যাঁরা নবান্নের সামনে এসেও বৈঠকে এলেন না, তাঁদের আমি ক্ষমা করলাম: মুখ্যমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মুখ্যমন্ত্রী ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পরও বৈঠকে এলেন না জুনিয়র ডাক্তাররা। এরপরই সাংবাদিকদের উদ্দেশে নবান্ন সভাঘর থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তিন দিনেও সমাধান করতে পারলাম না। বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। যাঁরা নবান্নের সামনে এসেও বৈঠকে এলেন না, তাঁদের আমি ক্ষমা করলাম।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ডাক্তারদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি নিয়ে আলোচনায় রাজি ছিলাম। ৩৪ জন ডাক্তার এসেছিলেন, সবাকে ঢুকতে অনুমতি দিয়েছিলাম। তার পরও তাঁরা লাইভ স্ট্রিমিং দাবিতে অনড়। বিচারাধীন মামলার কারণেই লাইভ সম্প্রচারে সমস্যা আছে আমরা বলেছিলাম, খোলা মনে আলোচনায় আসুন’। তিনি মনে করিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্ট লাইভ স্ট্রিমিং করতে পারে, সরকার পারে না।
২৭ জন বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। সেই পরিসংখ্যান সামনে এনে মমতা বলেন, ‘কত জনের বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন সেই তথ্য সংগ্রহ করছি’। অন্যদিকে নবান্নের বাইরেই আন্দোলনকারীরা নিজেদের দাবিতে অনড়। লাইভ স্ট্রিমিং ছাড়া তাঁরা বৈঠক করবেন না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের কিছু বিষয়:
- দু’ঘণ্টা ধরে নবান্নের সভাঘরে অপেক্ষা করেছি, জুনিয়র চিকিৎসকেরা আসেননি।
- মামলাটি বিচারাধীন। এই নিয়ে বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার হতে পারে না।
- ‘ওরা ছোট, আমাদের কাজ আবেগকে মর্যাদা দিয়ে ক্ষমা করে দেওয়া। আমরা ভেবেছিলাম, ওরা রাজি হবে। ৪টে ৪৫ মিনিটের মধ্যে আসতে বলেছিলাম। অনেক দেরি করে এসেছেন।
- নির্যাতিতার জন্য শোকপ্রস্তাব নেব বলে ঠিক করেছিলাম। ২ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করেছি। তিন দিন ধরে অপেক্ষা করছি। বাংলার মানুষের সহানুভূতি আছে। আমি নিজেও মিছিল করেনি।
- পরিবারের সঙ্গে আমরা একমত। সিবিআই দ্রুত তদন্ত শেষ করুক। আমাদের হাতে মামলাটি নেই। সিবিআই সম্বন্ধেও কিছু বলতে চাই না এখন।
- সরাসরি সম্প্রচারে আমাদের আপত্তি ছিল না। কিন্তু এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে চলছে। আমরা এমন কিছু করতে চাইনি, যাতে অচলাবস্থা চলতে পারে।
- চিঠিতে আমরা লিখেছিলাম, সরাসরি সম্প্রচার করতে পারব না। ওরা যে কোনও ইস্যু তুলতে পারতেন। সেটা ওঁরা পরে সংবাদমাধ্যমকে জানাতে পারতেন। আমরা যুগ্মভাবেও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম।
- আমাদেরও কাজ আছে। প্রতিদিন এভাবে অপেক্ষা করানো হচ্ছে। ওঁরা কেন আসছেন না, সেটা সাংবাদিক বৈঠক করেও জানাতে পারতেন। তা করেননি।
- আমি তিন বার চেষ্টা করলাম। সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে। ইতিমধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩২ দিন হয়ে গেল। অনেকেই কাজ করছেন না। সাত লক্ষ মানুষ পরিষেবা পাননি। যে কোনও মৃত্যু মর্মান্তিক। কিন্তু এত মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এর থেকে লজ্জার কী হতে পারে?
- পৌনে ৫টা থেকে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছি। আমার ভাইবোনেদের শুভবুদ্ধি উদয় হবে, তাঁরা আসবেন, ভেবেছিলাম। আসতে বলে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম প্রথমে। ওঁরা আসবেন বলেছিলেন। আমার সঙ্গে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি ও প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ছিলেন। আমরা সকলে ফোন ছাড়া এখানে বসে ছিলাম এতোক্ষণ, এই সময়ের মধ্যে কোনো এমার্জেন্সি ঘটতে পারতো, সেই খবর আমরা জানতেও পারতাম না,
- অনেকে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বাইরে প্রেসের কিছু লোকের থেকে জানলাম ওদের কাছে ফোন আসছে কোনো রকম নেগোশিয়েট না করার জন্য, মিটিং এ না ঢোকার জন্য। তাই নবান্নর গেটে এসেও তারা ভেতরে এলেন না, আমি আমার সাধ্যমতন চেষ্টা করলাম ৩ দিন, তিন দিনেও সমাধান করতে পারলাম না। বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। আমি ওনাদেরও ক্ষমা করলাম কারণ কতদের ক্ষমা করে বড়দের কাজ। এরপরও ওনারা বসতে চাইলে মুখ্য সচিব, চন্দ্রিমা ওদের সাথে বসবে।
- আশা করেছিলাম, ছোটরা এসে কথা বলবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, সময় পেরিয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার যা করবে, তাতে বাধা দেব না, জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
- আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে। অনেক ভুল বোঝাবুঝি, কুৎসা হয়েছে। সাধারণ মানুষ রঙ বোঝেনি।
- আন্দোলনে আমার জন্ম, আমি তাকে সম্মান করতে জানি, আমি এমার্জেন্সির পক্ষে নই, আমি একজন মানবিক মানুষ।
- আজ ওনাদের এই আচরণে এটা স্পষ্ট ওনারা বিচার নয় ওনারা চেয়ার চান
- আমি মানুষের স্বার্থে পদত্যাগ করতেও রাজি আছি, আমার মুখ্যমন্ত্রী পদ চাই না