ফার্ন রোডে মুড়িয়ে ফেলা কাগজ থেকে জন্ম নিয়েছিল কোন হিট গান?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: শ্যামল গুপ্ত ও মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গীতিকার ও কবি শ্যামল গুপ্তর আরেকটি পরিচয় হল তিনি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের স্বামী। মায়ামৃগ ছবির কাজ চলছে। ছবির গান লেখার ভার পড়ল কবি ও গীতিকার শ্যামল গুপ্ত-র উপর। মায়ামৃগ ছবিতে নাম ভূমিকায় ছিলেন বিশ্বজিৎ ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় শ্যামল গুপ্তকে বললেন, ‘নায়ক বিশ্বজিৎ নায়িকা সন্ধ্যা রায়ের প্রেমে পড়েছে। কিন্তু নায়কের সব কিছুতেই ডাক্তারির প্রসঙ্গ চলে আসে। এমনকী প্রেম নিবেদনের সময়ও তাই! এসে পড়ে সেই ডাক্তারির কথা। এটাকে মাথায় রেখে একটা গান লেখ।’’
মানবেন্দ্র তখন ফার্ন রোডে গীতবীথিকা নামে একটি স্কুলে গান শেখান। গানের ক্লাস শেষ হওয়ার পরে বন্ধু শ্যামল গুপ্তের সঙ্গে সেখানে আড্ডাও গল্পগুজব গান বাজনা চলত।
তেমনই এক রবিবারের বিকেলে শ্যামল গুপ্ত হাজির হলেন ফার্ন রোডের সেই গানের স্কুলে। এই কালজয়ী গান তৈরি হওয়ার মঞ্চ প্রস্তুত। কেবল জন্ম দেওয়ার অপেক্ষা। গানটি ছিল ‘মেটেরিয়া মেডিকার কাব্য’। বন্ধুকে দেখালেন শ্যামল গুপ্ত, দেখেই মানবেন্দ্র বললেন, ‘‘ছ্যা, এ কী লিখেছিস! এ একেবারে চলবে না।” গান লেখা টুকরো কাগজটা হাতে নিয়ে মুচড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন জানালা দিয়ে। বন্ধু আর কী করেন! মুষড়ে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়লেন।
গানের ক্লাসে চলে গেলেন মানবেন্দ্র।
ঘণ্টা দুই পর ক্লাস শেষ হল। বেরিয়ে এসে মানবেন্দ্র দেখলেন বন্ধু বিষণ্ণ মুখে বসে আছে। বাংলার পাঁচের ন্যায় বন্ধুর মুখখানি দেখে মানবেন্দ্র বললেন, ‘নারে, গানটা তুই মন্দ লিখিসনি। দেখি এক বার!’
এবার রাগে অভিমানে আর স্থির থাকতে পারেননি শ্যামল গুপ্ত। বলেই বসলেন, ‘তুই তো ফেলে দিলি রাস্তায়। আমার কাছে কোনও কপিও নেই। ট্রামে আসতে আসতে হাতে যা ছিল, তার ওপরে লিখেছিলাম…।’
তখন সন্ধে গড়িয়ে গিয়েছে, দিনের আলোও নেই। টর্চ হাতে তোলপাড় খোঁজ চলল। শেষে দলা পাকানো টুকরো কাগজটার খোঁজ মিলল এক্কেবারে নর্দমার পাশ থেকে। পাওয়া গেল ‘মেটেরিয়া মেডিকার’, বলা ভাল উদ্ধার হল। তৈরি হল ইতিহাস! আজও এই গানের জনপ্রিয়তা গগনচুম্বী। শোনা যায়, ওই সময় যেখানেই কোনো অনুষ্ঠানে মানবেন্দ্র গাইতে যেতেন, মেটেরিয়া মেডিকা না শুনিয়ে শ্রোতারা তাঁকে ছাড়ত না।
তবে মানবেন্দ্র কথা উঠলেই বনে নয়, মনে মোর পাখি আজ গান গায় গানটির কথা মনে পড়ে। একবার স্টার থিয়েটারে এক সঙ্গীত সম্মেলনে রবিশঙ্করের সেতার শুনতে গিয়েছেন নচিকেতা ঘোষ। ভোর তিনটে, নচিকেতা কানে আঙুল দিয়ে দৌড়ে স্টার থিয়েটার থেকে বাড়ি চলে এলেন। যাতে কানে আর অন্য সুর না ঢোকে। এসেই হারমোনিয়াম নিয়ে বসে পড়লেন। ফোন করলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারকে, ডাকলেন। তিনি কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, ‘কী করে আসব! বাস চলাই তো শুরু হয়নি!’ নচিকেতা বললেন, ‘বাস চলা আরম্ভ হলেই চলে আয়। না হলে গানটা অন্য কাউকে দিয়ে দেব।’ তৈরি হল, ‘বনে নয়, মনে মোর পাখি আজ গান গায়।’ তারপর মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে বললেন, ‘আয়, একটা হিট গান গাইবি।’ এমন হুটহাট গান তৈরি করতেন নচিকেতা ঘোষ।