উত্তর প্রদেশে দাপট বাড়ছে ডেঙ্গুর, সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে যোগী সরকার
জ্বর, মাথা ব্যাথা, খিঁচুনি নিয়ে রোজই হাসপাতালে আসছেন রোগীরা। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ডেঙ্গু(Dengue)-র দাপট বেড়েই চলেছে উত্তর প্রদেশে (Uttar Pradesh)। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এখনও অবধি মোট ২৩ হাজারেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন উত্তর প্রদেশে। ২০১৬ সালের পর এটিই সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা।
অজানা জ্বর হিসাবেই সেপ্টেম্বর মাস থেকে উত্তর প্রদেশে শুরু হয়েছিল ডেঙ্গুর প্রকোপ। কেবল ফিরোজাবাদেই এক সপ্তাহে জ্বরে মৃত্যু হয়েছিল ৬১ জনের। পরে রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে অজানা জ্বর যে আসলে ডেঙ্গুই, তা জানা যায়। দুই মাস পার হলেও সেই সংক্রমণের ধারা বজায় রয়েছে গোটা উত্তর প্রদেশ জুড়েই। কেবল লখনউতেই এখনও অবধি ১৫০০-রও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ফিরোজাবাদ, ঝাঁসি, গাজিয়াবাদ ও প্রয়াগরাজেও ক্রমশ বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ হাজার ১২৮।
লখনউয়ের শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি সিভিল হাসপাতালে পুরুষ ও নারী- দুই বিভাগেই ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিদিনই নতুন করে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এভাবেই চলতে থাকলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই হাসপাতালের সমস্ত বেড ভর্তি হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করার কাজও শুরু করা হয়েছে।একই অবস্থা বেসরকারি হাসপাতালগুলিরও। সেখানেও ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হওয়ার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। লখনউয়ের একাধিক ছোট হাসপাতালে শয্যা প্রায় পূর্ণ হতে চলেছে। এদিকে, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্ষাকাল থেকে জমা জলে যে সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, তা এখনও জারিই রয়েছে। একাধিক এলাকায় মশার সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানালেও, তারাবিশেষ কোনও পদক্ষেপ করেননি বলেই অভিযোগ।
এই বিষয়ে উত্তর প্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জয় প্রতাপ সিং জানান, যে জেলাগুলিতে ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে, সেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সরকারের তরফে টেস্ট, ট্রাক ও ট্রিটমেন্ট-এই মডেল অনুসরণ করেই ডেঙ্গু রোগী চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি, সাফাই কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে। মশানিধনের জন্য নিয়মিত স্প্রে করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষকেও সচেতন করার জন্য বাড়ি বাড়ি প্রচার চালানো হচ্ছে। রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে বেডের কোনও সঙ্কট নেই বলেই তিনি জোর দেন। মেডিকেল ও জেলা হসপাতালগুলিতেও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রয়েছে বলে দাবি করেন রাজ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
গাজ়িয়াবাদ জেলার চিফ মেডিক্যাল অফিসার জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য আধিকারিকরা ইতিমধ্যে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সচেতনতা প্রচার শুরু করা হয়েছে। সমীক্ষা করে দেখা হচ্ছে কারও বাড়িতে মশার লার্ভা রয়েছে কিনা। সতর্ক করার পরও একই বাড়িতে পুনরায় যদি লার্ভা মেলে তাহলে সেই পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য ভবনেরও তরফেও জানানো হয়েছে, এখনও অবধি কোনও রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়। যে সমস্ত রোগীরা ডেঙ্গু নিয়ে আসছেন, তাদের প্রত্যেককেই সরকারি অথবা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পাঠানো হচ্ছে। উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বর মাসে যখন উত্তর প্রদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছেছিল, সেই সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় দলকে পাঠাতে হয়েছিল।