করোনা আবহেও শ্যুটিং শুরুর নির্দেশ কেন্দ্রের
করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় ছ’মাস দেশের বিনোদন জগৎ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এবারে সেখানে একটু হলেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে। রবিবার কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর পুনরায় সিনেমা ও টিভির শ্যুটিং শুরু করার জন্য নিয়মাবলি ঘোষণা করলেন। যার ফলে বিক্ষিপ্তভাবে শুরু হলেও এবার দেশের সমস্ত ইন্ডাস্ট্রিতেই শ্যুটিং শুরু করতে আর কোনওরকম বাধা রইল না।
এই নতুন নিয়মাবলি একদিকে যেমন করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, ঠিক তেমনই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত অগণিত মানুষের কর্মসংস্থানেরও সুবিধা করে দেবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করেই এই একগুচ্ছ নিয়ম তৈরি করা হয়েছে বলে এদিন জানান জাভড়েকর। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ডকে মাথায় রেখে এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলেই আমরা এই নিয়মাবলি চূড়ান্ত করেছি। আমার মনে হয়, প্রত্যেকেই এটাকে স্বাগত জানাবেন এবং রাজ্য সরকারগুলোও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই নিয়ম লাগু করবে।’
তাহলে এরপর থেকে ইউনিটকে ফ্লোরে শ্যুটিংয়ের সময় ঠিক কী কী নিয়ম পালন করতে হবে? সবার আগে বলা হয়েছে, প্রত্যেকেকেই শ্যুটিংয়ের সময় মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকতে হবে। একমাত্র ক্যামেরার সামনে অভিনয় করার সময় ছাড় দেওয়া হয়েছে। বয়স্ক, গর্ভবতী বা অসুস্থ টেকনিশিয়ানদের বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করে শ্যুটিং করতে হবে। তাঁরা যেন কোনওভাবেই সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে না আসেন, সেদিকটিও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে এই গাইডলাইনে।
শ্যুটিং চলাকালীন বা ক্যামেরার পিছনেও একে অপরের থেকে কমপক্ষে ৬ ফুট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। লোকেশন ছাড়াও রেকর্ডিং স্টুডিও ও এডিটিং রুমের ক্ষেত্রেও প্রত্যেককে এই নিয়ম মানতে হবে। শুধু তাই নয়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই ক্যামেরা সেটআপ, বসার ও খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। যতটা সম্ভব কম সদস্য নিয়ে শ্যুটিং করতে হবে। ইন্ডোর শ্যুটিংয়ের ক্ষেত্রে ভিজিটর ও দর্শক প্রবেশ করতে পারবেন না। আউটডোরের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে ভিড় সামলাতে হবে। শ্যুটিংয়ের মাঝে বিশ্রাম কক্ষ বা রাতে থাকার স্থানটিও সামাজিক দূরত্ববিধির কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে হবে।
প্রোডাকশনের একাধিক সেটের ক্ষেত্রে জমায়েত এড়াতে আলাদা আলাদা কল টাইম ও প্যাক আপ টাইম লাগু করতে হবে। সমস্ত লোকেশনের জন্য নির্দিষ্ট প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার পথ তৈরি করতে হবে। প্রবেশ পথে থার্মাল স্ক্যানিং বাধ্যতামূলক এবং শুধুমাত্র উপসর্গহীন ব্যক্তিকেই ফ্লোরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এই নির্দেশিকায়।
শ্যুটিংয়ের সময় পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর দেওয়ার কথা বলেছে মন্ত্রক। বলা হয়েছে সেট, ক্যাফেটেরিয়া, মেকআপ রুম, এটিড রুম, ভ্যানিটি ভ্যান ও শৌচাগারের মতো কমন স্পেস নিয়মিত স্যানিটাইজ করতে হবে। শ্যুটিংয়ের আগে ও পরে সম্ভব হলে দু’বার এই স্যানিটাইজেশনের কাজ করতে হবে।
স্যানিটাইজের কাছে যুক্ত কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জুতো, গ্লাভস, মাস্ক ও পিপিই কিট ব্যবস্থা করাও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পোশাক, পরচুলা ও মেকআপের সরঞ্জাম যতটা সম্ভব ভাগ না করে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। মেকআপ শিল্পী ও হেয়ার স্টাইলিস্টদের ক্ষেত্রেও মাস্ক ও পিপিই কিট আবশ্যক করা হয়েছে। যাঁদের ক্ষেত্রে সম্ভব তাঁদের ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করতে বলা হয়েছে ওই নির্দেশিকায়। ফ্লোরে একই জিনিস অনেকে ব্যবহার করলে সেক্ষেত্রে তা গ্লাভস পরে করতে হবে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্র সরকারের এই নির্দেশিকাকে চলচ্চিত্র জগতের একাধিক বিশিষ্টরা স্বাগত জানিয়েছেন। ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট ফিরদৌসুল হাসান সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার পুনরায় শ্যুটিং শুরু করার জন্য যে নির্দেশিকা জারি করেছে, তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। এটা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত অগণিত মানুষকে স্বস্তি দেবে।’ শ্যুটিং শুরুর অনুমতি পাওয়ার পর এবার দেশের বিনোদন জগৎ খুব তাড়াতাড়ি সিনেমা হল খোলার আশায় বুক বাঁধছে।