বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

সরস্বতী পুজোর আগে কুল খাওয়া মানা, জানেন এর কারণ?

February 13, 2024 | 2 min read

সরস্বতী পুজো মানেই জুটবে কুল খাওয়ার লাইসেন্স। ছোটবেলায় কুল খাওয়ার জন্য সরস্বতী পুজো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত। জানুয়ারি মাসের শেষ বা ফ্রেব্রুয়ারি শুরুতে শুক্লপঞ্চমী তিথিতে শীতকে বিদায় জানিয়ে বসন্ত উৎযাপনে নেমে পড়ে বাঙালি। সরস্বতী পুজোর বাজারের টোপা, বিলাতি, নারকেল কুলরা জাঁকিয়ে রাজত্ব করে।

সামনেই সরস্বতী পুজো, উপোস করে অঞ্জলিতে ব্যস্ত থাকবে পড়ুয়ারা৷ আর তারপরই হবে কুল খাওয়া। ছোট থেকেই আমরা সব্বাই শুনে আসছি, সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই! ছোটদের সরস্বতী পুজোর আগে কুল খাওয়ার উপর বাড়ির বড়রা আদি অনন্ত কাল থেকেই নিষেধাজ্ঞা জারি করে আসছেন। কুল খেলে সরস্বতী ঠাকুর নাকি রাগ করবেন! যতই মেধাবী হোক না কেন, বাগদেবী রাগ করলে পরীক্ষায় পাশ করা বা ভাল ফল করা হয়ে উঠবে না। কিন্তু কেন এমন মন খারাপ করা নিয়মের অবতারণা হল? কবে থেকে, কীভাবে এই নিয়মের প্রচলন হল? এর নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ।

শীতের মরশুমের শেষদিকটা হল কুলের ফসল ওঠার সময়। বাংলা কৃষিপ্রধান অঞ্চল। যেকোনও ফসল উঠলেই তা প্রথমে দেবতার উদেশ্যে উৎসর্গ করার রেওয়াজ রয়েছে বাংলায়। যেমন নতুন ধান উঠলে অগ্রহায়ণ মাসে তা নিয়ে নবান্ন উৎসব পালিত হয়। শীতের ফল হল কুল। সরস্বতী পুজোর সময়েই কুল হয়। তাই প্রচলিত প্রথা মেনে এই ফলটিও প্রথমে ঈশ্বরের অর্ঘ্য হিসেবে নিবেদন করা হয়। তাই দেবতাকে নিবেদন করার আগে পর্যন্ত কুল খাওয়া হয় না।

এই লোকাচারের নেপথ্যে আরও একটি কারণ রয়েছে। বসন্ত শুরু হওয়ার সময় থেকে পেটের নানান রোগ, জ্বর, সর্দি-কাশি ইত্যাদির প্রকোপ বাড়ে। এই সময়েই কুলে পাক ধরে। কিন্তু তার আগে কাঁচা কুল খেলে পেট খারাপের সম্ভাবনা থাকে। কুল এমন জিনিস যে একটা দুটো খাওয়া যায় না, একসঙ্গে অনেকগুলো খেতে হয়। ফলে কুল খেলে পেটের গোলযোগের সম্ভবানা থেকে যায়। এছাড়া গাঢ় সবুজ কাঁচা কুল মারাত্মক টক, এই টক শরীরের পক্ষে হানিকারক। টক স্বাদে দাঁতেরও ক্ষতি হয়। তাই স্বাস্থ্যগত কারণেই সরস্বতী পূজার আগে কুল খাওয়া ঠিক নয়। কারণ মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ের আগে কুল কাঁচা বা কশযুক্ত থাকে। কাঁচা বা কশযুক্ত কুল খাওয়া শরীরের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।

সরস্বতী দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্যে মহামুনি ব্যাসদেব বদ্রিকাশ্রমে তপস্যা করেছিলেন। তপস্যা শুরুর আগে তাঁর তপস্যাস্থলের কাছে একটি কুল বীজ রেখে দেবী ব্যাসদেবের উদ্দেশ্যে একটি শর্ত দেন। ঐ কুলবীজ অঙ্কুরিত হয়ে চারা গাছ হবে। চারা থেকে বড় গাছ, বড় গাছে ফুল হয়ে, তা থেকে নতুন কুল হবে। দেবী বলেন, যে দিন সেই কুল পেকে ব্যাসদেবের মাথায় পতিত হবে, সেই দিন ব্যাসদেবে তপস্যা পূর্ণ হবে। সরস্বতী দেবী সন্তুষ্ট হবেন। ব্যাসদেবও সেই শর্ত মেনে নিয়ে তপস্যা শুরু করলেন। একদিকে ব্যাসদেবের আরাধনা চলছে আর অন্যদিকে ধীরে ধীরে এই কুল বীজ অঙ্কুরিত হয়ে চারা হল, চারা বড় গাছের আকার ধারণ করল। বেশ কিছু বছর কেটে গেল, এরপর বড় গাছে ফুল থেকে নতুন কুল হল এবং একদিন তা পেকে ব্যাসদেবের মাথায় পতিত হল। তখনই ব্যাসদেব বুঝতে পারলেন যে, সরস্বতী দেবী তাঁর আরাধনায় তুষ্ট হয়েছেন।

যেদিন ব্যাসদেবের মাথায় কুল পড়ল, দিনটি ছিল পঞ্চমীতিথি। সেই দিন বেদমাতা সরস্বতীকে বদ্রী বা কুল ফল নিবেদন করে অর্চনা করে, ব্যাসদেব ব্রহ্মসূত্র রচনা আরম্ভ করেন। শ্রীপঞ্চমীতিথির দিন সরস্বতী দেবী প্রসন্ন হয়েছিলেন। তাই সেই সময় থেকেই এই পুজোর আগে কুল না খাওয়ার প্রথার প্রচলন হল। আজও পুজোর আগে আমরা কুল খাই না। পঞ্চমীর দিন পুজোয় সরস্বতী দেবীকে কুল নিবেদন করার পরেই কুল খাওয়া হয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#saraswati pujo, #Kul, #Saraswati Puja 2023

আরো দেখুন