীজি জানতেন তিনি কোণঠাসা হয়ে গেছেন। তিনি ১৯৪৭ সালে নিজেকে অপারগ বলে মেনে নিয়েছিলেন। ওনাকে দেশভাগের জন্য দায়ী করা সম্পূর্ণ ভুল।

সুভাষ বসু সংক্রান্ত অভিযোগটি দেখা যাক। এটা সত্যি যে গান্ধীজি চাননি সুভাষ বসু দ্বিতীয়বার কংগ্রেস সভাপতি হন। বসু ভোটে জিতেছিলেন এবং তাকে ওয়ার্কিং কমিটি গড়তে দেওয়া হয়নি। গান্ধীজি নিজের পছন্দের প্রার্থী পাট্টাভাই সিতারামাইয়াকে সভাপতি করতে চেয়েছিলেন। এমনকি তিনি জহরলাল নেহেরুর বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও বসুর সঙ্গে দেখা করতেও অস্বীকার করেন। এর ফলে সুভাষ বসু সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন ও কংগ্রেস ত্যাগ করে নিজের দল তৈরী করেন।

সব থেকে উল্লেখযোগ্য হল, গান্ধীজির জীবনের শেষের দিকে অনেকটা সময় কাটে বাংলায়। ১৯৪৭ সালে বাংলায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তিনি সময় কাটান। তিনি নোয়াখালি দাঙ্গার অঞ্চলে যান। তিনি ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে এক সশস্ত্র হিন্দুর সামনে যান এবং উভয় সম্প্রদায়ের মানুষকে অস্ত্র সমর্পণ করতে বলেন। ওনার জন্য দাঙ্গা কমে যায়।

শেষের দিকে গান্ধীজি বাংলা লেখা শিখছিলেন। তাঁর কাছে বাংলা ছিল এমন এক ভাষা যাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘একলা চলো’ লিখেছিলেন। এই গান তাঁকে শেষের দিকে প্রেরণা জুগিয়েছিলেন নোয়াখালিতে যাওয়ার জন্য।

এক মহান বাঙালি তথা ভারতীয় মনীষী গান্ধীজি সম্পর্কে লিখেছিলেন, “তিনি এক মহান রাজনৈতিক, সংগঠক, জননেতা, নৈতিক সংস্কারক, তিনি এক মহান ব্যক্তি কারণ তাঁর কোনও কাজ তাঁর মনুষ্যত্বকে আঘাত করেনি। বরং এসব তাঁকে আরও উদ্বুদ্ধ করেছে।”

লেখক আর কেউ নন, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। তিনি ছিলেন মহাত্মা। ওনার কাজের মাধ্যমেই বাংলা তথা ভারত ওনাকে মনে রাখবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Rabindranath Tagore, #Bengal, #Gandhi, #mahatmagandhi, #tagore

আরো দেখুন