এ শহরে রাজপথের নকশিকাঁথায় সবুজ-মেরুনের চিরবসন্ত
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাঙালির আবেগ, বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস এবং ভালবাসায় ১৮৮৯ সালের ১৫ আগস্ট উত্তর কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মোহনবাগান। স্বাধীনতার আগে খালি পায়ে প্রথম ফুটবল খেলে IFA শিল্ড জয় আর স্বাধীনতার পরে বুট পড়ে বিদেশী কোনও দলকে হারিয়ে ইতিহাস সৃস্টি, এক মাইলফলক স্পর্শ করেছিল মোহনবাগান। শহরের বুকে এই ক্লাবের নামে কিছু রাস্তা হয়ে উঠেছে যেন সবুজ-মেরুনের চিরবসন্তের নকশিকাঁথা।
এবারে আসি গোড়ার কথায়। শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ের কাছে দুটি রাস্তা আপার সার্কুলার রোডেতে মিশেছে, তার মধ্যে একটির নাম মোহনবাগান লেন। জানা গেছে, ১৮৮৭ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের মানচিত্রে মোহনবাগান রো ও মোহনবাগান লেন নামে ২টি রাস্তার উল্লেখ আছে। যাইহোক, মোহনবাগান লেন তৈরীর জন্য জমি দান করেছিলেন তৎকালীন বিশিষ্ট ধনী ব্যক্তি কীর্তিচন্দ্র মিত্র। মোহনবাগান লেন আর ফড়িয়াপুকুর স্ট্রিটের মাঝের বিরাট বাগানকেই বলা হত ‘মোহনবাগান’। এর মালিক ছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ দেবের পুত্র গোপীমোহন দেব। পরে তাঁর উত্তরাধিকারীর কাছ থেকে ‘মোহনবাগান’ কিনে নেন কীর্তিচন্দ্র মিত্র। তিনি সেই বাগানে বিরাট এক অট্টালিকা তৈরী করান, যার নাম রাখা হয় ‘মোহনবাগান ভিলা’।
এই মোহনবাগান লেনে এখনও রয়েছে IFA শিল্ড জয়ী অমর একাদশের মূর্তি। হেলিকপ্টার থেকে ফুল পড়া থেকে শুরু করে সেনা টহলের সোনালী ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও বেঁচে আছে মোহনবাগান লেন আর মোহনবাগান রো। শোনা যায়, ১৪ নম্বর বলরাম ঘোষ স্ট্রিটে ভূপেন্দ্র নাথ বসুর বাড়িতে মোহনবাগানের প্রথম সভা হয়েছিল । মোহনবাগান প্রতিষ্ঠা হওয়ার ২ বছর পর এই ক্লাব চলে যায় শ্যামপুকুরে দুর্গাচরণ লাহাদের মাঠে। এটাই ছিল মোহনবাগানের প্র্যাকটিস মাঠ, যা এখন লাহা কলোনির মাঠ বলে পরিচিত।
১৩৪ বছর ধরে নানা স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও এগিয়ে চলেছে গঙ্গাপারের ক্লাব৷ মোহনবাগান রো আর মোহনবাগান লেনের পাড়ায় থাকতে পেরে আজও গর্ব বোধ করেন নবীন থেকে প্রবীন বাসিন্দারা। ইতিমধ্যেই কলকাতার গন্ডি পার করে শিলিগুড়ির মহানন্দা সেতুর নীচে রাস্তার নামকরণ হয়েছে মোহনবাগান অ্যাভিনিউ। এভাবেই হয়ত আগামীদিনে বাংলার সব জেলায় ছড়িয়ে পড়বে মোহনবাগান। হয়ত একদিন সে সব জেলার রাজপথের অলিতে গলিতে কানপাতলেই শোনা যাবে সেই চেনা সুরের আবেগ মাখা গান, “আমাদের সূর্য মেরুন, নাড়ির যোগ সবুজ ঘাসে…”
ভাষ্য পাঠ: মধুরিমা রায়
সম্পাদনা: মোঃ রবিউল ইসলাম
তথ্য গবেষণা: মানস মোদক