তিনশো বছর ধরে দুর্গা আরাধনা চলছে কাশিমবাজার রাজবাড়িতে
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সেজে উঠছে কাশিমবাজার রাজবাড়ি। রাজবাড়ির দুর্গাদালানে রঙের প্রলেপ পড়েছে।
৩০০ বছর ধরে একই নিয়মে পুজো হয়ে আসছে রায় বাড়িতে। রথের দিন কাঠামো পুজোর মাধ্যমে উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়। অনন্ত চতুর্দশীর দিন মৃন্ময়ী প্রতিমায় সাদা রঙ করা হয়। মহালয়ার দিন দেবীর চক্ষুদান করা হয়। রাজবাড়ির মন্দিরে শুক্ল প্রতিপদ থেকে পঞ্চমী পর্যন্ত তিনজন পুরোহিত চণ্ডীপাঠ করেন। তিনজন দুর্গানাম জপ করেন। প্রধান পুরোহিত বিল্ববৃক্ষের শাখার পুজোপাঠ করেন। সাত পুরোহিত দিয়ে পুজো চলে।
ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস হয়। সপ্তমীতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হয়। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে কুমারী পুজো ও সধবা পুজো হয়। ভগবানগোলা বন্দরের পাশে পিরোজপুরে পিতৃপুরুষের ভিটেয় রায়দের দুর্গাপুজো হত। ১৭৩৫ সালে বর্গী আক্রমণে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসেন তাঁদের পূর্বপুরুষ অযোধ্যারাম রায়। কাশিমবাজারে বসবাস শুরু করার পর দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। ১৭৪৫ সালে ণ্ডীমণ্ডপ তৈরি হয়। এখনও সেই মণ্ডপে পুজো হচ্ছে। প্রতিপদের দিন কাটি গঙ্গা থেকে পবিত্র জল এনে ঘট স্থাপন করে পুজো শুরু হয়।
সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী, তিনদিনই পৃথক তিন কুমারীকে দেবীরূপে পুজো করা হয়। প্রায় ৪৪ বছর আগে রাজা কমলারঞ্জন রায়ের আমলে বলিদান প্রথা বাতিল হয়। সেই থেকে বলির বদলে দেবীকে রুইমাছের ঝোল ও কাঁচা সন্দেশ নিবেদন করা হয়। তুলট কাগজে হাতে লেখা ৪৫ পাতার প্রাচীন পুঁথি থেকে মন্ত্র পড়ে পুজো হয়। সপ্তমীর দিন সাতরকম, অষ্টমীর দিন আটরকম ও নবমীর দিন দেবীকে নয়রকম ভোগ দেওয়া হয়। তিনদিনই দেবীকে অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। থাকে ফ্রাইড রাইসও। ডাল-ভাতের সঙ্গে থাকে পাঁচরকমের ভাজা, আলু-কপির দলমা, পাঁচতরকারি, রুই মাছের ঝোল, শাক, চাটনি, পায়েস ও মিষ্টি। নবমীর দিন বোয়াল মাছের ঝোল, মোচার ঘণ্ট, লাউ-চিংড়ি, ইলিশ মাছের ঝোল, ভাপা ও ভাজা দেওয়া হয়। সন্ধিপুজোয় থাকে খিচুড়ি, আলু, বেগুন, পটলভাজা ও মাছভাজা। দশমীতে অপরাজিতা পুজো হয়।