মার্কিন মুলুকে প্রথম ফৌজদারি মামলায় দোষী প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, কার জন্য ঘটল এই অঘটন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মার্কিন মুলুকে এই প্রথম ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। ব্যবসায়িক নথিপত্রে জালিয়াতি করার দায়ে বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কের একটি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালে পর্নস্টার স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার মোট ৩৪টি অভিযোগ ছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। সেই সংক্রান্ত মামলায় ১২ সদস্যের জুরির দ্বারা সবকটিতেই দোষী সাব্যস্ত হলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর কয়েক মাস পরেই আমেরিকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। শোনা যাচ্ছে, ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রার্থী হয়ে বাইডেনের বিরুদ্ধে লড়বেন সেই নির্বাচনে। তার আগে আদালতের এই রায়ে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের মুখ পুড়ল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কী হতে পারে ট্রাম্পের?
মূলত নিজের যৌন কেলেঙ্কারি গোপন করতে পর্নস্টারকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্ক দণ্ডবিধির ১৭৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিটি অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৪ বছর করে কারাদণ্ডের হতে পারে ট্রাম্পের। তবে এই অভিযোগগুলিতে বাধ্যতামূলক কারাদণ্ডের বিধান নেই। তাই তাঁকে জেলে যেতে নাও হতে পারে। আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ব্যবসায়িক তথ্য গোপনের জন্য দোষী ৭৭ বছরের রিপাবলিকান নেতাকে শুধু জরিমানা করেই ছাড় দিতে পারে আদালত।
কে এই স্টর্মি ড্যানিয়েলস?
২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের সঙ্গে একাধিক মহিলার সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে এসেছিল। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম ছিল স্টর্মি।
৪৪ বছর বয়সি স্টর্মির আসল নাম স্টেফানি গ্রেগরি ক্লিফোর্ড। তবে ব্লু ফিল্মের জগতে তিনি স্টর্মি নামেই পরিচিত।
স্টর্মির জন্ম লুইসিয়ানার ব্যাটন রুজে। বর্তমানে তিনি টেক্সাসে থাকেন। জন্মের ৪ বছর পর স্টর্মির বাবা-মা, বিল গ্রেগরি এবং শিলার বিচ্ছেদ হয়। মূলত মায়ের কাছেই বড় হন তিনি।
১৯৯৭ সালে ব্যাটন রুজের স্কটল্যান্ডভিল ম্যাগনেট হাই স্কুল থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন স্টর্মি। পরে সাংবাদিক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
১৭ বছর বয়সে বারে স্ট্রিপার হিসাবে কাজ শুরু করেন স্টর্মি। কিছু দিনের মধ্যেই এই পেশায় প্রসিদ্ধিও পান। এরপর আমেরিকার নামকরা ক্লাব থেকে ডাক পেতে শুরু করেন। এর এখান থেকেই জীবনের মোড় ঘুরে যায় তাঁর। এক পরিচালক তাঁকে নীল ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ দেন।
নীল ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পর স্টর্মিকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। একাধিক পর্ন ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কারও। বেশ কিছু ব্লু ফিল্মের পরিচালক ছিলেন তিনি।
২০০৩ সালে প্যাট মাইনকে বিয়ে করেন স্টর্মি। প্যাটের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২০০৭ সালে তিনি মাইক মোজের সাথে গাঁটছড়া বাঁধেন।
২০০৯ সালে মাইকের উপর গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগে স্টর্মিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর ২০১৫ সালে ব্রেন্ডন মিলারকে বিয়ে করেন তিনি। সেই বিয়েও বেশিদিন টেঁকে নি। ২০১৯ সালে তিনি নিজেকে উভকামী বলে ঘোষণা করেন। ২০২২ সালে তিনি পর্নস্টার ব্যারেট ব্লেডকে বিয়ে করেন। স্টর্মির এক মেয়েও আছে।
২০০৬-এর জুলাই মাসে ক্যালিফোর্নিয়ার লেক তাহোতে একটি গল্ফ টুর্নামেন্টে ট্রাম্পের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। এমনটাই দাবি করেন স্টর্মি। ওই রাতেই নাকি ট্রাম্প তাঁকে হোটেলে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এই বছরেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌনমিলনের অভিযোগ করেন স্টর্মি।
২০১৮ সালে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে স্টর্মি দাবি করেন, ট্রাম্প তাঁকে নিজের রিয়্যালিটি টিভি শো ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’-এর রাতেই দু’জনের সম্মতিতে ট্রাম্প ও তাঁর মধ্যে যৌনমিলন হয়।
এর পর ২০০৭ সালের জুলাইয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসের বেভারলি হিলসের একটি হোটেলে দেখা করেন তাঁরা। বেভারলি হিলসের হোটেলে ফের তাঁর সঙ্গে সঙ্গম করতে চান ট্রাম্প। কিন্তু তিনি ট্রাম্পের সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নাকি স্টর্মির সঙ্গে রিয়্যালিটি শোয়ের চুক্তি বাতিল করে দেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
২০১৬ সালে স্টর্মি দাবি করেন, ট্রাম্পের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক নিয়ে মুখ বন্ধ রাখার জন্য তাঁকে ১৩০,০০০ মার্কিন ডলার দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শুধু ট্রাম্পই নন, এর আগেও এক রিপাবলিকান নেতাকে ফাঁদে ফেলেছিলেন স্টর্মি। ২০১০ সালে লুইসিয়ানার সেনেট পদের জন্য রিপাবলিকান নেতা ডেভিড ভিটারের বিরুদ্ধেও দাঁড়ান তিনি।