জীবনশৈলী বিভাগে ফিরে যান

Lifestyle: জিনগত সমস্যা-বাবা-মায়ের যে অসুখগুলো সন্তানেরও হতে পারে

February 17, 2024 | 3 min read

কোনও কারণে এক বা একাধিক জিনের মিউটেশনের ফলে বিরল জিনঘটিত রোগ হতে পারে।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: গোটা বিশ্বে আনুমানিক ৭০০০ রকমের বিরল রোগ রয়েছে এবং প্রায় ৩০ কোটি মানুষ এই সব রোগে ভোগেন। সমীক্ষা বলছে, প্রতি বছর মোট যত জন শিশু জন্মাচ্ছে তার মধ্যে প্রায় ছ’শতাংশ এই ধরনের বিরল রোগ নিয়ে জন্মায়। এদের মধ্যে ৩০ শতাংশের পাঁচ বছর হওয়ার আগেই মৃত্যু ঘটে। যদিও এটাও সত্যি যে, সব জিনগত রোগ প্রাণঘাতী নয়।

জিনগত অসুখ হতে পারে মিউটেশনের কারণে। জিনে এক বা একাধিক মিউটেশন ঘটে দেখা দিতে পারে অসুখ। আবার আমাদের ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম থাকে। ২২ জোড়া অটোজোম এবং ২৩ তম জোড়া হল এক্স এবং ওয়াই ক্রোমোজোম। মহিলাদের দু’টি এক্স ক্রোমোজোম থাকে। এবং পুরুষের থাকে এক্স এবং ওয়াই ক্রোমোজোম।

ক্রোমোজোমে মানুষের জিনগত বৈশিষ্ট্য ধরা থাকে। ক্রোমোজোমের একএকটি অংশ কিছু পরবর্তী প্রজন্মে নির্দিষ্ট প্রোটিন প্রেরণ করার জন্য স্থির থাকে। এই একএকটা প্রোটিন শরীরের কোনও না কোনও অংশের গঠন ও কাজের জন্য নির্দিষ্ট।

ফলে ক্রোমোজোমের কোনও একটি নির্দিষ্ট জায়গার প্রোটিনে মিউটেশন ঘটে গেলে তার প্রতিলিপি তৈরি সময় ওই নতুন প্রোটিনেও মিউটেশন থেকে যাবে। ওই প্রোটিনে খুঁত থেকে গেলে তখন নতুন প্রোটিনেও ত্রুটি রয়ে যাবে বা সন্তানের ক্রোমোজোমেও থেকে যাবে ত্রুটি।

কোনও কারণে এক বা একাধিক জিনের মিউটেশনের ফলে বিরল জিনঘটিত রোগ হতে পারে। রোগটি ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে কতখানি দেখা যাবে, তা অনেকখানি নির্ভর করে বাবা-মায়ের মধ্যে কোন জিনটি রয়েছে— ডমিন্যান্ট না রিসিসিভ। এ ক্ষেত্রে রোগগুলি হয় প্রাণঘাতী। রোগী যদি বেঁচেও যায়, কোনও শারীরিক অক্ষমতায় ভুগতে থাকে। জন্ম থেকেই এই ধরনের রোগের লক্ষণ দেখা যায়, তাই এদের বলে কনজেনিটাল ডিসঅর্ডার।

এখনও পর্যন্ত যত ধরনের জেনেটিক ডিসঅর্ডার পাওয়া গিয়েছে, তা তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়— সিঙ্গল জিন ডিসঅর্ডার, ক্রোমোজ়োমাল ডিসঅর্ডার এবং মাল্টি-জিন ডিসঅর্ডার। একটি জিনের গন্ডগোলের কারণে হয় সিঙ্গল জিন ডিসঅর্ডার। একাধিক ভাবে এই রোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে চলে আসতে পারে।

অটোসোমাল ডমিন্যান্ট: এখানে একটি মিউটেটেড জিনের কপির কারণে বাবা-মায়ের মধ্যে একজন রোগে আক্রান্ত হন। ফলে সন্তানের মধ্যে সেই রোগ আসার সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ। এই ধরনের রোগের উদাহরণ হল হান্টিংটন’স ডিজ়িজ়, মারফান সিনড্রোম, টিউবেরাউস স্ক্লেরোসিস ইত্যাদি।

অটোসোমাল রিসিসিভ: এ ক্ষেত্রে বাবা ও মা দু’জনেই মিউটেটেড জিনের একটি করে কপি জিন বহন করেন। কিন্তু এর কারণে যে সব রোগ হয়, এঁদের কেউই তাতে আক্রান্ত হন না। সন্তানের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ২৫ শতাংশ। এ ধরনের জিনের জন্য অ্যালবিনিজ়ম, রবার্টস সিনড্রোম, সিকল সেল ডিজ়িজ়, সিসটিক ফাইব্রোসিস এবং নিইম্যান পিক ডিজ়িজ় ইত্যাদি রোগ হতে পারে।

এক্স লিঙ্কড ডমিন্যান্ট: এক্স ক্রোমোজ়োমের জিনের মিউটেশনের সঙ্গে এর যোগ রয়েছে। খুবই বিরল ধরনের জিনের রোগ, বিশেষত পুরুষদের মধ্যেই দেখা যায়। কয়েকটি উদাহরণ, রেট সিনড্রোম, আইকারডি সিনড্রোম ইত্যাদি।

এক্স লিঙ্কড রিসিসিভ: এক্স ক্রোমোজ়োম জিনের মিউটেশনের সঙ্গে এরও যোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও মহিলাদের চেয়ে পুরুষরাই বেশি আক্রান্ত হন। যে সব মহিলার এক্স লিঙ্কড রিসিসিভ ক্রোমোজ়োম থাকে, তাঁদের পুত্র-সন্তানদের ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে এই জিনগত রোগে আক্রান্ত হওয়ার। কিন্তু কন্যা-সন্তানদের ৫০ শতাংশ এই মিউটেটেড জিনের একটি কপির বাহক হয়ে থাকে। টাক পড়া, বর্ণান্ধতা, হিমোফিলিয়া এ এবং লেস-নাইহান সিনড্রোম এক্স-লিঙ্কড রিসিসিভ জিনের মিউটেশনের কারণে হয়ে থাকে।

ওয়াই লিঙ্কড: ওয়াই ক্রোমোজ়োম-এর মিউটেশনের সঙ্গে এর যোগ রয়েছে। একে হোলান্ড্রিক ডিসঅর্ডারও বলা হয়।
মাইটোকন্ড্রিয়াল: মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ-তে মিউটেশনের জন্য এই ধরনের ডিসঅর্ডার হয়ে থাকে।

ক্রোমোজ়োমাল ডিসঅর্ডার: মানুষের ২৩ জোড়া ক্রোমোজ়োম থাকে। কিন্তু মোট ক্রোমোজ়োমের একটি বা একাংশ যদি না থাকে বা বদলে যায়, তা হলে নানা ধরনের অসুখ দেখা দেয়। যেমন, ডাউন সিনড্রোম, টার্নার সিনড্রোম, উইলিয়াম সিনড্রোম ইত্যাদি। যদি কারও একটা ক্রোমোজ়োম না থাকে, তাকে বলে মোনোসমি। আবার কখনও মানুষ একটা বাড়তি ক্রোমোজ়োম নিয়ে জন্মায়। একে বলে ট্রাইসমি। ডাউন সিনড্রোমের ক্ষেত্রে ক্রোমোজ়োম ২১-এ একটি বাড়তি কপি থাকে, যার ফলে একে ট্রাইসমি ২১-ও বলা হয়। এই রোগে ব্যক্তির মুখের রেখচিত্র স্বাভাবিক ভাবে তৈরি হয় না, দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিও হয় না ঠিকমতো।

মাল্টিজিন ডিসঅর্ডার: একাধিক জিনের প্রভাবের পাশাপাশি পরিবেশ এবং জীবনযাত্রার ধরনের কারণে এই রোগ হতে পারে। এর কয়েকটি উদাহরণ হল হাঁপানি, কার্ডিয়োভাস্কুলার ডিজ়িজ়, হাইপারটেনশন, ক্যান্সার, ডায়াবিটিস, পেটের সমস্যা ইত্যাদি।

প্রেগন্যান্সি ও জিনগত সমস্যা: প্রেগন্যান্সির সময় আলট্রাসাউন্ড করানোর সময়েই চিকিৎসক অনেকসময় জিনগত কিছু অসুখ সম্পর্কে সন্দেহ করতে পারেন। এক্ষেত্রে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড স্টাডি করে বোঝা যায় বাচ্চার জেনেটিক ত্রুটি হতে চলেছে কি না। যদি সমস্যা নিরাময়ের ব্যবস্থা থাকে তাহলে তা নেওয়া হয়। কারণ ইউটেরাসের মধ্যেই জিনের ত্রুটি সংসশোধনের চিকিৎসা করা যায়। আর যখন বোঝা যায় সমস্যার নিরসন সম্ভব নয় তাহলে অ্যাবরশনের ব্যবস্থা করেন কেউ কেউ।

টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সঙ্গে পারিবারিক সংযোগ রয়েছে। দেখা গিয়েছে বাবা কিংবা মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে সন্তানের সুগার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকী বাবা অথবা মায়ের মধ্যে যে কোনও একজনের ডায়াবেটিস থাকলেও সন্তানের উচিত কম বয়স থেকেই বছরে অন্তত একবার ডায়াবেটিসের চেক আপ করানো।

হার্ট ডিজিজ-এর ক্ষেত্রেই পারিবারিক সংযোগ অস্বীকার করা যায় না।

বেশ কিছু ক্যান্সার যেমন ব্লাডার ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, ওভারিয়ান ক্যান্সার, রক্তের ক্যান্সার ইত্যাদি ক্ষেত্রে জিনগত যোগাযোগ মিলেছে।

প্রতিরোধ: অটোজোমাল রিসেসিভ অসুখ যেমন থ্যালাসেমিয়া হতে পারে পিতা-মাতা উভয়ের জিনে ত্রুটি থাকলে। তাই এমন কিছু অসুখ প্রতিরোধে বিয়ের আগে ম্যারেজ কাউন্সেলিং করানো ও রক্ত পরীক্ষা করানো যেতে পারে জরুরি। তাতে অতিপরিচিত অটোজোমাল রিসেসিভ ডিজঅর্ডার সম্পর্কে জানা যাবে ও আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।রোগ প্রতিরোধও করা যাবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Genetic problems, #diseases, #parents, #children

আরো দেখুন