ঋতুপর্ণর নায়িকারা
ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁর সারাজীবন ধরেই কাজ করে গেছেন মেয়েদের নিয়ে। তাঁর ছবি ছিল মেয়েদের নিয়ে গবেষণা ক্ষেত্র। ঋতুপর্ণ ফুটিয়ে তুলেছিলেন নারীত্বের বিভিন্ন দিক, বিভিন্ন পর্যায় এবং বিভিন্ন সম্পর্ক। তাই পরিচালকের বেশির ভাগ ছবিই ছিল নায়িকা প্রধান।
চলুন দেখে নেওয়া যাক ঋতুপর্ণর ছবির নায়িকাদেরঃ
দেবশ্রী রায়
নিজের বিভিন্ন ইন্টারভিউতে পরিচালক বলেছিলেন তাঁর সবচেয়ে পছন্দের নায়িকা ‘চুমকি’, অর্থাৎ দেবশ্রী রায়। তাঁর জীবনের শুরুর দিকের সফল ছবি উনিশে এপ্রিলের নায়িকা ছিলেন দেবশ্রী। এই পরিচালক- নায়িকা জুটি হয়ে ওঠে দর্শকদের অত্যন্ত প্রিয়। একাধিক ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল ছবিটি। অসুখ সিনেমাতেও আবার একসাথে কাজ করতে দেখা যায় এই জুটিকে।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
আরেক ‘চুমকি’ অর্থাৎ ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত-ও পরিচালকের অন্যতম পছন্দ ছিলেন। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি ঋতুপর্ণের সিনেমা দহন এবং পরবর্তীতে আরো একটি ছবি উৎসবে নায়িকা ছিলেন ঋতুপর্ণা। এই ছবিগুলির ঝুলিতেও আছে একাধিক জাতীয় পুরস্কার।
রাইমা সেন
সুচিত্রা সেনের এই উত্তরসূরিকে দেখা গেছে পরিচালকের একাধিক ছবিতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি, চোখের বালি, নৌকাডুবি তাদের মধ্যে অন্যতম। চোখের বালি সিনেমাটিও পেয়েছে জাতীয় পুরস্কার।
কঙ্কনা সেন শর্মা
প্রথাগত চরিত্রের বাইরে যাকে বার বার দেখা গেছে সে ঋতুর ছবিতে থাকবে না, তা হয় বুঝি! তাই দোসর, তিতলি, সানগ্লাস সিনেমায় নায়িকার ভূমিকায় দেখা গেছে কঙ্কনাকে। কখনও তারকা-প্রেমে মজে থাকা কিশোরী, কখনও বা স্বামীর বিশ্বাসঘাতকতার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা এক স্ত্রী – সাবলীল অভিনয়ে নজর কেড়েছেন তিনি।
অনন্যা চট্টপাধ্যায়
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি আবহমানে ঋতুর নায়িকা ছিলেন অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। অপরিশীলিত একজন উঠতি নায়িকা থেকে সফিস্টিকেটেড একজন তারকায় ওনার যে বিবর্তন তা এক কথায় অসাধারণ। পাশাপাশি, নটি বিনোদিনীর চরিত্রে ওনার অভিনয়ও মনোগ্রাহী।
ঐশ্বর্য রাই
বিশ্বসুন্দরীকে নিয়ে পরিচালক কাজ করেছেন মোট দু’বার। একবার বাংলা ছবি চোখের বালি এবং অপরটি হিন্দি ছবি রেনকোট। দু’বারই মুগ্ধ হয়েছে দর্শক। ঋতুর পরিচালনা এবং নায়িকার রূপের যুগলবন্দীতে।
কিরণ খের
ঋতুপর্ণের ছবিও ছিল যেমন অন্যরকম, তাতে নায়িকার চিত্রায়নও ছিল বাকি ছবির থেকে একদম আলাদা। তাই তো বাড়িওয়ালি ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মুম্বাইয়ের মধ্যবয়স্কা এই অভিনেত্রী। দুটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল ছবিটি।
শর্মিলা ঠাকুর-রাখী গুলজার
আগাথা ক্রিস্টির উপন্যাস ‘দ্য মিরার ক্র্যাকড ফ্রম সাইড টু সাইড’ অবলম্বনে তৈরি শুভ মহরৎ ছবিতে শর্মিলা ঠাকুর এবং রাখী গুলজারের অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। আদ্যোপান্ত একটি ইংরেজি গল্পকে বাঙালিয়ানায় ভরিয়ে তুলেছিলেন পরিচালক।
বিপাশা বসু
সব চরিত্র কাল্পনিক ছবিটিতে মূল চরিত্রে, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে, দেখা গেছে এই বঙ্গ তনয়া এবং প্রাক্তন ভারত সুন্দরীকে। এইরকম সেরিব্রাল চরিত্রে বিপাশার প্রথম অভিনয়েই দর্শক মুগ্ধ হয়েছেন।
সোহা আলি খান
তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে তৈরি ছবি অন্তরমহলে নায়িকা ছিলেন এই নবাব নন্দিনী। ঊনবিংশ শতাব্দীতে সমাজে মহিলাদের যে যন্ত্রনা ভোগ করতে হত, তা অনায়াসে ফুটিয়ে তুলেছেন সোহা।
মিমি চক্রবর্তী
সিনেমা না হলেও একটি বহুল জনপ্রিয় ধারাবাহিক পরিচালনা করেছিলেন ঋতুপর্ণ। গানের ওপারে পেয়েছিল দর্শকদের ভালবাসাও। আর তাতেই নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন মিমি চক্রবর্তী। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি মিমিকে।
অন্য যারা
সকলের কথা হয়তো লেখা গেল না এই প্রতিবেদনে, কিন্তু যাদের নাম না করলেই নয়। দহনে ইন্দ্রানী হালদার, দ্য লাস্ট লিয়ারে প্রীতি জিন্টা, বাড়িওয়ালিতে সুদীপ্তা চক্রবর্তী মন কেড়েছেন সকলের। বিভিন্ন ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে মমতা শঙ্করও ঋতুপর্ণ ঘোষের নায়িকাই বটে।