দুই ২৪ পরগনা ভাগ করার রূপরেখা নিয়ে আলোচনা শুরু নবান্নে
পরিকল্পনা আগেই করা হয়েছিল। এ বার দুই ২৪ পরগনা জেলা ভাঙা নিয়ে নড়াচড়া শুরু হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষমহলে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, দুই ২৪ পরগনা জেলা কী ভাবে ভাগ করা হবে, তার রূপরেখা নিয়েই চর্চা চলছে নবান্নের অন্দরে।
প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, উত্তর ২৪ পরগনাকে দু’টি জেলায় ভাঙা হবে। তাতে বসিরহাট আলাদা জেলা হবে। বাকি অংশ সাবেক উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতেই থাকবে। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনা ভেঙে দু’টি নাকি তিনটি জেলা তৈরি করা হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সেই আলোচনায় দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে ভেঙে তিনটি জেলা করার উপরে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, আলিপুর সদর এবং ডায়মন্ড হারবার নিয়ে হবে একটি জেলা। তাতে থাকবে ১০টি ব্লক। বারুইপুর এবং ক্যানিং নিয়ে হবে দ্বিতীয় জেলা। সেখানে ব্লকের সংখ্যা হবে ১১। সুন্দরবন পৃথক জেলায় থাকতে পারে আটটি ব্লক। প্রসঙ্গত, সুন্দরবনকে আলাদা জেলা করার কথা মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন। কাজেই সুন্দরবন নামে একটি জেলা হবে, তা মোটামুটি ঠিক। যদি তিনটি জেলার পরিকল্পনায় সিলমোহর না পড়ে, সে ক্ষেত্রে সুন্দরবনের পাশাপাশি সাবেক দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থাকবে।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে অনেক জেলা ভেঙে নতুন জেলা হয়েছে। অতিমারি পরিস্থিতি কাটার পরে তাই ফের নতুন জেলা তৈরির ব্যাপারে তৎপর হয়েছে নবান্ন। পঞ্চায়েত ভোটের আগেই সম্ভবত সেই কাজ শেষ করার চেষ্টা করতে পারে প্রশাসনের শীর্ষ মহল। পর্যবেক্ষকদের মতে, নতুন জেলা তৈরি হলে দুই ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে নানা কাজে বর্তমানে শহরাঞ্চলে অবস্থিত জেলা সদরে আসতে হবে না। সেই সুবিধা পঞ্চায়েত ভোটে শাসকের রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে পারে।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, দুই ২৪ পরগনার আয়তন বিপুল। সেখানে জনসংখ্যাওপ্রচুর। ভৌগোলিক ভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তুলনায় কিছুটা জটিল। ফলে একটি জায়গা থেকে গোটা জেলাকে পরিচালনা করা সমস্যাবহুল। বরং জেলা ভেঙে ছোট পরিধি হলে প্রশাসনিক পরিচালনা অনেক সহজ হবে। সরকারি পরিষেবার বাস্তবায়ন আরও গভীর ভাবে করা সম্ভব। তার উপর জেলার সংখ্যা বেশি হলে বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদান বৃদ্ধির সম্ভাবনাও থেকে যায়। এই সব দিক থেকে জেলা ভাগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে বরং তা প্রশাসনিক কাজকর্মে সহযোগিতা করবে।
প্রশাসনের অনেকে এ-ও মনে করছেন, জেলা ভাগ হলে অফিসার পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সুবিধা হবে। যেমন একটা সময় পর্যন্ত কম সংখ্যক আইএএস অফিসার পেত রাজ্য। প্রবীণ অফিসারদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ক্যাডার রিভিউয়ের সময় রাজ্য যে সংখ্যক অফিসার দাবি করে কেন্দ্রের কাছে, নানা বিষয়ের সঙ্গে জেলার সংখ্যাও তখন খতিয়ে দেখা হয়। বর্তমান সরকারের আমলে জেলার সংখ্যা এমনিতেই বেড়েছে। গত কয়েকটি ব্যাচে আইএএস অফিসারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে সমান্তরালে। নতুন আরও কয়েকটি জেলা তৈরি হলে রাজ্য যেমন বেশি সংখ্যায় অফিসার পেতে পারে, তেমনই কর্মরত অফিসারদের কাজের পরিধিও আরও কিছুটা বাড়বে।