প্রধানমন্ত্রী পদে বসেই কাশ্মীর বিতর্ক উস্কে দিলেন শাহবাজ
প্রত্যাশামতোই পাকিস্তানের নয়া প্রধানমন্ত্রী হলেন শাহবাজ শরিফ। আর দায়িত্ব গ্রহণের পরই উস্কে দিলেন কাশ্মীর ইস্যু। সোমবার কোনও বিরোধিতা ছাড়াই দেশের নয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করে পাক পার্লামেন্ট। এরপরই তিনি জানিয়ে দেন, কাশ্মীর ইস্যুকে আড়াল করে রাখা যাবে না। পড়শি দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে তিনি অবশ্যই সুসম্পর্ক বজায় রাখবেন। কিন্তু কাশ্মীরের ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়ানোও তাঁর দায়িত্ব। ইমরান সরকার কূটনৈতিকভাবে ভারতের সঙ্গে যে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করেনি, এবার সেটা তিনি করবেন। কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আহ্বান জানান শাহবাজ। বলেন, ‘কাশ্মীরিদের রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে উপত্যকা। যখন জোর করে কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়েছিল, তখন আমরা কী পদক্ষেপ নিয়েছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে কাশ্মীর নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতেই হবে।’
সোমবার রাতেই শাহবাজের শপথগ্রহণ। জানা গিয়েছে, তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় তিন বছর পর পাকিস্তানে ফিরছেন তাঁর দাদা তথা পিএমএলএন সুপ্রিমো নওয়াজ শরিফ। দলীয় নেতা মিয়া জাভেদ লতিফ জানান, মে মাসে ঈদের পরই লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন নওয়াজ। ভাইয়ের শপথগ্রহণে হাজির থাকতে না পারলেও নয়া প্রধানমন্ত্রীর শাসনেই একেবারে দেশে ফিরতে চলেছেন তিনবারের এই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
এদিনই এক অর্থ তছরুপ মামলায় শাহবাজের অন্তবর্তী জামিনের মেয়াদ ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এদিন প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত হওয়ার পরই তিনি জানান, সব অভিযোগ মিথ্যা। যদি তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ মেলে তখনই ইস্তফা দেবেন। এদিনই প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইস্তফা দেন ইমরান খান। তবে একইসঙ্গে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, সংসদ অধিবেশনেও তিনি থাকবেন না। কারণ যাঁরা দেশের ক্ষমতার সঙ্গে ডাকাতি করেছে, তাঁদের সঙ্গে একই কক্ষে তিনি বসে থাকতে পারবেন না। তাঁরই পথ অনুসরণ করেন তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী শাহ মাহমুদ কুরেশিও। প্রথমে প্রার্থীপদ থেকে নাম প্রত্যাহার করেন। তারপর সংসদ কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান। এরপর একে একে ইমরানের দলের সব সদস্যই সভাকক্ষ থেকে ওয়াকআউট করেন। তাঁরা জানিয়ে দেন যে, নয়া প্রধানমন্ত্রী ঘোষণার অধিবেশনে তাঁরা কেউই থাকবেন না। ফলে ৭০ বছরের শাহবাজ কার্যত বিরোধী শূন্য সংসদে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত হন। পিএমএলএন সদস্যরা ছাড়াও তাঁর পক্ষে ভোট দেন পাকিস্তান পিপসল পার্টি, মুত্তাহিদা মজলিস-ই আলম সহ আরও বেশ কয়েকটি দলের সদস্যরা।
৩৪২ সদস্যের পাক পার্লামেন্টে পূর্ণ সমর্থন পেতে শাহবাজের প্রয়োজন ছিল ১৭২ ভোটের। তিনি পান ১৭৪ ভোট। দেশের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হলেন শাহবাজ। এর আগে দেশের সবচেয়ে জনবহুল এবং রাজনৈতিকভাবে অস্থির বলে পরিচিত পাঞ্জাব প্রদেশে তিন মেয়াদে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এবার তাঁকেই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিল পার্লামেন্ট।
অন্যদিকে, ইমরান ক্ষমতাচ্যূত হওয়ায় সমালোচকদের একাংশ পুরোপরি দোষ চাপিয়েছে দেশের সেনাবাহিনীর উপর। রবিবারই দেশজুড়ে ইমরান সমর্থকরা প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হন। মিছিলের নেতৃত্ব দেন প্রাক্তন অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ। সেনাকে কটাক্ষ করে তিনি স্লোগান তোলেন, ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’। প্রতিবাদীদের দাবি, সেনা প্রভাব খাটিয়ে ইমরানের বিরুদ্ধে সমর্থন চুরি করেছে।