রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন এবং যীশু পুজো: সর্বধর্মের মহামিলন
যত মত তত পথের দিশারী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। তাঁর আদর্শেই রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। প্রতি বছর বেলুড় মঠে সাড়ম্বরে পালিত হয় প্রভু যীশুর পুজো। অন্যান্য উৎসবের মতোই এখানে যথার্থ মর্যাদার সঙ্গে যীশুর আরাধনা করা হয়। কেক, মিষ্টি, পেস্ট্রি, বিভিন্ন ধরনের ফলসহ পানীয়, চকলেট প্রভৃতি খাদ্য সামগ্রী পরিবেশন করা হয় প্রভুকে। বড়োদিনের আগের দিন সন্ধ্যারতির পর সুসজ্জিত করে তোলা হয় প্রভু যীশুর আরাধনার জায়গাকে, তারপরেই বেলুড় মঠের সাধু সন্ন্যাসী ও মহারাজরা যীশুর পুজো করেন। শাস্ত্র মেনে বড়দিনের আগের দিন রামকৃষ্ণদেবের সামনেই প্রভু যীশুর আরাধনা করা হয়। ক্যারলের মাধ্যমে প্রভু যীশুর আরাধনা করা হয়।
শম্ভুচরণ মল্লিকের মুখে বাইবেল পাঠ শুনে, খ্রিস্টমতে সাধনা করে সত্য উপলব্ধির ইচ্ছে হয় পরমহংসদেবের। তারপর যীশুর আরাধনা করেন, ওই সময় তিনি কালীঘরে যাওয়াও বন্ধ করেছিলেন। একদিন যীশুর দিব্যদর্শনও লাভ করেছিলেন তিনি। তাঁর ঘরে হিন্দু দেবদেবীদের সঙ্গে যীশুর একটি ছবি ছিল, সেটিতে তিনি প্রত্যহ সকাল ও সন্ধ্যায় ধূপারতি করতেন।
শ্রীরামকৃষ্ণের পার্শ্বজ শিষ্যদের একটি দল হুগলির আঁটপুরে বাবুরাম মহারাজ অর্থাৎ স্বামী প্রেমানন্দের পৈতৃক বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। একদিন সন্ধ্যার পর বিবেকানন্দ যীশুর পবিত্র চরিত্রের আলোচনা করতে করতে সমস্ত রাত্রি অতিবাহিত করছিলেন। ওই দিন ধুনি জ্বেলে তাঁরা পবিত্র অগ্নির সামনে সেই দ্বাদশ শিষ্যের মতো সংসার ত্যাগ করে পরহিতে জীবন উৎসর্গের শপথ গ্রহণ করেন। দিনটি ছিল বড়দিনের আগের দিন। ২৪ ডিসেম্বর রাতে আঁটপুরে ভাবী রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের বীজ বপন করা হয়েছিল।
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের কেন্দ্রগুলিতে আজও বড়দিনে যিশুর জন্মোৎসব পালিত হয়। ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যারতির পর শুরু হয় যীশুর আরাধনা, ক্যারলের মাধ্যমে পুজোর সূচনা হয়। শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দিরে যীশুর ও মেরিমাতার ছবি মোমবাতি, ফুল দিয়ে সাজানো হয়। কেক, লজেন্স, ফল, পেস্ট্রি ও মিষ্টি দেওয়া হয়। ২৫ ডিসেম্বর ইংরেজি ও বাংলায় বাইবেল ও যীশুর জন্মকাহিনি পাঠ করা হয়। উপস্থিত থাকেন বেলুড় মঠের সন্ন্যাসীরা ও ভক্তগণ। এইভাবেই যীশু রামকৃষ্ণের সঙ্গে মিশে গিয়ে একাত্ম হয়ে গিয়েছেন। হয়ে উঠেছেন সকলের আরাধ্য। দু-হাত বাড়িয়ে যীশুর পবিত্র আহ্বান, আর রামকৃষ্ণের শিব জ্ঞানে জীব সেবা; দু’য়ে মিলে এক হয়ে গিয়েছে।