আন্তর্জাতিক বিভাগে ফিরে যান

এক যাত্রায় পৃথক ফল? ভারত-কানাডা টানাপোড়েনে দাদাগিরি আমেরিকার?

September 23, 2023 | 3 min read

ভারত-কানাডা টানাপোড়েনে দাদাগিরি আমেরিকার?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: এক যাত্রায় পৃথক ফল! এক দেশ করলে ‘সব কুছ ঠিক হ্যায়’, অন্য দেশের বেলা খবরদারি? ২০১১ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা আমেরিকাবাসীকে জানিয়ে দেন ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের গোপন আস্তানায় হত্যা করা হয়েছে। অ্যাবোটাবাদে অভিযান চালিয়ে আমেরিকা কি পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছিল? উত্তর সকলেরই জানা। কিন্তু মার্কিনিরা মনে করে, বিশ্বের যেকোনও প্রান্তে গিয়ে নিজেদের শত্রুকে মারার অধিকার তাদের রয়েছে। নীতি, নৈতিকতার কোনও তোয়াক্কা করা হয় না!

এন্টেব বিমানবন্দরের অভিযান মনে পড়ে? প্যালেস্টিনিয়ান জঙ্গিরা ৯৪ জন ইজরায়েলি এবং ১২ জন এয়ার ফ্রান্সের ক্রুকে বন্দি করে রেখেছিল? উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইদি আমিন ব্যক্তিগতভাবে জঙ্গিদের ফেরার পর অভ্যর্থনা জানান। ইজরায়েল কি চুপ করে বসেছিল? না। বরং ইজরায়েল কমান্ডো অভিযান চালিয়ে বিমানঘাঁটিতে থাকা সমস্ত জঙ্গি এবং উগান্ডার ৪৫ জন সৈন্যকে হত্যা করে। উগান্ডার বিমানবাহিনীর এগারোটি বিমানও ধ্বংস করেছিল ইজরায়েল।

খলিস্তানি জঙ্গিদের নিয়ে ভারত-কানাডা কূটনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যেই মুখ খুলেছে আমেরিকা। উদ্বেগ প্রকাশ করে বাইডেন প্রশাসন জানিয়েছে, এই ঘটনা নিয়ে কানাডার তদন্ত চালিয়ে যাওয়া উচিত। শাস্তি দিতে হবে দোষীদের। প্রসঙ্গত, কানাডার তরফে বলা হয় সেদেশের নাগরিক খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনে ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে এই দাবি নস্যাৎ করে ভারত জানিয়েছে, অবাস্তব মন্তব্য করছে কানাডা। এক মুহূর্তের জন্য ধরে নেওয়া যাক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কাছে প্রমাণ রয়েছে খালিস্তান আন্দোলনকর্মী হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার পিছনে মোদী সরকারের ভূমিকা রয়েছে। নিজ্জর হয়ত ভারতের নিরাপত্তার জন্য বিপদজনক হয়ে উঠছিলেন। তিনি হয়ত কানাডায় খালিস্তানপন্থী আন্দোলনের একজন প্রধান নেতা ছিলেন। কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে যা ঘটে তা পাঞ্জাবে প্রভাব ফেলতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইজরায়েল যদি শত্রু দমন করতে অন্য দেশে হত্যাকাণ্ড চালাতে পারে, সেক্ষেত্রে ভারত কি পারে না? ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (RAW)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। সবার আগে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে শক্তি বাড়িয়েছে R&AW। এছাড়াও, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার এবং মালদ্বীপের মতো দেশের উপরেও নজরদারি চালায় তারা।
শুধুমাত্র প্রতিবেশি এলাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে নয়, আরও বৃহত্তরে এক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার এগোনো উচিত। খালিস্তানপন্থী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এমনই মনে করছেন কেউ কেউ। লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনে আক্রমণ করে খালিস্তান প্রতীকসহ যাঁরা তেরঙা পতাকা লাগাতে চেষ্টা করে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কি উচিত নয়? কতজন কানাডিয়ান শিখ খালিস্তানের দাবিকে সমর্থন করে? এ বিষয়ে গণভোট করা কি ঠিক? সোমবার নিজের দেশের সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সাফ জানান, কানাডার নাগরিক খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনের নেপথ্যে ভারতীয়দের হাত থাকতে পারে বলেই তদন্তকারীদের অনুমান। তাঁর এহেন দাবির পক্ষে প্রমাণ মিলেছে বলেও জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী। তারপরই কানাডার বিদেশমন্ত্রী জানান, কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিকদের মধ্যে অন্যতম প্রধান এক আধিকারিককে বহিষ্কার করা হয়েছে।

কানাডার এই আচরণের পালটা তোপ দেগেছে ভারত। কড়া ভাষায় বিবৃতি জারি করে বিদেশ মন্ত্রক জানায়, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে কানাডার কূটনীতিকরা। তাছাড়াও ভারতবিরোধী কাজের সঙ্গেও তাঁদের যোগ রয়েছে। সমস্ত বিষয়টি নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। সেই কারণেই কানাডার এক কূটনীতিককে পাঁচদিনের মধ্যে দেশে ফিরতে নির্দেশ দেয় বিদেশ মন্ত্রক।

গোটা ঘটনার দিকে নজর রাখছে বলে জানিয়েছে আমেরিকা। সেদেশের জাতীয় সুরক্ষা কাউন্সিলের মুখপাত্র একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। সেখানেই বলেন, ভারত সম্পর্কে কানাডার এহেন অভিযোগ নিয়ে আমেরিকা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। এই ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত চালিয়ে যাক কানাডা। দোষী প্রমাণিত হলে তাদের যথাযথ শাস্তি দিতে হবে।

অন্যদের দেশে গিয়ে, সে’দেশের নাগরিককে মারা কি নীতিগতভাবে বৈধ। সে যতই শত্রু হোক? নৈতিকতাকে সরিয়ে দিয়েও, কানাডার মাটিতে কানাডার নাগরিক একজন খালিস্তানিপন্থী আন্দোলনের কর্মীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা কি যুক্তি সঙ্গত? সামগ্রিক ঘটনাক্রমে পরিস্থিতি এখন উত্তাল। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর দাবি ঘিরে উত্তেজনা চলছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক ‘ইটের বদলে পাটকেল’ পর্যায় দাঁড়িয়ে আছে। নিষেধাজ্ঞা, নির্দেশিকার বহরে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে।

প্রশ্ন নিজ্জর কি সত্যি সত্যি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠেছিলেন? নিজ্জরকে হত্যার উদ্দেশ্য কি প্রবাসী শিখদের খালিস্তানের দাবিতে আন্দোলনে নামার আগে হুঁশিয়ারি দেওয়া? লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (RUSI) দক্ষিণ এশিয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ওয়াল্টার ল্যাডউইগ ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, R&AW পাশ্চাত্যে কাজ করে না বা করতে ইচ্ছুক ছিল না। কিন্তু তাঁর অনুমান এখন হয়ত সিদ্ধান্ত বদল করতে পারে R&AW।

কানাডার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জোডি থমাস কানাডার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কোন দেশগুলো এমন করতে পারে, তার একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তিনি রাশিয়া, ইরান, ভারতকে সন্দেহের তালিকায় রাখছেন। চীনকেও সন্দেহের বাইরে রাখা হচ্ছে না। কানাডার বিরোধীদলীয় নেতা, পিয়েরে পোইলিভরে ট্রুডোর সঙ্গে চীনের গোপন সম্পর্কের সমীকরণের কথা বলছেন। গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে মার্কিন মুলুক। ওয়াশিংটন বিষয়গুলি দ্রুত মিটিয়ে নিতে চাইছে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বিডেন ঘোষণা করেছেন, তিনি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি হয়ে আসছেন।

তবে ট্রুডো এখনও কিছুই প্রকাশ্যে আনেননি। নিজ্জর হত্যাকাণ্ডটি খালিস্তান আন্দোলনের একটি প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর কাজও হতে পারে। কানাডার প্রাক্তন নিরাপত্তা প্রধান রিচার্ড ফ্যাডেন ট্রুডোর অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়েও বলছেন। নিজ্জর হত্যার সঙ্গে কোনওভাবে R&AW জড়িত ছিল বলে প্রমাণ নেই। প্রাক্তন R&AW কর্তাদের বক্তব্য, কানাডা কী প্রমাণ পেশ করে, তা তারা দেখবেন। আপাতত এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে গোটা পর্ব।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#India, #USA, #Canada

আরো দেখুন