নবদ্বীপ শৈব সংস্কৃতিরও ধারক ও বাহক, শ্রীচৈতন্য বুড়োশিবের মাথায় জল ঢেলে টোলে পড়তে যেতেন
নবদ্বীপ যে শৈব সংস্কৃতিরও নীরব ধারক ও বাহক, তা হয়তো অনেকেরই অজানা। শহরে রয়েছেন বিখ্যাত সাত শিব। তাঁদের মধ্যে বাবা বুড়োশিব প্রাচীনত্বের নিরিখে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
নবদ্বীপ বুড়োশিব মন্দিরের পরিচালন সমিতির কোষাধ্যক্ষ সত্তরোর্ধ্ব তপনকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, কষ্টিপাথর নির্মিত বুড়ো শিবলিঙ্গটি আনুমানিক হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন। অনেক আগে মন্দিরটি ঝোপ-জঙ্গলে ঘেরা ছিল। মন্দিরের পিছনে তখন একটা গোপন কুঠুরি ছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় সেখানে অনেক বিপ্লবী এসে গা ঢাকা দিতেন। মন্দিরে বুড়োশিবের সঙ্গে একটি অষ্টধাতুর দুর্গামূর্তিও ছিল। তবে বছর আঠারো-কুড়ি আগে সেটি চুরি যায়। দুর্গামূর্তিটি আর উদ্ধার হয়নি। বর্তমানে সিমেন্ট নির্মিত দুর্গামূর্তিতে নিত্যপুজো হয়।
মন্দিরের গর্ভগৃহে বুড়োশিবের বাঁপাশে পৃথক বেদিতে রয়েছেন ‘খুড়োশিব’। জনশ্রুতি, একবার মন্দির থেকে শিবলিঙ্গ চুরি হয়ে যায়। কিন্তু নিয়ে যেতে না পেরে চোরেরা মন্দিরের কাছের একটি কুয়োয় শিবলিঙ্গটি ফেলে দিয়ে পালায়। এদিকে বাবা বুড়োশিবের সন্ধান না পেয়ে মন্দির কর্তৃপক্ষ তাঁর আদলেই আর একটি কষ্টিপাথর নির্মিত শিবলিঙ্গ তৈরি করে মন্দিরে স্থাপন করেন। তিনিই বর্তমানে ‘খুড়োশিব’ নামে পরিচিত। পরবর্তীতে বাবা বুড়োশিব স্বপ্নাদেশ দিয়ে নিজের অবস্থান জানান। তখন তাঁকে কুয়ো থেকে উদ্ধার করে মন্দিরে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়।
মন্দিরের পূজারী শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের চেয়েও অনেক প্রাচীন এই মন্দির। বাংলার মন্দির স্থাপত্য রীতির নবরত্ন ঘরানার মন্দির এটি। মন্দিরের মূল গর্ভগৃহ পাতলা টালি-ইটের তৈরি। কথিত আছে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এখানে বাবার মাথায় জল ঢেলে প্রণাম করে নবদ্বীপের কিছু দূরে বিদ্যানগরের টোলে পড়তে যেতেন। বর্তমানে মন্দির প্রাঙ্গণেই লিজ ডেকে স্থানীয়দের মধ্যে মন্দির লিজ দেওয়া হয়।
অনেক আগে বুড়োশিবের মাথায় অব্রাহ্মণদের জল ঢালার অনুমতি ছিল না। এমনকী একসময় বাংলার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তরুণকান্তি ঘোষকেও জল ঢালতে দেওয়া হয়নি। এমনই নিয়মের কড়াকড়ি ছিল। কালের পরিবর্তনে সেই নিয়ম আজ শিথিল হয়েছে। নিত্যপুজো ছাড়াও বুড়োশিব মন্দিরে শিবের বিবাহ ও গাজন উৎসব বিশেষ জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়।