‘ব্রাত্য’ বা ‘রুদ্ধ’ নয় – দেবব্রত বিশ্বাসের রবীন্দ্রসঙ্গীত মানুষের হৃদয়ে
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন গান। তবুও আজও বাঙালী ভুলতে পারেননি তাঁদের প্রিয় দেবব্রত বিশ্বাস বা জর্জদাকে। তিনি রবীন্দ্রনাথকে বুঝতেন। ভালবাসতেন। আর তাই তাঁর মতো করে রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে চর্চা আর কেউ করে উঠতে পারেননি।
তাঁর লেখা বই ‘ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীত’-এ নিজের কথা মন খুলে লিখেছেন তিনি। সেখানেই দেবব্রত বলেছেন, ‘গায়ক হব, এ কথা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।’ তিনি ১৯৩৩ সালে অর্থনীতিশাস্ত্রে এম.এ করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি বিনা মাইনেতে হিন্দুস্থান ইনসিওরেন্স কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। তার ঠিক এক বছর পর তাঁর নাম সরকারি খাতায় ওঠে এবং তিনি মাত্র ৫০টাকায় কেরানি জীবন শুরু করেছিলেন।
কোথায় তখন গান? কোথায় কি? সেই সময় তিনি থাকতেন ভবানীপুর থানার উল্টোদিকের একটি মেস বাড়িতে। এই সময় তাঁর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে ভাইয়ের ছেলে সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তিনিও আগে ওই জীবনবীমা কোম্পানির কর্তাব্যক্তি ছিলেন। তিনি মাঝে মধ্যে আসতেন এই অফিসে। তাঁর জন্য আলাদা একটা ঘর রাখা ছিল। এখান থেকেই জর্জকে পছন্দ হয় তাঁর। এবং তিনিই জর্জকে নিয়ে যান ইন্দিরা দেবীচৌধুরানীর কাছে।
সেখানে তিনি দেবব্রত বিশ্বাসের গলা শুনে অবাক হয়ে যান। এবং তাঁকে গান শেখাতে শুরু করেন। ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে’-গানটি তিনি পাশ্চাত্য কায়দায় হারমোনাইজ করে তিনি গান শেখালেন তাঁকে। এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাইতে পাঠাতে লাগলেন। পার্কসার্কাসে ‘সঙ্গীত সম্মিলনী’ নামে মিসেস বি এল চৌধুরি প্রতিষ্ঠিত একটি সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। সেখানে নানা ধরণের গান শেখানো হত। জর্জ সেখানে যেতে শুরু করলেন।
তখন তিনি এটাও জানতেন না ‘স্বরবিতান’ নামের কোনো স্বরলিপি বই আছে। স্বরলিপি কী তা তিনি বুঝতেনও না। তার পর পয়সা জমিয়ে তিনি চারখন্ডের জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্বরলিপি-গীতমালা’ কেনেন। এইবার এই বই দেখে দেখেই তিনি গান শেখার চেষ্টা করতেন। সেই থেকেই তিনি রবি ঠাকুরের গানে নিজেকে বাঁধতে শুরু করেন। তবে তিনি সবটাই করতেন খালি গলায়। সুর তাঁর গলায় নিজে থেকেই ছিল।
এর পর তিনি শান্তিনিকতনে গিয়ে দেখাও করেছেন রবি ঠাকুরের সঙ্গে। রবি ঠাকুরকে দেখে তাঁর পায়ে মাথা নত হয়ে এসেছিল দেবব্রত বিশ্বাসের। তিনি লিখেছেন, “ঠাকুরকে ওইভাবে শান্তিনিকেতনে দেখে মনে হয়েছিল ইনিই স্রষ্টা। তাঁর পায়ে নিজেকে বিলিন করে দিতে পারলেই বোধহয় শান্তি। জীবনে অনেক গান রেকর্ড করেছেন তিনি। নজরুলের গানও গেয়েছেন দেবব্রত। তা নিজেই উল্ল্যেখ করেছেন তাঁর লেখা বইতে। তাই তাঁর জীবনে উথ্থান পতন ছিল চোখে পড়ার মতো।