পুলিশ দিয়ে ধর্মঘটী ডাক্তারদের উপর হামলা চালিয়েছিলেন জ্যোতি বসু, সেই পথে হাঁটতে নারাজ মমতা
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: বৃহস্পতিবার সহকর্মী স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে নবান্ন সভাঘরে দু’ঘণ্টারও বেশি সময় ঠায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জুনিয়র ডাক্তাররা নবান্নের দরজা থেকে ফিরে গেলেও মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, ধর্মঘটীদের উপর কোনওভাবেই এসমা (এসেনশিয়াল সার্ভিসেস মেন্টেইন্যান্স অ্যাক্ট) প্রয়োগ করা হবে না, পুলিসি বলপ্রয়োগও হবে না। বরং শান্তকণ্ঠে মমতার ঘোষণা—‘ওঁরা ছোট, ছোটদের ক্ষমা করতে হয়।’ যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, গত ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে ধর্মঘটীরা কাজে যোগ না দিলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে রাজ্য।
আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সূত্র বের করতে কার্যত ওইদিন থেকেই ‘দৌত্য’ শুরু করেছিলেন নবান্নের শীর্ষকর্তারা। মুখ্যমন্ত্রী নিজে আগ্রহী বৈঠক করতে—এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল আন্দোলনকারীদের কাছে। এমনকী, যাঁদের বিরুদ্ধে জুনিয়র ডাক্তারদের ন্যূনতম অভিযোগ আছে, সেই আধিকারিকদের বৈঠকেও রাখেননি মমতা। তারপরও বরফ না গলায় প্রশ্ন উঠছে, সদিচ্ছার অভাব কার?
৪০ বছর আগে ধর্মঘটীদের সব দাবি কিন্তু মহাকরণের বৈঠকেই ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছিলেন জ্যোতিবাবু। জনস্বার্থবাহী আন্দোলন নিয়ে সিপিএমের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘আপনাদের থেকে জনস্বার্থ শিখব? আগে স্ট্রাইক তুলুন, দাবি নিয়ে পরে ভাবব। সীমা ছাড়াচ্ছেন, বিপদে পড়বেন।’
১৯৮৩ সালের মার্চ মাস। জীবনদায়ী ওষুধ, ব্লাড ব্যাঙ্ক, ইসিজি, ২৪ ঘণ্টার এক্স-রে পরিষেবা সহ জনস্বার্থবাহী আরও বেশ কিছু দাবি আদায়ে আন্দোলনে নেমেছিল গোটা রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন। মিটিং, মিছিল, দফায় দফায় কর্মবিরতিতে লাটে উঠেছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা। ডাক্তারি কোর্সের কমপ্লিশন সার্টিফিকেট এবং ভাতা আটকে দেওয়ার হুমকির পাশাপাশি ‘পুলিসি দাওয়াই’ দিয়ে আন্দোলন আর আন্দোলনকারীদের কোমর ভেঙে দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। বাম সরকারের নির্দেশে ওই বছরের ৪ অক্টোবর রাতে পুলিসের বেপরোয়া লাঠিচার্জে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালের ২৫ জনেরও বেশি ডাক্তার গুরুতর আহত হন। গ্রেপ্তার হন ১৪ জন। ৪০ বছর পরে সতীর্থ তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের বিচার ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে ফের আন্দোলনে নেমেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তিন-তিনবার বৈঠকে অংশগ্রহণের আহ্বানের পরও শুধুমাত্র সরাসরি সম্প্রচারের শর্ত সামনে রেখে তা এড়িয়ে গেলেও, জ্যোতিবাবুর ‘পুলিসি দাওয়াই’ লাইনে হাঁটতে নারাজ বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।