রাজ্যের পুলিশি ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করতেই কি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতিয়ার ‘ই-সাক্ষ্য’ অ্যাপ?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর তোয়াক্কা করেন না মোদী, গত এক দশকে বারবার সামনে এসেছে এ অভিযোগ। এবার রাজ্যের আইনশৃঙ্খলায় নাক গলাতে চাইছে এনডিএ সরকার? আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি রাজ্যের বিষয়। নজিরবিহীনভাবে পুলিশি ব্যবস্থায় সরাসরি হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠছে কেন্দ্রের সরকারের বিরুদ্ধে। রাজ্য প্রশাসনের তদন্ত প্রক্রিয়ায় নজরদারি চালাতে চাইছে কেন্দ্র। ‘ই-সাক্ষ্য’ অ্যাপের মাধ্যমে যা করা হবে। তদন্তের যাবতীয় বিষয় নিয়মিত ওই অ্যাপে আপলোড বাধ্যতামূলক, এই মর্মে নির্দেশ জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অভিযোগ উঠছে, এনডিএ সরকার তদন্তের বিষয়বস্তু জেনে নিয়ে ঘুরপথে বিভিন্ন নির্দেশ পাঠাতে চাইছে। বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে চলা মামলাগুলিতে কোনও তথ্যপ্রমাণ হাতে এলে তা আগেভাগে জেনে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠছে।
পাল্টা রাজ্য সরকারও সমান্তরাল একটি অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম ও ভারতীয় সাক্ষ্য আইন এনেছে সরকার। নয়া ব্যবস্থায় ‘ই-প্রমাণ’ চালু করা হয়েছে। সে’সুবাদে মোবাইল ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন চালুর পথে হেঁটেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তৈরি করা হয়েছে ‘ই-সাক্ষ্য’ অ্যাপ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নয়া আইন অনুযায়ী ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ তুলতে হবে। বাজেয়াপ্ত করা সমস্ত সামগ্রীর ভিডিওগ্রাফিও বাধ্যতামূলক। ভিজ্যুয়ালের সময়সীমা হবে চার মিনিট। ছবি তোলার পর সেলফি তুলবেন তদন্তকারী অফিসার। তারপর তা আপলোড করতে হবে ওই অ্যাপে।
এ যাবৎ রাজ্যগুলো অপরাধের পরিসংখ্যান এনসিআরবিকে পাঠাতো। বাজেয়াপ্ত হওয়া সামগ্রী বা ঘটনাস্থলের ছবি পাঠানোর কথা বলা ছিল না। নয়া আইনের আড়ালে রাজ্যের তদন্ত প্রক্রিয়ায় নাক গলাতে চাইছে, যা নজিরবিহীন। পুলিশের কর্তাদের মতে, রাজ্যে কোনও ঘটনা ঘটলে পুলিশই তদন্ত করে। যা অত্যন্ত গোপনীয় প্রক্রিয়া। তদন্তকারী অফিসার কীভাবে তদন্ত চালাচ্ছেন এবং তাতে কী কী পাওয়া গেল, তা উর্ধ্বতন কর্তা ছাড়া কাউকেই জানাতে তিনি বাধ্য নন। এমনকী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককেও না। নয়া নিয়মে ‘ই-সাক্ষ্য’ অ্যাপে আপলোড করার অর্থ, দিল্লিকে জানিয়ে দেওয়া। বাজেয়াপ্ত করা সামগ্রীর ছবি-ভিডিও অ্যাপ থেকে ফাঁস হবে না বা হ্যাক হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? অ্যাপ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বাইরের সংস্থা। অনভিপ্রেত কিছু ঘটলে, জানা যাবে কী করে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তৈরি করা অ্যাপে ভরসা রাখতে পারছে না রাজ্য সরকার।