২০১৪-র নির্বাচনের সময় সন্দেহজনক লেনদেন! কী অভিযোগ ডায়মন্ড হারবারের BJP প্রার্থীর বিরুদ্ধে?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: অভিজিৎ দাস ওরফে ববিকে ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী করেছে বিজেপি, এর আগে ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে ওই আসন থেকে লড়েছেন ববি। সে’সময় বিপুল অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়েছিল তাঁর অ্যাকাউন্টে। সবটাই ঘটেছিল কমিশনের চোখে ধুলো দিয়ে এবং সুপরিকল্পিতভাবে।
আরএসএসের প্রচারক ববির আয় ছিল শূন্য। অন্তত তাঁর পূর্ববর্তী (২০০৯ সালের) নির্বাচনী হলফনামা তেমনই বলে। ববির প্যান কার্ড নম্বর BBKPD1934N, তাতে দেখা যাচ্ছে তাঁর আয় শূন্য। বিজেপি প্রার্থীর স্ত্রীর কোনও প্যান কার্ড নেই। মৌসুমী দাসের পেশা হিসেবে দেখানো হয়েছিল, বিজেপি প্রার্থীর স্ত্রী একজন কম্পিউটার শিক্ষিকা। প্যান কার্ড না থাকা সত্ত্বেও ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার, আমতলা শাখায় তাঁর অ্যাকাউন্ট ছিল। এতেও সে’সময় প্রশ্ন তোলেনি কমিশন। দু’জনের আয় শূন্য দেখানোয় স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, তাঁদের দিনযাপন হতে কীভাবে? সংসার চলত কী উপায়ে?
এবার দেখা যাক, ২০১৪ সালে কী ঘটেছিল? তাৎপর্যপূর্ণভাবে ২০১৪ সালেও দক্ষিণ ২৪ পরগণার ওই আসন থেকেই লড়েছিলেন ববি (অভিজিৎ দাস)। ২০১৪ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল অবধি, বিভিন্ন ব্যক্তির থেকে ববি প্রায় প্রতিদিনই ১৫,০০০ টাকা করে পেয়েছেন। তিনি নিজেই সে তথ্য দিয়েছেন। এক ব্যক্তি একাধিকবার ববিকে টাকা পাঠিয়েছেন, দৈনিক পনেরো হাজারের গন্ডি কোনওদিনই পেরোয়নি। সব মিলিয়ে দিন কুড়ির মধ্যে প্রায় তিন লক্ষ টাকা এসেছিল তাঁর অ্যাকাউন্টে। ডি.ভট্টাচার্য, মঞ্জুশ্রী দাস, এম. ভট্টাচার্য, এস.গুহ নিয়োগী, বিনয় চক্রবর্তী, তাপসী ভট্টাচার্য, বিশ্বজিৎ দাস ইত্যাদি নামের ব্যক্তিরা ববিকে টাকা পাঠাতেন। কোনও দিনই কুড়ি হাজারের সীমা পেরোয়নি টাকা পাঠানোর পরিমাণ। নির্বাচন কমিশনের নিয়মে বলা ছিল, প্রতিদিন কুড়ি হাজারের বেশি নগদ দান নেওয়া যাবে না। সুচারুভাবে তা বজায় রাখা হয়েছিল। দাতাদের মধ্যে বিনয় চক্রবর্তীর লেনদেনে অসঙ্গতি চোখে পড়ে। বিনয় দশটি চেকের মাধ্যমে কুড়ি হাজার করে মোট দু’লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন ওই সময়টাতে। অন্যদিকে, বিজেপি প্রার্থী বিজেপি কোন খাতে এই টাকা খরচ করতেন তার কোনও নির্দিষ্ট হদিশ মেলেনি।
ববির দেওয়া ব্যাঙ্কের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কখনও সে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করেছে। আবার কারও থেকে পাঁচ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে নিয়েছে। কখনও বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কে ৫০,০০০ টাকার চেক দিয়েছে। খরচের যে হিসেবে বিজেপি প্রার্থী সে’সময় দিয়েছিলেন তাতে বহুক্ষেত্রে বিকৃতি ঘটানোর চিহ্ন মিলেছিল। নাম পড়া যাচ্ছিল না বহু ক্ষেত্রেই, টাকার অঙ্কের জায়গা অস্পষ্ট ছিল। তারিখ মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল, তা দেখেই বোঝা গিয়েছিল। বহু তারিখ ওলোটপালোট করা হয়েছিল বলেও মনে হয়। পেন্সিল ব্যবহার করে একাধিক সংখ্যায় গড়মিল করা হয়েছিল বলেও অনুমান করা হচ্ছিল কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই কোনও পদক্ষেপ করেনি নির্বাচন কমিশন। কার্যত নীরব দর্শক হয়ে থেকেছিল তারা। এখানেই জোরালো হয় প্রশ্ন, কমিশন কি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারেনি?
(তথ্যঋণ: সাংবাদিক শৈবাল দাসগুপ্তের প্রতিবেদন, নিউজ রুম ইন্ডিয়া)