রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

বিচারকের আসনে বসে নিজের ইমেজ তৈরি? অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কি ভারতের ‘সার্গিও মোরো’?

April 17, 2024 | 2 min read

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কি ভারতের ‘সার্গিও মোরো’

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: এজলাসে বসে একের পর এক নির্দেশ দিয়ে সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে আম জনতার ‘ভগবান’ হয়ে উঠেছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এখন বিচারকের আসন ছেড়ে ভোটের লড়াইতে নেমেছেন তিনি। অনেকেই তাঁর সঙ্গে সার্গিও মোরোর (Sergio Moro) মিল পাচ্ছেন। ব্রাজিলের ওই বিচারপতি তথাকথিত ‘দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা এবং তাঁর দল ‘ওয়ার্কার্স পার্টি’ ছিল মোরোর টার্গেট। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নিশানাতে ছিল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং তার দুই শীর্ষ নেতা। ব্রাজিলের দক্ষিণপন্থী সংবাদ মাধ্যম ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত নাগাড়ে প্রোপাগান্ডা-প্রচার চালিয়ে সার্গিও মোরোকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘হিরো’ হিসেবে তুলে ধরেছে। একইভাবে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কেও হিরো বানিয়েছিল সংবাদ মাধ্যম। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কোন ফ্যাশন ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবি পরলেন, রায়দানের মাঝে তিনি শুকনো মুড়ি খেলেন না চা-মুড়ি খেলেন তা নিয়েও প্রচার চলেছে।

ব্রাজিল, লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। লুলা বামপন্থীদের নেতা, সেখানকার বামপন্থী এবং প্রগতিশীলরা বারবার বলেছিলেন; সার্গিও মোরোর দুর্নীতি দমন অভিযানের নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। একই ভুল করেছিল বাংলার কমিউনিস্টরা, তাঁরাও অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Abhijit Gangopadhyay) ‘ত্রাতা’ হিসেবে তুলে ধরার সময় ভাবেননি অভিজিৎ ‘আইকন’ হলে ডানপন্থী রাজনীতির সুবিধা হবে কি না!

২০১৮ সালে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে মোরো, লুলা এবং তাঁর সহযোগীদের জেলে পাঠিয়ে দেন। এমনভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় যাতে লুলা ২০১৮-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে না পারেন। ফাঁকা মাঠে বোলসেনেরো দক্ষিণপন্থীদের প্রতিনিধি হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে যান। সার্গিও মোরো বোলসেনেরোর আইনমন্ত্রী হন। লাতিন আমেরিকার অতি দক্ষিণপন্থী এবং একনায়ক হওয়ার পথে এগিয়ে যাওয়া বোলসেনেরো এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে। করোনা সময় বোলসেনেরো এবং মোদী একে অপরের প্রশংসা করেছেন। বোলসেনেরো যেভাবে সার্গিও মোরোকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন, মোদীও সেই একই কায়দায় অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিচারপতি পদকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করলেন না তো? প্রশান্ত ভূষণ বহু আগেই অভিযোগ করেছিলেন, কীভাবে আরএসএস এবং বিজেপি বিচারব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে।

২০২২-র নির্বাচনের আগে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ আদালত পরিষ্কারভাবে জানিয়েছিল, লুলার বিরুদ্ধে সার্গিও মোরোর সমস্ত রায়ই রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। লুলা নির্বাচনে লড়ার অধিকার পান এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বোলসেনেরোকে হারিয়ে দেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার তদন্তে দেখা গিয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮, অর্থাৎ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে পর্যন্ত দক্ষিণপন্থী নেতা বোলসেনেরো, বিচারপতি সার্গিও মোরো ও তদন্তকারী সংস্থার অনেকেই এক বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের শরিক ছিলেন। বিচারপতি হিসেবে সার্গিও মোরো দিনের পর দিন তদন্তকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছেন, তিনি বলতেন কী ধরনের তথ্যপ্রমাণ আদালতে দেখালেই তিনি কী ধরনের শাস্তির ঘোষণা করবেন। ব্রাজিলের অতি দক্ষিণপন্থী মিডিয়াগুলির প্রোপাগান্ডা তো ছিলই। ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট পরবর্তীকালে লুলা এবং তাঁর সহযোগীদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত রায় বাতিল করার সময় বলেছিলেন, সার্গিও মোরো এমন অনেক বিষয়ে রায় দিয়েছেন যা তাঁর এক্তিয়ারের মধ্যেই ছিল না।

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিভিন্ন মন্তব্য, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ, নিবিড়ভাবে দেখলেই বোঝা যায়; বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা চালিয়েছেন আজকের তমলুকের গেরুয়া প্রার্থী। আইনের এক্তিয়ার না মেনে নিজেকে ভগবান হিসেবে তুলে ধরার মরিয়া চেষ্টা ছিল তাঁর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়েই পড়ল, নিজের রাজনৈতিক উচ্চাশা প্রকাশ্যে এনে ফেললেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Brazil, #Abhijit Gangopadhyay, #Sergio Moro, #bjp

আরো দেখুন