বাংলার দুগ্গা পুজো: চুঁচুড়ার দত্তবাড়ির পুজোর নেপথ্যে এক অজানা ইতিহাস
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দুর্গাপুজো মানে সকলের মনের উৎসব, প্রাণের উৎসব। চুঁচুড়ার বনেদি বাড়ির এই প্রাণের উৎসবের মধ্যে ২৮০ বছর প্রাচীন দত্তবাড়ির পুজো অন্যতম। জানা গিয়েছে, এই দত্ত পরিবারের আদি বসতবাটি বর্ধমানের কুরমুন-সোনাপলাশি এলাকায়। বিত্তশালী দত্তবাড়িতে একবার চিঠি দিয়ে ডাকাতদলের পান্ডা ডাকাতির দিনক্ষণ জানিয়েছিল। ওই নির্দিষ্ট দিনে ডাকাতদের না ঠেকিয়ে বরং সদর দরজা খোলা রেখেছিলেন পরিবারের কর্তারা। এছাড়াও, ডাকাতদলের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এতে খুশি হয়ে সেই ডাকাতদলের পান্ডা দত্ত পরিবারকে লাল শালুতে মোড়া অষ্টধাতুর সিংহবাহিনী দুর্গামূর্তি দিয়ে যান। সেদিন থেকে বর্ধমানের বাড়িতে মায়ের পুজো চলে আসছে।
১৭৪২ সাল নাগাদ বর্গী হানা হলে পরিবারের কর্তা রামচন্দ্র দত্ত, পুত্র গোপীচরণ দত্ত পরিবারের অন্যান্যদের নিয়ে চুঁচুড়ায় চলে আসেন। সঙ্গে আনেন সিংহবাহিনীর মূর্তি। সেই থেকে এখানেই রীতিনীতি মেনে পুজোর সূচনা হয়।
দেবী এখানে চর্তুভুজা। দুর্গাপুজোর কয়েকদিন ঠাকুর দালানে মায়ের মূর্তি এনে পুজো করা হয়। এছাড়া এই বাড়িতে নারায়ণ শীলা ও লক্ষ্মীমায়ের সঙ্গে দেবী দুর্গারও নিত্য পুজো হয়। চুঁচুড়ার দত্তবাড়ির মা দুর্গাকে নিয়ে আজও অনেক কাহিনি ছড়িয়ে রয়েছে এলাকায়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ভক্তিভরে ডাকলে মা বিপদত্তারিনী রূপে দেখা দেন। আজও পূর্ণিমার রাতে ঘুঙুর পরে দেবীর হেঁটে যাওয়ার শব্দ শুনতে পান অনেকে। রীতি মেনে প্রতি বছরে একবার গঙ্গাপাড়ের আত্মীয়বাড়িতে হাওয়া খেতে যান মা।
এখানে কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে হয় মায়ের বোধন। সেইদিন থেকেই শুরু হয় চণ্ডীপাঠ। পরিবারের সদস্যরা নিরামিষ আহার করেন। ষষ্ঠীর দিন ঠাকুর দালানে সুবিশাল সিংহাসন সাজানো হয়। তার উপরে দেবীকে অধিষ্ঠিত করা হয়। অষ্টমীর দিন পরিবারের মহিলারা উপোস ব্রত পালন করেন। নবমীতে বিভিন্ন ধরনের নাড়ুর পাশাপাশি আতপ চালের বিশেষ ভোগ নিবেদন করা হয়। বিজয়া দশমীতে বিগ্রহ ঠাকুর দালানের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। গঙ্গায় নিরঞ্জন করা হয় মায়ের ঘট।
পুজোর কটা দিন দত্তবাড়িতে ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পরিবারের সদস্যরা পুজোর সময় বাড়িতে মিলিত হন। সব মিলিয়ে দত্ত বাড়ির পুজো মানে এখনও একটা জমজমাট পরিবেশ।