লক্ষ্মী সরার ইতিবৃত্ত: জানেন কত রকমের সরা হয়?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: পূর্ববঙ্গে মূলত সরাতেই লক্ষ্মীপুজো হয়। পূর্ববঙ্গের ঢাকা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ ইত্যাদি এলাকা থেকে সরায় লক্ষ্মী পুজোর প্রচলন ঘটেছিল। কুমোররা সরার উপর রঙের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুললেন নানান ছবি।
লক্ষ্মী সরা প্রধানত চার প্রকারের। ফরিদপুরি সরা, সুরেশ্বরী সরা, গণকা সরা, আচার্যী সরা ইত্যাদি।
ফরিদপুরি সরার জন্ম ফরিদপুরে। এই সরায় মাঝে থাকেন মা লক্ষ্মী, দুই পাশে থাকেন তাঁর সহচরী জয়া ও বিজয়া। উপরে থাকেন লক্ষ্মী নারায়ণ নীচে থাকেন পেঁচা ও ময়ূর। মা লক্ষ্মীর হাতে থাকে গাছকৌটো।
ফরিদপুরের এক গ্রাম সুরেশ্বর, সেখান থেকে সুরেশ্বরী সরার উৎপত্তি। এই সরায় মূলত মা দুর্গা সপরিবারে থাকেন। নীচে থাকেন মা লক্ষ্মী।
আচার্য ও গণকরা অতীতে এই সরা আঁকতেন তাই এমন নামকরণ। এছাড়াও আছে ঢাকাই সরা। এই সরার উপরে থাকেন লক্ষ্মী-নারায়ণ, নীচে নৌকায় লক্ষ্মী ও তাঁর সহচরীরা থাকেন। ঢাকাই সরার জন্ম হয়েছিল ঢাকায়। এই সরার চারদিকের কিনারাগুলো উঁচু, মাঝের উত্তল অংশটি খুব বেশি উঁচু নয়। উপরিভাগে সাদা রঙের প্রলেপ দেওয়া থাকে। নারায়ণ ও লক্ষ্মীকে এই সরায় পরস্পরের মুখোমুখি দন্ডায়মান অবস্থায় দেখানো হয়। তাঁদের হাতে ধরা থাকে ফসলের শীষ। লক্ষ্মী তাঁর পদ্মাসনে থাকেন। তাঁর পায়ের কাছে থাকে রত্নাধার ও বাহন পেঁচা। ঢাকাই সরা নানা রকমের হয়। কোনওটায় জোড়া লক্ষ্মী থাকে, কোনওটিতে পাঁচ লক্ষ্মী, কোনওটাতে আবার লক্ষ্মীর সঙ্গে থাকেন চার সখী কিংবা রাধাকৃষ্ণ।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই এখন সরার পরিবর্তে মাটির মূর্তিতে পুজোর প্রচলন করছেন। কিন্তু শস্য-শ্যামলা গ্রামবাংলার এ এক অন্যতম পুজো। সরায় লোকশিল্পের ছোঁয়া আজও বিদ্যমান।
আজও কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো অনেকেই সরায় করেন। একদা ১৩ রকমের সরা তৈরি হত। এখন তা চার বা ছয় রকমে এসে ঠেকেছে। একলক্ষ্মী সরায় লক্ষ্মীর দুপাশে পদ্ম, নীচে থাকে বাহন। তিন পুতুল সরাতে লক্ষ্মীর দুপাশে দুজন সখী থাকে। নীচে থাকে পেঁচা। সরার রঙ ঘন লাল। লক্ষ্মীর পট বা সরা লৌকিক ঐতিহ্যের ধারক। আসলে সরা গর্ভবতী নারীর প্রতীক। ফলত এর সঙ্গে উৎপাদনশীলতা ও সমৃদ্ধির যোগ রয়েছে।