এপার বাংলার একদিন আগেই আসে ওপার বাংলায় পয়লা বৈশাখ
আজ বছরের শেষ দিন, আগামিকাল শুরু হচ্ছে ১৪২৯ সন। বছরের প্রথমদিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ দিনটি দুই বঙ্গেই মহাসমারোহে পালন করা হয়। এক ভাষা কিন্তু মাঝে শুধু একটি কাঁটাতারের ব্যবধানে বিভক্ত দুই বাংলা। তবে আরও একটি ফারাক কিন্তু রয়েছে। এপার বাংলার একদিন আগে ওপার বাংলা পয়লা বৈশাখ উদযাপন করে। কিন্তু কেন?
তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের পূর্ববঙ্গে ১৯৬৬ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহের পরিচালনায় একটি কমিটি পুরনো বাংলা দিনপঞ্জিকে সংশোধিত করে। সেখানে বাংলা বছরের প্রথম পাঁচ মাসকে ৩১ দিনের, আর বাকি মাসগুলোকে ৩০ দিনের বানানো হয়। প্রতি অধিবর্ষে ফাল্গুন মাসের জন্য ৩১ দিন ধার্য করা হয়। ১৯৮৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে এই দিনপঞ্জি গ্রহণ করা হয়। এরপর থেকেই জাতীয় দিনপঞ্জির সূচনা এবং প্রতি বছর নববর্ষ ১৪ই এপ্রিলেই হয়ে থাকে।
অন্যদিকে আমাদের দেশের যে যে রাজ্যে, বাংলা দিনপঞ্জি ব্যবহার করা হয়; তা সংস্কৃত গ্রন্থ সূর্য সিদ্ধান্ত মতে তৈরি করা হয়। দিনপঞ্জিটি হিন্দু দিনপঞ্জি ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত এবং বিভিন্ন বাঙালি ও হিন্দু উৎসবের দিন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সেটি ব্যবহৃত হয়। সেই কারণেই পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রতি বছর ১৪ই বা ১৫ই এপ্রিল নববর্ষের উৎসব হয়ে থাকে।
বাংলা অ্যাকাডেমির পরিচালক শামসুজ্জামান খানের কাছ থেকে জানা যায়, বাংলা সন একেবারেই স্বকীয়। ওপার বাংলায় ২৪টির মতো সন ছিল। সেসব সন রাজা-বাদশাহ, ধর্ম বা সীমিত অঞ্চলের নামে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বাংলা সন বাংলা ভাষা, দেশ ও জাতির নামেই রাখা হয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশে পঞ্জিকা সংস্কারের জন্য প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিল মহারাষ্ট্রে। লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলক, শঙ্করবালকৃষ্ণ দীক্ষিত, ভেংকটেশ বাপুশাস্ত্রী কেতকর, যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি, ড. মেঘনাদ সাহা ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
শহীদুল্লাহ বাংলা অ্যাকাডেমির পঞ্জিকা সংস্কার কমিটির প্রধান ছিলেন। তাঁর সংস্কারের পর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত আরেকটি কমিটি শহীদুল্লাহ কমিটির সংস্কার প্রস্তাবকে খতিয়ে দেখেন, এবং প্রস্তাবের উন্নয়ন সাধন করেন। সেগুলি হল নিম্নরূপ :
১. সাধারণভাবে বাংলা বর্ষপঞ্জির বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতিমাসে ৩১ দিন এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত প্রতিমাসে ৩০ দিন গণ্য করা হবে।
২. গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির অধিবর্ষে যে বাংলা বছরের ফাল্গুন মাস পড়বে সেই বাংলা বছরকেই অধিবর্ষ হিসেবে গণ্য করা হবে।
৩. অধিবর্ষে ফাল্গুন মাস ৩১ দিনে শেষ হবে।
৪. আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী রাত ১২টায় তারিখ পরিবর্তিত হবে।
শহীদুল্লাহের সংস্কারে বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার সংস্কার প্রস্তাবকেই বাংলা অ্যাকাডেমির পঞ্জিকা সংস্কারে গ্রহণ করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে মেঘনাথ সাহার প্রস্তাবের কিছু সংশোধন করে এস.পি.পাণ্ডে কমিটি ১৪ই এপ্রিলেই পয়লা বৈশাখ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। ভারত সরকার কর্তৃক গৃহীত পাণ্ডে শীর্ষক কমিটির রিপোর্টে বলা হয় –
“The Year shall start with the month of vaisaka when the sun enters niranayana mesa rasi which will be 14th April of the Gregorian calendar. (Indian Journal of History of sciences 39.4(2004) 519-534).”
বাংলা অ্যাকাডেমির বিশেষ কমিটিও একই তারিখে পয়লা বৈশাখকে নির্ধারিত করেছেন এবং বাংলাদেশে সরকারিভাবে তা প্রচলিত হয়েছে। কিন্তু এদেশে পাণ্ডে কমিটির রিপোর্ট কার্যকর হয়নি।