স্বাস্থ্য বিভাগে ফিরে যান

আর্সেনিক অ্যালবামের ব্যবহার নিয়ে চিন্তায় চিকিৎসকমণ্ডল

August 10, 2020 | 2 min read

আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। সংক্রমণ থেকে নাকি বাঁচাতে পারে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ আর্সেনিক অ্যালবাম (আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০)। কখনও চিকিৎসকের দাবী, কখনও সরকারি নিদান— লকডাউন পর্বে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে স্মার্টফোনে স্মার্টফোনে আজও ঘুরছে ওষুধটির ছবি। যার ফল দাঁড়িয়েছে মারাত্মক। 

লকডাউনের সাড়ে চার মাসে রাজ্যে বিক্রী হয়েছে আর্সেনিক অ্যালবামের কয়েক কোটি ডোজ। ১০, ৩০, ১০০, ৪৫০ মিলিলিটার—যে কোম্পানি যেভাবে পেরেছে, হাজার হাজার শিশি এই ওষুধ বেচেছে। আর মানুষ করোনা আতঙ্কে দলে দলে, এমনকি লাইন দিয়েও তা কিনেছেন।

করোনা পরিস্থিতিতে গত ৬ই মার্চ ইমিউনিটি বর্ধক হিসেব আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০-এর নাম ঘোষণা করেছিল আয়ুষ মন্ত্রক। বলা হয়েছিল, খালি পেটে পরপর তিনদিন এই ওষুধ খেতে হবে। পরের মাসে সেই একই ডোজ চলবে। শীর্ষ হোমিও গবেষণা সংস্থা সিসিআরএইচের নিদানও তাই। 

প্রথম মাসে পরপর তিনদিন খালি পেটে বড়দের চারটি ও ছোটদের দু’টি করে এই ওষুধের দানা খেতে হবে। পরের মাসেও তাই। ডোজ চালিয়ে যেতে নিতে হবে ডাক্তারি পরামর্শ। চিকিৎসরা বলছেন, প্রতিদিন একফোঁটা করে খেতে হবে এই আর্সেনিক অ্যালবাম। এই ওষুধের এক মিলিলিটার হল ১৬ থেকে ২০ ফোঁটা। এটা তিনজন মানুষের দু’মাসের ডোজ।

হোমিওপ্যাথিক ওষুধ শিল্পমহল সূত্রের খবর, ওই নির্দেশনামা জারির পর শুধু সাড়ে চার মাসে রাজ্যে অন্তত ১০ লক্ষ শিশি আর্সেনিক অ্যালবাম-৩০ বিক্রী হয়েছে। অন্য হোমিওপ্যাথি তো বটেই, মডার্ন মেডিসিনের বহু চলতি ওষুধের বিক্রী ছাপিয়ে গিয়েছে। ডোজের হিসেব ধরলে তা কয়েক কোটি। হোমিওপ্যাথিক ওষুধের এমন প্রচার ও প্রসারে সন্তোষ বাড়লেও, চিকিৎসকরা প্রমাদ গুনছেন অন্য কারণে। রাজ্যের বহু জায়গায় ডোজ না মেনে যে যেভাবে পারছেন, এটি খেয়ে চলেছেন!

হোমিও ডাক্তারবাবুদের অনেকের মধ্যে ডোজ নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। তেমনই বেশী খেলে বেশী ইমিউনিটি ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধ মানে কিছু হবে না— এই ধারণায় অনেকে খুশিমতো আর্সেনিক অ্যালবাম খাচ্ছেন। বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, বহু হোমিও ওষুধ কোম্পানির কর্তারা জানাচ্ছেন, অবিলম্বে মানুষ সচেতন না হলে লাগাতার সেবনে আর্সেনিকের ক্রনিক কুপ্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। যেমন ডায়ারিয়া, হার্টের অসুখ, তীব্র শ্বাসকষ্ট, গায়ে র‌্যাশ, এমনকী ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।

একটি বড় হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্ণধার জানিয়েছেন, এপ্রিলের শেষদিক থেকে বিভিন্ন পরিমাপের প্রায় দু’লক্ষ শিশি আর্সেনিক অ্যালবাম-৩০ বিক্রী হয়েছে। অন্য একটি নামকরা সংস্থার দাবী, লকডাউন পর্বে বিভিন্ন পরিমাপের প্রায় এক লক্ষ শিশি এই ওষুধ বিক্রী হয়েছে। ডোজের হিসেবে প্রায় ৪ কোটি ২৭ লক্ষ ২৭ হাজার। দেশের একটি বড় হোমিও ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার এরাজ্যের মার্কেটিং কর্তা ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, লকডাউন পর্বে আমাদের ১০ হাজার দোকান থেকে প্রায় দেড় লক্ষ শিশি আর্সেনিক অ্যালবাম বিক্রী হয়েছে।

বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা বলেন, পাট, মুগ ডাল প্রভৃতির উপর আর্সেনিক অ্যালবামের প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ওষুধটি জিনগত পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। সুতরাং ইচ্ছেমতো খেয়ে গেলে কিন্তু সমস্যা হতে পারে। এতে খুব কম মাত্রায় আর্সেনিক থাকায় হুট করে মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা কম। কিন্তু ডাক্তারবাবুর পরামর্শ না মেনে খেলে ডায়নামিক পয়জনিং হয়ে শরীরের জিনগত কাঠামো বদলে যেতে পারে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#covid-19, #Arsenic Album

আরো দেখুন