ভবানীপুরে ভোটার তালিকা থেকে বাদ ৪৫ হাজার নাম! ক্ষুব্ধ মমতা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাইয়ের নির্দেশ

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২২:১৭: খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরেই নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে বড়সড় গরমিল নজরে আসতেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। খসড়া তালিকা থেকে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটারের নাম বাদ পড়ার তথ্য সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে তৃণমূল (TMC) নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে দলের বুথ লেভেল এজেন্ট (BLA)-দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন করে তথ্য যাচাই বা ‘স্ক্রুটিনি’ (Scrutiny) করার নির্দেশ দিলেন তিনি।
মঙ্গলবার নবান্ন (Nabanna) থেকে কালীঘাটের বাড়িতে ফিরেই ভবানীপুর বিধানসভা (Bhavanipur Assembly) এলাকার বিএলএ-দের (BLA) নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন মমতা। নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লক্ষ ৬ হাজার ২৯৫। অথচ ডিজিটাইজড বা ভেরিফায়েড তালিকায় নাম রয়েছে মাত্র ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৫০৯ জনের। অর্থাৎ, প্রায় ৪৪ হাজার ৭৮৬ জন ভোটারের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, যা মোট ভোটারের প্রায় ২১.৭১ শতাংশ।
বৈঠকে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, বাদ পড়া নামের একটি বড় অংশকে নির্বাচন কমিশন (Election Commission) ‘মৃত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নিজের বুথেই একাধিক জীবিত ভোটারের নামের পাশে ‘মৃত’ উল্লেখ করে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, “কীভাবে জীবিত মানুষদের মৃত দেখিয়ে তালিকা থেকে বৈধ ভোটারদের নাম মুছে ফেলা হচ্ছে?”
দলীয় সূত্রে খবর, কলকাতা পুরসভার ৭০, ৭২ এবং ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সর্বাধিক ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে। এর মধ্যে ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত হওয়ায় সেখানে স্ক্রুটিনিতে বিশেষ জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী।
বৈঠকে বিএলএ-দের একাংশ দাবি করেন, অনেক ভোটারকে ফর্ম দেওয়া হলেও তাঁরা তা পূরণ করে ফেরত দেননি, ফলে তাঁদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী কোনও অজুহাত শুনতে চাননি। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, প্রত্যেক বাদ পড়া ভোটারের বাড়িতে আবার যেতে হবে এবং সরেজমিনে যাচাই করতে হবে। ভবানীপুরে বাঙালি ভোটারদের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও ওড়িশার বাসিন্দাদেরও উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। ভিন্ রাজ্যের তালিকায় নাম থাকার কারণে যাতে এখানকার তালিকা থেকে কোনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ না যায়, সেদিকেও সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি। বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে বহুতল আবাসনগুলির ওপর।
সামনেই ভোটার তালিকা সংশোধনীর শুনানি শুরু হবে। সাধারণ মানুষ যাতে এই প্রক্রিয়ায় সমস্যায় না পড়েন, তার জন্য পাড়ায় পাড়ায় ‘মে আই হেল্প ইউ’ ক্যাম্প চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। ফর্ম পূরণে বা কাগজপত্রে সমস্যা হলে ভোটারদের বাড়ি গিয়ে হাতেকলমে সাহায্য করার কথাও বলেন তিনি।
এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, কলকাতার মেয়র তথা মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এজেন্ট ফিরহাদ হাকিম, দক্ষিণ কলকাতা জেলা সভাপতি দেবাশিস কুমার সহ দলের শীর্ষ নেতারা। বিএলএ-দের কাজের ওপর শীর্ষ নেতাদেরও নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ভবানীপুরের (bhawanipur) বিধায়ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।