‘জল জীবন মিশন’-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন, বাজেট ছাঁটাইয়ের সুপারিশ

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: জল জীবন মিশনে ক্রমশ কমছে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ। স্নায়ুর চাপ বাড়ছে রাজ্যের উপর, সঙ্গে আর্থিক বোঝাও। এ নিয়ে রাজ্য বিধানসভার গত অধিবেশনেও সরব হয়েছিলেন অর্থ দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের অধীন ব্যয় সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ‘এক্সপেন্ডিচার ফিনান্স কমিটি’ সম্প্রতি মিশনের জন্য আগামী চার বছরে কেন্দ্রীয় সহায়তা বাবদ ৪৬ শতাংশ বাজেট ছাঁটাইয়ের সুপারিশ করেছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যগুলির ওপর প্রায় ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ভার চাপতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২০১৯ সালের ১৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জল জীবন মিশনের সূচনা করেন। লক্ষ্য ছিল, ২০২৪ সালের মধ্যে গ্রামে গ্রামে প্রতিটি বাড়িতে নলের জল পৌঁছে দেওয়া। প্রায় ১৬ কোটি পরিবারের জন্য এই জল সংযোগের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু ২০২৪-এর দোরগোড়ায় এসে দেখা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত মাত্র ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি সংযোগের কাজ শেষ করতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সূত্রের দাবি এই সময়সীমা বাড়ানোর পর, জল শক্তিমন্ত্রক কেন্দ্রের কাছে ২.৭৯ লক্ষ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের দাবি তোলে। তবে ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত বৈঠকে এক্সপেন্ডিচার ফিনান্স কমিটি জানিয়ে দেয়, তারা মাত্র ১.৫১ লক্ষ কোটি বরাদ্দের পক্ষেই মত দিচ্ছে। একই সঙ্গে মিশনের মোট প্রকল্প মূল্যও ৪১,০০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৮.৬৯ লক্ষ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়।
২০১৯ সালে যখন এই প্রকল্প শুরু হয়, তখন মোট প্রকল্পের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩.৬ লক্ষ কোটি টাকা। জল শক্তিমন্ত্রকের দাবি ছিল প্রায় দ্বিগুণ অর্থাৎ ৭.৮৯ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যেই রাজ্যগুলি ৮.০৭ লক্ষ কোটির প্রকল্প অনুমোদন করে ফেলেছে।
এর মধ্যে প্রায় ৭.৬৮ লক্ষ কোটির কাজ বরাতপ্রাপ্ত এবং ৩৮,৯৪০ কোটির কাজ বরাতের অপেক্ষায়। এই খরচ বৃদ্ধির জেরে কেন্দ্রীয় পর্যালোচনাকারীরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, কিছু রাজ্যে প্রকল্প ব্যয়ের হিসেব ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে, বিশেষ করে নির্বাচনি রাজ্যগুলিতে।
উদাহরণস্বরূপ, মহারাষ্ট্র, বিহার, তামিলনাডু ও অসমে ৩২,৩৬৪ কোটির প্রকল্প এখনও রাজ্য স্তরের অনুমোদনের অপেক্ষায়। কিন্তু যেহেতু এই অনুমোদন প্রকল্পের নির্ধারিত সময়সীমার বাইরে, তাই এই প্রকল্পগুলির কেন্দ্রীয় অংশ অর্থাৎ ১৭,৩৪৮ কোটি টাকাও এখন রাজ্যগুলিকেই বহন করতে হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।