কানে কানে কলকাতা কানেকশন বিভাগে ফিরে যান

কলকাতার ‘রিচম্যান’-দের নিয়ে ছড়াটি জানেন?

December 3, 2023 | 2 min read

গোবিন্দরামের বাড়ি,
বনমালী সরকারের ছড়ি,
উমিচাঁদের দাড়ি,
জগৎ শেঠের কড়ি।

পুরনো কলকাতাকে ব্যাখ্যা করার জন্যে, এর চেয়ে ভাল ছড়া আর বোধকরি নেই।

তবে এ ছড়ার কয়েকটি রূপভেদও দেখা যায়।
যেমন,
গোবিন্দরামের বাড়ি
বনমালী সরকারের ছড়ি
উমিচাঁদের দাড়ি
হুজুরিমলের কড়ি।

কোথাও কোথাও আবার রয়েছে, ‘গোবিন্দরামের ছড়ি/ বনমালী সরকারের বাড়ি’। কোথাও কোথাও আবার এই ছড়ায় গোবিন্দরাম মিত্রের জায়গায় নন্দরাম সেন, আর জগৎ শেঠের জায়গায় পোস্তার নকু ধরের নাম পাওয়া যায়। মোদ্দাকথা, সেকেলে কলকাতার রিচ ম্যানদের নিয়েই এ ছড়ার সৃষ্টি।

গোবিন্দরাম হলেন কুমারটুলির মিত্র বংশের বিখ্যাত সন্তান গোবিন্দরাম মিত্র। তিনিই ব্ল্যাক টাউনের ব্ল্যাক জমিনদার। তাঁর নবরত্ন মন্দির ছিল সেকালের কলকাতার প্রাইড। ১৭৩৭ সালের ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ে গোবিন্দরাম মিত্রের ব্ল্যাক প্যাগোডা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। কোম্পনির সাধারণ চাকুরে থেকে ধনকুবের হয়ে উঠেছিলেন, গোবিন্দরাম।

বনমালী সরকারের নামে আজও কলকাতার বুকে রাস্তা রয়েছে। এই বনমালী সরকার ছিলেন, পাটনার দেওয়ান। বেশ টাকা-কড়ি করেছিলেন বনমালী। কুমারটুলি এলাকায় বাড়িও করেন। সেকালের জনশ্রুতি, বনমালী সরকারের বাড়ি রাজপ্রাসাদের মতো ছিল বলে কলকাতায় আসা লোকজন তার বাড়ি দেখতে ভিড় জমাত। গোবিন্দরাম ও বনমালী সরকার, দুজনেরই পেল্লাই বাড়ি ছিল, সঙ্গে ছিল রাজার ন্যায় দাপট। ফলে এদের ক্ষেত্রে বাড়ি বা ছড়ি যথার্থ অর্থের ব্যবহৃত হয়েছে।

উমিচাঁদ ছিলেন ব্যবসায়ী। নুন আর আফিমে কারবার বেশ জমিয়ে করতেন। আদপে দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা লোক, নবাব ও ব্রিটিশ দুই পক্ষের সঙ্গেই সেটিং রাখতেন। শেষ অবধি সিরাজের বিরুদ্ধেই গিয়েছিলেন। কিন্তু পলাশীর বিশ্বাসঘাতকদের পরিণতি হয়েছিল ভয়ংকর, উমিচাঁদও সেই বিশ্বাসঘাতকতার মাশুল দিয়েছিলেন। ক্লাইভ জাল দলিলের মাধ্যমে উমিচাঁদকে ঠকিয়ে দেন। এক পয়সা না পেয়ে, শেষে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন উমিচাঁদ।

জগৎ শেঠ ছিলেন ধনকুবের। সুদে টাকা ধার দেওয়ার কারবার ছিল তার বা তাদের। সুবে বাংলার সবচেয়ে বড় ব্যাংকারের নাম জগৎ শেঠ। নবাব, বাদশা, এমনকি ইংরেজ কোম্পানিও তাদের কাছে হাত পাতত, ফলে তার ক্ষেত্রে কড়ি একেবারেই যথার্থ মেলবন্ধন। তবে জগৎ শেঠ কিন্তু কোনও এক ব্যক্তি নয়। আদপে এটি একটি উপাধি। অষ্টাদশ শতকে বাংলার রাজনীতির প্রধান নিয়ন্ত্রক ছিলেন শেঠরা। একাধারে তারা ছিলেন ব্যবসায়ী, তেজারতির কারবারি এবং কিং মেকার। এই শেঠরা ছিলেন বহু পালা বদলের নেপথ্য নায়ক।

হুজুরিমলও ছিলেন ব্যবসায়ী। ঘাট নির্মাণ, পুকুর খননের মাধ্যমে তিনি আমকলকাতাবাসীর মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। প্রভূত অর্থ রোজগার করেছিলেন।

ভাষ্য পাঠ: মধুরিমা রায়
সম্পাদনা: মোঃ রবিউল ইসলাম
তথ্য গবেষণা: সৌভিক রাজ

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Richman, #Kolkata, #Kane Kane Kolkata Connection, #Rhymes

আরো দেখুন