লোকসভার যুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের উপরই আস্থা রাখল বামেরা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: নয়া প্রজন্মই ভবিষ্যতের কাণ্ডারী। গত কয়েকবছর ধরেই যুব সমাজকে বাম মতাদর্শে দীক্ষিত করার পন্থা অবলম্বন করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সিপিএম (CPM)। দলীয় কর্মসূচির ফ্রন্টফুটে থাকছে যুব সংগঠন। লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) তাদের প্রার্থী তালিকায়ও সেই লক্ষণ স্পষ্ট। প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা বৃহস্পতিবার ঘোষণা করে দিয়েছে বামফ্রন্ট। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ১৬ জনের মধ্যে ১৪টিই নতুন মুখ।
দমদম থেকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakraborty) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। মেদিনীপুরে সিপিআই নেতা বিপ্লব ভট্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এই দু’জন ছাড়া বাকি ১৪ জনই নতুন মুখ। এই ১৪ জন হলেন—কোচবিহারে ফরওয়ার্ড ব্লকের নীতীশ চন্দ্র রায়, জলপাইগুড়িতে সিপিএমের দেবরাজ বর্মণ, বালুরঘাটে আরএসপি’র জয়দেব সিদ্ধান্ত, কৃষ্ণনগরে সিপিএমের এস এম শাদি।
অন্যদিকে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন সৃজন ভট্টাচার্য (Srijan Bhattacharya)। কলকাতা দক্ষিণ থেকে প্রার্থী হয়েছেন সিপিএমের সায়েরা শাহ হালিম। তিনি ডাঃ ফুয়াদ হালিমের স্ত্রী। বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে বাবুল সুপ্রিয়র কাছে পরাজিত হন। শ্রীরামপুর থেকে প্রার্থী হন দীপ্সিতা ধর (Dipsita Dhar)। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী মনদীপ ঘোষ। তমলুক থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সায়ন বন্দ্য়োপাধ্যায় (Sayan Banerjee)। প্রত্যেকটি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে বাম প্রার্থীদের।
২০১৬ এবং ২০২১ এর বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়েছিল বামেরা। একুশের ভোটে বাম কংগ্রেসের জোট সঙ্গী হয়েছিল আইএসএফও। লোকসভায় কি জোট হচ্ছে না?
বৃহস্পতিবার বিমান বসু (Biman Bose) বলেন, “বামফ্রন্টের শরিকদলগুলি ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে কোনওদিনই জোট ছিল না। ভোটে লড়ার জন্য আসন সমঝতা হয়েছিল। এবারেও হতে পারে।”
ভোট ব্যাঙ্কে বিপুল ঘাটতি। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে শুধুমাত্র ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্রেই তৃণমূলের থেকে কয়েক যোজন পিছিয়ে সিপিএম। এই ঘাটতি মিটিয়ে ডোমজুড় কি ‘লিড’ দিতে পারবে দীপ্সিতাকে? এ আকাশ কুসুম কল্পনা। এই চ্যালেঞ্জ তারা নিতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার।
শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই পড়ে ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্রটি। এখানে তৃণমূলের প্রার্থী তিনবারের সাংসদ পোড় খাওয়া নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি এখনও এই কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। বৃহস্পতিবার বামেদের প্রথম তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। শ্রীরামপুরে তারা প্রার্থী করেছে ছাত্র নেত্রী দীপ্সিতা ধরকে। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের বড়সড় ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে। ২০১৯ সালের ভোটে ডোমজুড় থেকে কল্যাণবাবু এগিয়ে ছিলেন বড় ব্যবধানে। এই বিধানসভা ক্ষেত্রে পাঁচ বছর আগে সিপিএম প্রার্থী তীর্থঙ্কর রায় মাত্র ১১ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন। সেই ঘাটতি মিটিয়ে লড়াইয়ে ফিরে আসাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বামেরা। ডোমজুড়ের সর্বত্রই ধুঁকছে সিপিএমের সংগঠন। এখন দুর্বল সংগঠনকে চাঙ্গা করাই তাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তারপর ভোটের ময়দানে ঝাঁপাতে চাইছে তারা।
দীপ্সিতার বাড়ি বালির নিশ্চিন্দায় হলেও এই এলাকটি ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ তিনি শ্রীরামপুর সংসদীয় আসনের ভোটার। এই কেন্দ্রের নির্বাচনকে সিপিএম মর্যাদার লড়াই বলেই দেখছে।
অন্যদিকে জল্পনাই সত্যি হল। যাদবপুর লোকসভায় (Jadavpur Lok Sabha constituency) এবার প্রাক্তন ছাত্রনেতা সৃজন ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করল সিপিএম। আর নাম ঘোষণা হতেই সোনারপুর দক্ষিণ কেন্দ্রের রাজপুর থেকে প্রচার শুরু করে দিলেন এই নবীন বাম নেতা। এদিন রাজপুর চৌহাটি মোড়ে পার্টি অফিসে আসার পর হরিণাভিতে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেখানে দেওয়াল লিখনে অংশ নেন সৃজন। তারপর রাজপুর বাজার পর্যন্ত মিছিল করেন। বামকর্মীদের পাশাপাশি এলাকার বহু মানুষ বেরিয়ে আসেন প্রার্থীকে দেখার জন্য। সেখানে এক বৃদ্ধা সৃজনকে জড়িয়ে ধরে আশীর্বাদ করেন। বলেন, আমি বরাবরই বাম সমর্থক। সিপিএম এখানে জিতে গেলে লাল আবীর ছড়াব।