এ দেশের প্রথম আধুনিক মানুষ-সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আজ ২২ মে, ১৭৭২ সালের আজকের দিনেই হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন রাজা রামমোহন রায়৷ অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে সমাজকে মুক্ত করার লড়াই তিনি লড়ে গিয়েছেন আমৃত্যু। নবজাগরণের পথিকৃৎ রাজা রামমোহন রায়ই ভারতের প্রথম আধুনিক পুরুষ। আজ তাঁর ২৫১ তম জন্মবার্ষিকী৷
বাবার সঙ্গে মতের মিল না হওয়ায়, অল্প বয়সেই তিনি ঘর ছাড়েন। হিমালয় এবং তিব্বত ঘুরে বাড়ি ফিরার পর তাঁর বাবা-মা সন্তানের মতি ফেরাতে তাঁর বিয়ে দিয়ে দেন। কিন্তু রামমোহন রায়কে কোনওভাবে বেঁধে রাখা যায়নি। হিন্দু ধর্মের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলে, জনমত গড়ে সমাজ সংস্কারই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। এ কাজে তিনি সফলও রয়েছিলেন।
সেই সময়ে বাংলায় নেমে এসেছিল কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা এবং অশিক্ষার কালো অন্ধকারে ৷ এই অন্ধকার দূর করতেই অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সেই কঠিন লড়াইয়ের ফলেই সতীদাহ প্রথার মতো ঘৃণ্য সামাজিক প্রথার অবসান হয়। ১৮১৪ সালে তিনি গড়ে তোলেন ‘আত্মীয়সভা’। ১৮২৮ সালে দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে ‘ব্রাহ্মসমাজ’ স্থাপন করেন রাম মোহন রায়।
পরবর্তীকালে এই ব্রাহ্মসমাজ এক সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন এবং বাংলার পুনর্জাগরণে পুরোধা অগ্রণী ভূমিকা নেয়। উপমহাদেশে জাতীয় চেতনার উন্মেষেও রামমোহন রায়ের অনেক অবদান ছিল। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর রামমোহন রায়কে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৮৩১ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের দূত হিসেবে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে যান তিনি।
আজকের দিনে দাঁড়িয়েও, নারীকে পুরুষের সমান স্থানটি পাওয়ার জন্য, নিজের অধিকারের জন্য, দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে যেতে হয়। কিন্তু, আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে, সতীদাহের মতো ভয়ঙ্কর একটি প্রথা কুরে কুরে খেয়ে নিয়েছিল সমাজকে, সেই সময়ে, রামমোহন রায়ের মতো মানুষই প্রথম রুখে দাঁড়ান এর বিরূদ্ধে। কোনও মহিলার স্বামীর মৃত্যুর পর, স্বামীর চিতাতেই সেই মহিলাকে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হত।
তিনি মহিলাদের সমান অধিকারের দাবিতে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনের অংশ হিসাবেই ছিল মহিলাদের সম্পত্তির অধিকার এবং পুনর্বিবাহের অধিকারের কথাও।
ভারতের নবজাগরণের এই প্রাণপুরুষকে ওনার জন্মবার্ষিকীতে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম।